Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খৈনির কৌটো নিয়ে ফিরল বিনয়

উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার পরে মনমরা হয়ে বসেছিল যুবকটি। মুখ খোলাতে পারছিলেন না পুলিশ কর্মীরা। দুপুরে মাংস ভাত খেয়ে মেজাজ কিঞ্চিত ভাল হয়। তখন থেকেই যেন কী একটা খুঁজে বেড়াচ্ছিল।

ফের: বাবার সঙ্গে ঝালদা থানা থেকে বাড়ির পথে। নিজস্ব চিত্র

ফের: বাবার সঙ্গে ঝালদা থানা থেকে বাড়ির পথে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝালদা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০১:৫৫
Share: Save:

উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার পরে মনমরা হয়ে বসেছিল যুবকটি। মুখ খোলাতে পারছিলেন না পুলিশ কর্মীরা। দুপুরে মাংস ভাত খেয়ে মেজাজ কিঞ্চিত ভাল হয়। তখন থেকেই যেন কী একটা খুঁজে বেড়াচ্ছিল। ইতিউতি চাউনি দেখে ব্যাপারটা আঁচ করেন আর এক পুলিশ কর্মী। পকেট থেকে খৈনির ডিব্বা বের করে দিতেই এক মুখ হাসি। খৈনি খেয়ে কৌতূহলী পুলিশ কর্মীদের দিকে ছুড়ে দিলেন দু’টি শব্দ— ‘অম্বা’ আর ‘দুমকা’। ওই দু’টি শব্দই ঝালদা থেকে ঝাড়খণ্ডের জারমুণ্ডি এলাকার বাড়িতে ফেরাল মানসিক ভারসাম্যহীন বিনয়কে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার রাতে ঝালদার কলমা পঞ্চায়েত এলাকার পাটুক গ্রামের কাছে এক যুবককে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখে এলাকার লোকজন পুলিশকে জানান। পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা ওই গ্রাম এক সময়ে মাওবাদী-অধ্যুষিত ছিল। টহলদারি ভ্যান ওই যুবককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। আনার পরে পুলিশ কর্মীরা এক প্রকার বুঝতে পারেন, ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন।

শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত সে চুপচাপই ছিল। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘কখনও চুপচাপ থাকছে, কখনও হাসছে। আধা হিন্দিতে কিছু অসংলগ্ন কথা বলছিল।’’

ওই দু’টি শব্দ শুনে পুলিশের হাতে চাঁদ পাওয়ার জোগাড় হয়। ইন্টারনেটে সার্চ করে দুমকার সমস্ত থানার নাম বের করা হয়। একটা একটা করে নাম বলা হয় ওই যুবককে। ‘জারমুণ্ডি’ শুনে আরও এক দফা হাসি ফোটে যুবকটির মুখে। জারমুণ্ডি থানার ফোন নম্বরও মিলে যায় ইন্টারনেটে। যোগাযোগ করে হোয়াটসঅ্যাপে যুবকটির ছবি পাঠানো হয়। জানা যায়, তার নাম বিনয় মিশ্র। জারমুণ্ডিতেই বাড়ি।

খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিনয়ের বাবা গণেশ মিশ্র ঝালদায় আসেন। পেশায় তিনি পুরোহিত। এলাকায় নামডাকও রয়েছে। তিনিই পুলিশকে জানান, বিনয় মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাঁরা তাঁকে রাঁচিতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁদের চোখ এড়িয়ে বিনয় কোনও ভাবে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। অনেক খুঁজেও না পেয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান।

মঙ্গলবার বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাবার আগে এক পুলিশ কর্মী খৈনির ডিব্বার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। তাতে আঁধার নেমে এসেছিল বিনয়ের হাসি মুখে। থানায় কাজ করা এক ব্যক্তি তখন নিজের ট্যাঁক থেকে খৈনির কৌট বের করে তুলে দিয়েছেন বিনয়ের হাতে। সেই উপহার নিয়ে বাবার হাত ধরে বাড়ির পথ ধরেছে ঝালদার ক’দিনের অতিথি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mentally Disabled Man Return
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE