কেন্দ্রীয় সরকারের বস্ত্র মন্ত্রকের পুরস্কার হাতে তৃপ্তি মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
তিনি আগে পেয়েছিলেন জাতীয় ও বঙ্গশ্রী পুরস্কার। এ বার কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক থেকে হস্তশিল্পে ‘শিল্পগুরু’ সম্মান পেলেন সিউড়ির তৃপ্তি মুখোপাধ্যায়।
১৪ সেপ্টেম্বর ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি দেশের প্রথিতযশা হস্তশিল্পীদের ‘শিল্প গুরু’ এবং জাতীয় পুরস্কার প্রদান করেন। ৮ জনকে ‘শিল্প গুরু’ এবং ২৫ জনকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। এ রাজ্যের একমাত্র পুরস্কার প্রাপক তৃপ্তিদেবী। সূচি শিল্প ‘নকশি কাঁথার’ জন্য ‘শিল্প গুরু’ সম্মান পাওয়ায় খুশি তৃপ্তিদেবী ও তাঁর পরিবার।
দেশের একটি নামী মোটরবাইক প্রস্তুতকারক সংস্থার ‘ফ্রাঞ্চাইজি’ রয়েছে তৃপ্তিদেবীর। জেলা সদরে যথেষ্ট সফল তাঁর ব্যবসা। রয়েছে লজও। তবুও ছোটবেলায় মা মায়া বন্দ্যোপাধ্যায় কাছ থেকে শেখা নক্সি কাঁথা ভালবাসার জায়গা। তাতেই জাতীয়স্তরে সেরার সম্মান পেলেন।
পুরস্কার নিয়ে সিউড়িতে ফিরে বুধবার জীবনের সেই লড়াইয়ের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন আদতে পাড়ুই এলাকার কুড়মিঠা গ্রামের বাসিন্দা তৃপ্তিদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘খুব ছোট বেলায় মায়ের কাছে শেখা সূচি শিল্পকেই পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা ভেবেছিলাম নয়ের দশকে। নিজের কাজের পাশাপাশি গ্রামের সাধারণ মহিলাদের সেই কাজ শিখিয়ে ব্যবসা শুরু করেন মুম্বইয়ে। এখনও তা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রায় ২০০ জন কাজ করেন সেখানে।’’
তিনি জানান, বিয়ের পরে ১৯৯৪ সাল থেকে ব্যবসা জমেছিল ভালই। কাঁথা স্টিচের নানা সামগ্রী নজর কেড়েছিল অনেকেরই। ধীরে ধীরে ব্যবসার পাশাপাশি ব্লক, জেলা, রাজ্যের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শুরু। শুরু সাফল্য পাওয়াও। তৃপ্তিদেবী জানান, জেলা ও রাজ্য স্তরে সফল হয়ে ১৯৯৯ সালে জাতীয় পুরস্কার হাতছাড়া হয়। তার পরে টানা ৯ বছর তিনি ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। সেরার তকমা পান ২০০৯-১০ সালে। ২০১২ সালে জাতীয় পুরস্কার পান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে। গত বছর পেয়েছিলেন রাজ্য সরকারের বঙ্গশ্রী।
সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে ভারতের গ্রাম্য জীবন থেকে কারগিল যুদ্ধ, গ্রাম্য মেয়ের স্বপ্ন, পৌরাণিক কাহিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন নকশি কাঁথায়। জাতীয় পুরস্কার ও শিল্প গুরু সম্মান এসেছে গ্রামীণ জীবন তুলে ধরেই।
বীরভূমে এর আগে শোলা শিল্পের জন্য ওই সম্মান পেয়েছিলেন শিল্পী অনন্ত মালাকার।
গাড়ির ব্যবসাও জেদের বশে। তৃপ্তিদেবী জানান, একটি মোটরবাইক কিনে ঠকে গিয়ে নিজেই শুরু করেন গাড়ির ব্যবসা। পরিবার ও প্রয়াত স্বামী শঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের উৎসাহ ছিল। সব দিক এ ভাবে সামলে দেশের সেরা শিল্পীর সম্মান পাওয়া মায়ের জন্য গর্বিত ছেলে শুভঙ্করও। তিনি বলছেন, ‘‘মায়ের পক্ষেই এটা করা সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy