Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মায়ের পাশ থেকে শিশু উধাও, পরে দেহ মিলল নদীতে!

সঞ্জীববাবু বলেন, “প্রথমে বাড়ির চারপাশে মেয়ের খোঁজ করি। কিন্তু কোথাও ওকে দেখতে না পেয়ে থানায় যাই। সেখানেই জানতে পারি নদী থেকে একটি শিশুর দেহ মিলেছে। তাকে সিমলাপাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি সেই মৃত মেয়েটি আমার প্রিয়া।’’

প্রিয়া চট্টোপাধ্যায়।

প্রিয়া চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিমলাপাল শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০১:০৮
Share: Save:

রাতে ঘুমিয়ে ছিল মায়ের পাশেই। সকালে নদীতে মৎস্যজীবীদের জালে উঠল সেই এক রত্তি মেয়ের দেহ! এক বছরের এক শিশু কন্যার শনিবার এ ভাবে মৃত্যু হওয়ায় রহস্য দানা বেঁধেছে সিমলাপালে। মৃত শিশুর নাম প্রিয়া চট্টোপাধ্যায়। স্থানীয় থানাগড়া এলাকায় তার বাড়ি। কী ভাবে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁর পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

ওই শিশুর মা তাপসী চট্টোপাধ্যায় জানান, শুক্রবার রাতে বড় মেয়ে দিয়া ও ছোট মেয়ে প্রিয়াকে নিয়ে তিনি ঘরে শুয়েছিলেন। তাঁর স্বামী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ঘুমোচ্ছিলেন অন্য ঘরে। এ দিন ভোর ৫টা নাগাদ তিনি বিছানা থেকে ওঠেন। ঘরদোর সাফসুতরো করে তিনি বাড়ির কাছে শিলাবতী নদীর থানাগড়া ঘাটে নোংরা ফেলতে গিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, “দুই মেয়ে ঘরে ঘুমোচ্ছিল। আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে নদীর ঘাটে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি দরজার একটা পাল্লা খোলা। ভিতরে ঢুকে দেখি বড় মেয়ে ঘুমোচ্ছে, ছোট মেয়ে নেই!” তিনি জানান, এরপরেই স্বামীকে ঘুম থেকে তুলে সব কথা জানান।

সঞ্জীববাবু বলেন, “প্রথমে বাড়ির চারপাশে মেয়ের খোঁজ করি। কিন্তু কোথাও ওকে দেখতে না পেয়ে থানায় যাই। সেখানেই জানতে পারি নদী থেকে একটি শিশুর দেহ মিলেছে। তাকে সিমলাপাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি সেই মৃত মেয়েটি আমার প্রিয়া।’’

পুলিশ জানিয়েছে, থানাগড়া ঘাট থেকে কয়েকশো মিটার দূরে সিমলাপালের ব্রিজগোড়া এলাকায় এ দিন সকাল প্রায় সাড়ে ৬টা নাগাদ মৎস্যজীবীরা শিলাবতী নদীতে জাল ফেলেছিলেন। সেই জালেই ওঠে শিশুর দেহ। ঘটনাটি দেখে স্বম্ভিত হয়ে যান মৎস্যজীবীরা। তাঁরা জাল থেকে শিশুর দেহ তুলে নদীর পাড়ে নিয়ে যান। সেখান থেকে পাঠানো হয় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। খবর যায় থানায়।

পুরো ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সঞ্জীব ও তাপসীর ম ধ্যে বিবাদ লেগেই থাকত। শুক্রবার রাতেও ওই দম্পতির মধ্যে ঝগড়া হয়। অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলছেন তাপসীর নদীতে নোংরা ফেলতে যাওয়াকে কেন্দ্র করেও। তাঁদের দাবি, অন্যান্য দিন বাড়ি পরিষ্কার করে বেলার দিকে কাছেই একটি জায়গায় নোংরা ফেলেন তাপসী। এ দিন তিনি কেন ভোরে নদীতে গেলেন নোংরা ফেলতে? এই সব প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি।

সঞ্জীব বলেন, “মা অসুস্থ ছিল। তাই রাতে মায়ের ঘরে শুয়েছিলাম। দুই মেয়ে ছিল স্ত্রীর কাছে। কে মেয়েকে ঘর থেকে তুলে নদীতে নিয়ে গেল বুঝতে পারছি না। আমি চাই পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করুক।” তাপসী বলেন, “কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না।” তিনিও ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবি তুলেছেন।

এসডিপিও (খাতড়া) বিবেক বর্মা বলেন, “মৃত শিশুর পরিবারের তরফে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের করা না হলে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেখে পুলিশই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করবে। আপাতত প্রাথমিক তদন্তের কাজ চলছে।” বাঁকুড়ার মর্গে দেহের ময়না-তদন্ত করানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Missing Riverbed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE