Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Nil Nirjane

নৌকাবিহার থেকে ডিজে, নীলনির্জনে বিপন্ন পাখিরা

শীতের শুরু থেকে পরিয়ায়ী পাখিরা বীরভূমের যে জলাশয়গুলিতে তাদের আস্তানা তৈরি করে, সেই তালিকার উপরেই রয়েছে নীল নির্জন জলাধার।

আছে পরিযায়ী। চলছে নৌকাও। বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধার নীলনির্জনে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

আছে পরিযায়ী। চলছে নৌকাও। বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধার নীলনির্জনে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা  
বক্রেশ্বর শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

সাঁতার কাটা, নৌকা চালানো কিংবা মাছ ধরা নিষিদ্ধ এই জলাধারে। বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের তরফে জলাধারের উপরে আগেই সতর্কীকরণ বোর্ড লাগানো হয়েছে। কিন্তু, মানে কে? ফলে, স্বস্তি নেই ফি-বছর শীতের সময় ‘নীলনির্জন’ জলাধারে আসা হাজার হাজার পাখিদের। ওয়াচ পার্টি গড়ে নজর রাখার কথা বলেছিল বন দফতর। কিন্তু বাস্তবে কোনওটাই কার্যকর না হওয়ায় শীতের অতিথি পরিযায়ী পাখিদের বিশেষ সুবিধা যে হয়নি, সেটা ওই জলাধারে গেলেই মালুম হয়।

শীতের শুরু থেকে পরিয়ায়ী পাখিরা বীরভূমের যে জলাশয়গুলিতে তাদের আস্তানা তৈরি করে, সেই তালিকার উপরেই রয়েছে নীল নির্জন জলাধার। ওই জলাশয়ে বহু রকম দেশি-বিদেশি পাখি তো আছেই, অসংখ্য প্রজাতির পাখি রয়েছে জলাশয় ঘিরে থাকা প্রায় সাড়ে তিনশো একর বনভূমিতেও। এ ছাড়াও, বন বিড়াল, খরগোশ, গোসাপ, বনমুরগি, ভাম বা সিভেট ক্যাট, বাঘরোল, ময়াল-সহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ।

এ বারও দলে দলে পাখি হাজির নীল নির্জনে। কিন্তু তাদের স্বস্তি নেই। শুধুই কী পরিযায়ী, দেখা মেলে বাংলার নানা জলজ পাখির। শীতকাল জুড়ে পিকনিক পার্টির ভিড় এবং ডিজে-র দাপটে শব্দদূষণ, জলাধারের ধার ঘেঁষে থার্মোকল থালাবাটি প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি আছেই। এরই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা না-মেনে নৌকা নিয়ে জলাশয় চষে পাখিদের বিরক্ত করা চলছেই। বিশেষ করে শখের পাখির ছবি তুলিয়েদের দাপট বেড়েই চলেছে। বাধা দেওয়ার লোক নেই। পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে গোটা জলাশয় জুড়ে পাতা মাছ ধরার ফাঁস জাল আর মোটা টাকার জন্য ওঁত পেতে থাকা পাখি শিকারদের দাপটে পাখি আসা কমছিল।

যাতে শীতের অতিথি নিরীহ পাখিগুলোকে মেরে ফেলা বা অনিষ্ট করা না হয়, তার জন্যই প্রচার চালিয়েছে বন দফতর। গত কয়েক বছরের মতো চলতি জানুয়ারির ২১ তারিখ নীল নির্জন’ ঘেঁষা লোকালয়ে শিবির করে শুধু পাখি নয়, আশপাশের বনভূমিতে থাকা বন্যপ্রাণ বাঁচানো এবং সব মিলিয়ে একটি ইকো-টুরিজম কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাবও সামনে এনেছে বন দফতর। বিলি হয়েছিল সচেতনতা বিষয়ক লিফলেট। তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সতর্কীকরণ বোর্ড দেওয়ায় মনে হয়েছিল সমস্যা মিটবে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। পরিবেশকর্মী বিষ্ণুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বারবার পাখি মারা হলে বা তাদের বিরক্ত করা হলে এখানে আসায় তাদেরও অনীহা তৈরি হবে এটা ভাবা উচিত। আর পাখির সমারোহ না থাকলে পর্যটকদের আসার আগ্রহও কমে যাবে।’’ পাখি শিকার হচ্ছে, এমন খবর সামনে না এলেও পাখিদের উত্ত্যক্ত করা যে চলছে, সেটা জলাধারে গেলেই দেখা যায়। জলাশয়ে নৌকা নামার বিষয়ে কোনও বক্তব্য মেলেনি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের তরফে।

অথচ ২১ তারিখের শিবিরে এডিএফও বিজেন কুমার নাথ জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক ভাবে ওয়ার্চ পার্টি গড়ে তোলা হবে। যাদের কাজ হবে পিকনিক পার্টি বা ছবি শিকারিদের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখা। বনভূমি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন তিনটি বনসুরক্ষা কমিটির শ’পাঁচেক সদস্য। ইকো-টুরিজ়ম গড়া গেলে আয় বাড়বে বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদেরই। কিন্তু, সেই প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে বা ওয়াচ পার্টি গড়া হচ্ছে, এমন খবর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nil Nirjane DJ Migratory Bird
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE