প্রহৃত: মারের চোটে ফুলে গিয়েছে হাত। দেখাচ্ছেন বর্ষীয়ান নেতা সমীর মাইতি। নিজস্ব চিত্র
আগের দিন ইট ছোড়াছুড়ি হয়েছিল নিজেদের মধ্যে। মঙ্গলবার সেই ছবিটা বদলে গেল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে বিষ্ণুপুরের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এ বার বিরোধীদের মনোনয়ন আটকাতে সরাসরি ময়দানে নেমে পড়লেন। পুলিশের ঘেরা টোপে থাকা মহকুমাশাসকের অফিসের মধ্যেই সিপিএমের বিষ্ণুপুর মধ্য এরিয়া কমিটির এক বয়স্ক নেতাকে মেরে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। তবে পাড়ার তৃণমূল কাউন্সিলরই তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন।
সমীর মাইতি নামের ষাটোর্দ্ধ ওই নেতার বাঁ হাতের কনুইয়ের উপর ও নীচে হাড় ভেঙেছে। তাঁকে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা কমিটির সদস্য স্বপন ঘোষের অভিযোগ, ‘‘১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। তার মধ্যেই মহকুমাশাসকের অফিসে এ দিন মনোনয়নপত্র তোলা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজে সমীরবাবু গিয়েছিলেন। সেই অফিসের ভিতরেই তৃণমূলের গুন্ডারা তাঁকে বাঁশ দিয়ে মেরে হাত ভেঙে দিল। আমরা আতঙ্কিত। গ্রামাঞ্চল থেকে দলের নেতা-কর্মীরা এখন বিষ্ণুপুরে পা ফেলতে ভয় পাচ্ছেন।’’
তৃণমূলের বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিরোধীদের কোথাও বাধা দেওয়া হচ্ছে না। গল্প ফাঁদছে ওরা।’’
মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘অফিসে মারধর হয়নি। মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে নিজের রক্ষী পাঠিয়েছিলাম। পুলিশকেও খবর দিই।’’
মনোনয়ন নিবিঘ্নে সারতে মহকুমাশাসকের অফিসের সামনের রাস্তায় দু’দিকে বাঁশ দিয়ে পুলিশ ব্যারিকেড করে দিয়েছে। এ দিন সকালে পুরভবন থেকে তৃণমূলের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে মিছিল এসে পৌঁছয় রবীন্দ্র স্ট্যাচুর কাছে। সেখান থেকে জমায়েত হয় বাঁশের ব্যারিকেডের সামনে। মোটা বাঁশে দলীয় পতাকা মুড়ে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন তৃণমূলের কর্মীরা। জমায়েত থেকে স্লোগান ওঠে— ‘‘সিপিএম ও বিজেপি-র কাউকে মনোনয়ন করতে দেব না।’’ দিনভর এটাই চলতে থাকে।
একই ছবি দেখা যায় বিষ্ণুপুর ব্লক অফিসের সামনেও। সেখানে ব্যারিকেড নেই। ব্লক অফিসের দরজার সামনে শাসকদলের লোকেরা জমায়েত করলেও, পুলিশ তাদের সরায়নি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তাঁদের প্রশ্ন, ১৪৪ ধারা যেখানে, সেখানে জমায়েত থাকে কী করে? ওদের জমায়েতের জন্য যেখানে মাছি ঢুকতে পারে না, সেখানে বিরোধীরা কোন ভরসায় মনোনয়ন দিতে যাবে?
এরই মধ্যে বিষ্ণুপুরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড গোপালগঞ্জের বাসিন্দা সমীরবাবু এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ মহকুমাশাসকের অফিসে ঢুকে পড়েন। তিনি জানান, মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথা বলে তিনি দলের জন্য তিন তলায় মনোনয়নপত্র তুলতে যান।
তাঁর কথায়, ‘‘মনোনয়নপত্র তোলার পরেই ওই হলঘরেই দু’টি লোক জিজ্ঞাসা করে কী করতে সেখানে গিয়েছি? তারপরেই হাত থেকে মনোনয়নপত্র ওরা ছিনিয়ে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে দোতলার মহকুমাশাসককে গিয়ে ঘটনাটি জানাই। মহকুমাশাসক তাঁর নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে বাইরে আমাকে বাইরে নিরাপদে নিয়ে যেতে বলেন।’’
মহকুমাশাসকের অফিসের বাইরে বেরিয়ে ট্রেজারি অফিসের সামনে দিয়ে যখন তিনি যাচ্ছিলেন, তখনই তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর চলে বলে অভিযোগ। সমীরবাবুর অভিযোগ, ‘‘এসডিও-র রক্ষী তো ছিলই, পুলিশের সামনেই তৃণমূলের কয়েকজন আমাকে ঘিরে ধরে বাঁশ দিয়ে মারধর করতে শুরু করে। প্রাণ বাঁচতে আমি ট্রেজারি ভবনের ভিতরে ঢুকে পড়ি। সেখানে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর উদয় ভকত মারমুখী লোকগুলোর হাত থেকে আমাকে বাঁচান। উদয়বাবু আমার স্কুটার পিছনে বসেন। জেলখানার সামনে আবার তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাকে বাঁশ দিয়ে মারে। উদয়ও মার খান। কোনওরকমে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচি।’’
উদয়বাবু অবশ্য পরে দাবি করেন, ‘‘বিজেপি-র লোকেরা পাড়ার বয়স্ক মানুষটিকে ট্রেজারি অফিসের সামনে মারছে দেখে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। আমি তাঁকে রক্ষা করে বাড়ি পৌঁছে দিই।’’ তিনি অবশ্য জেলখানার সামনে হামলার অভিযোগ মানতে চাননি।
মহকুমাশাসক জানান, এ দিন পর্যন্ত বিষ্ণুপুরে কেউ মনোনয়ন তোলেননি, জমাও দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy