Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
তারাপীঠে নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন

গ্রেফতার জেঠা, হতবাক মহল্লা

বছর দশেকের ফুটফুটে মেয়েটিকে ধর্ষণ-খুনের পরে তোলপাড় চলেছিল তারাপীঠে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত শুরু হয়েছিল সিআইডি তদন্তও। পুলিশ কুকুর নামিয়ে চলেছিল ছান্‌ভিন। তারপরেও কেন কিনারা করা গেল না—সে প্রশ্নে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ।

সিউড়ি বিশেষ আদালতে অভিযুক্তেরা।— নিজস্ব চিত্র

সিউড়ি বিশেষ আদালতে অভিযুক্তেরা।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তারাপীঠ শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৭
Share: Save:

বছর দশেকের ফুটফুটে মেয়েটিকে ধর্ষণ-খুনের পরে তোলপাড় চলেছিল তারাপীঠে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত শুরু হয়েছিল সিআইডি তদন্তও। পুলিশ কুকুর নামিয়ে চলেছিল ছান্‌ভিন। তারপরেও কেন কিনারা করা গেল না—সে প্রশ্নে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। সম্প্রতি এলাকারই বাসিন্দা আলম শেখকে রাজস্থান থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাকে জেরা করে বুধবার আরও তিন জনকে ধরেছেন তদন্তকারীরা। সেই তালিকায় রয়েছে মৃত নাবালিকারই তিন আত্মীয়—সমীর মাল, নিমাই মাল এবং বাচ্চু মাল। এর মধ্যে সমীর আবার নাবালিকার নিজের জেঠা! সিআইডি তদন্তে গিয়ে এই জেঠার বাড়ির দাওয়া থেকেই রক্তের দাগ পেয়েছিল। পরে তা পাঠানো হয় ফরেন্সিক টেস্টের জন্যেও।

সরকারি কৌঁসুলি রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালতে পুলিশ দাবি করেছে গোটাটাই সমীরের মস্তিষ্ক-প্রসূত। ঘটনার রাতে সেই ঘুমন্ত ভাইঝিকে তুলে নিয়ে যায়। পরিকল্পনা মতো গণধর্ষণ করে নিমাই, বাচ্চু এবং আলম। তারপরে খুন করা হয়। ৩৪ হাজার টাকায় রফা হয়।’’ বৃহস্পতিবার সিউড়ির বিশেষ আদালতে ধৃতদের হাজির করানো হলে সমীর, নিমাই এবং বাচ্চুর সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। আগে ধৃত আলমের সঙ্গে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর তিন জনকেই আদালতে হাজির করানো হবে। কেন এমন মতলব? তদন্তকারী কর্তারা জানাচ্ছেন, নিজের ভাইয়ের সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই গোলমাল চলছিল সমীরের। সেই প্রতিহিংসা থেকেই খুনের মতলব।

নাবালিকা খুনে শেষমেষ কিনা নিজের জেঠাই গ্রেফতার হল! এ খবর যেন বিশ্বাস-ই করতে পারছেন না তারাপীঠের রামভদ্রপুর গ্রামের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় গিয়ে পৌঁছনো ইস্তক সে নিয়েই নানা চর্চা-জল্পনা। পড়শিদের অনেকেই বললেন, ‘‘দুই ভাইয়ের মধ্যে তেমন বনিবনা ছিল না ঠিকই। তাই বলে ওমন ফুটফুটে মেয়ের সঙ্গে এ রকম কাণ্ড!’’ বিস্ময় যেন কাটতে চাইছে না তাঁদের।

সিআইডি-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২ জুন রাতে মেয়েটি যখন নিখোঁজ হয়, তখন আর পাঁচ জনের মতোই টর্চ-লাঠি নিয়ে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন সমীর। স্থানীয়েরা যোগ করছেন, শুধু সমীর নয়, ধৃত অন্য দুই দুঃসম্পর্কের আত্মীয় নিমাই ও বাচ্চুও সেই রাতে বেরিয়েছিলেন। অনেক খোঁজাখুজির পরে বাড়ির কাছেই মাঠের ধারের পরিত্যক্ত কুঁড়ে ঘরে মেয়েটির দেখা মেলে। শরীরের নানা জায়গায় রক্তের ছোপ। পুলিশের অনুমান ছিল, ধর্ষণের পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। সিআইডি-র দাবি, এটা এখন আর ধর্ষণের নয়, গণধর্ষণের মামলা। কৌঁসুলি রণজিৎবাবু জানিয়েছেন, এ দিনই গণধর্ষণের ধারা যোগ করতে চেয়ে আদালতে আবেদন করে সিআইডি। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন।

এমন নৃশংস অপরাধ যারা করতে পারে তাদের চরম শাস্তি হওয়া উচিত, সাফ জানাচ্ছে মহল্লা। স্থানীয় বাসিন্দা নিখিলরঞ্জন দাস, অজিত লেটদের কথায়, ‘‘সবার আগে ঠিক মতো তদন্ত করা হোক। তাতে যদি দোষী প্রমাণিত হয়, তা হলে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।’’ সমীরের মা তথা মৃত নাবালিকার ঠাকুমা মনে করছেন, ‘‘বড় ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। আর সেটা করেছে আলম। ওই মিথ্যে বলে ছেলেকে ধরিয়ে দিয়েছে।’’ নাবালিকা মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার রাতে এই ঠাকুমার পাশেই ঘুমিয়েছিল। রাত দেড়টা নাগাদ ঘুম ভেঙে ঠাকুমা দেখেন, পাশে কেউ নেই। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। চোখ বুজলেই সেই রাতের ছবি ভাসে বৃদ্ধার চোখে। তিনিও চান অপরাধীরা ধরা পড়ুক। যদি বড় ছেলেই সে কাজ করে থাকে? গলা ধরে আসে বৃদ্ধার। কিছুটা থেমে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘নাতনিকে বিছানায় দেখতে না পেয়ে প্রথমে ছোট ছেলেকে (কিশোরীর বাবা) ডাকি। পরে বড় ছেলের সিঁড়ির দরজায় ধাক্কা মারি। দু’জনেই তো ঘুম থেকে উঠে এসেছিল। তা হলে?”

গোটা ঘটনা মেলাতে পারছেন না নাবালিকার বাবাও। এ দিন তিনি গিয়েছিলেন সিউড়ির বিশেষ আদালতে। সেখান থেকেই ফোনে বলেন, ‘‘সত্যিই বুঝতে পারছি না কোথা থেকে কী হয়ে গেল!’’ এ দিন সকালে গ্রামে গিয়ে বাচ্চু মালের বাড়ির কাউকে পাওয়া যায়নি। নিমাই মালের স্ত্রী সুস্মিতা মালের অবশ্য দাবি, ‘‘স্বামী নির্দোষ। সে এমন কাজ করতে পারে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rap Minor Murder police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE