Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শাগরেদকে পাকড়ে রাজুকে কব্জা করল বাঁকুড়া পুলিশ

আবাসনের চার তলার একটি ঘর থেকে রাজু ও তার আরেক সাগরেদ পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা উৎপল দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতেই ধৃতদের বাঁকুড়ায় নিয়ে আসা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেজিয়া শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০০:৩০
Share: Save:

খুনের মামলায় জামিনে থাকা অবস্থায় ফের খুনের অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। বাঁকুড়ার মেজিয়া এলাকায় সেই কুখ্যাত দুষ্কৃতী রাজু দুবেকে বুধবার মাঝরাতে কলকাতার সল্টলেকের করুণাময়ী এলাকার একটি আবাসন থেকে গ্রেফতার করে আনল বাঁকুড়ার পুলিশ। তার দুই সাগরেদকেও সেখান থেকে ধরা হয়। এ বার তার বিরুদ্ধে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা এলাকায় এক দুষ্কৃতীকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। ধৃতদের বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে তিন জনেরই সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “পাপ্পু সিংহ খুন ও বড়জোড়ার একটি চালকলে হামলার ঘটনায় রাজু ও তার সাগরেদদের গ্রেফতার করা হয়েছে।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ মার্চ কাঁকসা থানা এলাকার একটি জঙ্গল থেকে রাজুর এক সময়কার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মেজিয়ার বাসিন্দা পাপ্পু সিংহের (৪০) দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার আগের দিন রাতে পাপ্পুকে তার বাড়ি থেকে রাজুর লোকজন তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ঘটনাটি নিয়ে মেজিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পাপ্পুর স্ত্রী সোনালি। পাপ্পুকে অপহরণ করে খুনের পাশাপাশি বড়জোড়ার একটি চালকলের কর্মীদের উপরে হামলা চালানোর ঘটনাতেও রাজুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। ওই দু’টি ঘটনায় রাজুর খোঁজ চালাচ্ছিল বাঁকুড়া পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, রাজু সল্টলেকেই আত্মগোপন করে রয়েছে বলে গোপন সূত্রে খবর আসে জেলা পুলিশের কাছে। তারপরেই মঙ্গলবার সল্টলেকে রওনা দেয় বাঁকুড়া পুলিশের একটি দল। যদিও সেখানে রাজুর হদিস না পেয়ে ফিরে আসেন পুলিশ আধিকারিকেরা। তবে তাঁরা হাল ছাড়েননি। সুনির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে বুধবার ফের মেজিয়া থানার ওসি মানস চট্টোপাধ্যায় ও বাঁকুড়া পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের আধিকারিক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাঁকুড়া পুলিশের একটি দল সল্টলেকে যায়। রাতে করুণাময়ীর একটি পেট্রল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় রাজুর সাগরেদ তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার বাসিন্দা সৌরভ বসুকে কেনাকাটা করতে দেখেন পুলিশ কর্মীরা। সৌরভকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করায় সে পুলিশকে জানায়, করুণাময়ী এলাকারই একটি আবাসনে রাজু রয়েছে। পুলিশ সৌরভের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই আবাসনে অভিযান চালায়। আবাসনের চার তলার একটি ঘর থেকে রাজু ও তার আরেক সাগরেদ পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা উৎপল দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতেই ধৃতদের বাঁকুড়ায় নিয়ে আসা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাপ্পু সিংহ-সহ মোট তিনটি খুনের মামলা-সহ বহু তোলাবাজি ও ঝামেলার ঘটনায় অভিযুক্ত রাজু দুবে। বেশ কয়েক বছর আগে বড়জোড়ার মালিয়াড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী অরবিন্দ বাজপেয়ীকে প্রকাশ্য রাস্তায় গাড়ির ভিতরে গুলি করে খুন করার অভিযোগ ওঠে রাজুর বিরুদ্ধে। এরপরে ২০১৫ সালে মেজিয়ার দিঘল গ্রামের বাসিন্দা অরবিন্দ কেসকে খুনের অভিযোগ ওঠে রাজুর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার বেশ কয়েক মাস পরে মেজিয়া থানার প্রাক্তন ওসি অতনু কাঞ্জিলাল বানজোড়ার একটি জঙ্গলে রাজুর গোপন ডেরায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন। সম্প্রতি জামিন পায় রাজু। কিন্তু অপরাধকে ছাড়তে পারেনি।

পাপ্পুকে কেন খুন করল রাজু? প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, এক সময়কার ঘনিষ্ঠ পাপ্পুর সঙ্গে সম্প্রতি দূরত্ব তৈরি হয়েছিল রাজুর। আলাদা ভাবে গোষ্ঠীও বানিয়ে ফেলেছিলেন পাপ্পু। সেই আক্রোশেই তাকে পরিকল্পনা করে রাজু খুন করেছে বলেই অভিমত পুলিশের। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “খুনের কারণ নিয়ে রাজুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest গ্রেফতার
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE