Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দূষণ কি কমবে, রায় ঘিরে জল্পনা

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে এ বার অবশ্য পুলিশ-প্রশাসন থেকে আমজনতা কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। এত দিন বাজি বিক্রিতে নিষেধ ছিল বলে পুলিশ অভিযান চানিয়েছে।

পুরুলিয়ায় দুর্গাপুজোর এই ছবি কি এ বার বদলাবে? ফাইল চিত্র

পুরুলিয়ায় দুর্গাপুজোর এই ছবি কি এ বার বদলাবে? ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০৯
Share: Save:

বাজি পোড়ানো নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায়। কেউ বাজি পোড়ানোর সময় বেঁধে দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন, কেউবা আবার রায়কে স্বাগত জানালেন। আদালতের নির্দেশ, রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শুধু বাজি পোড়ানো যাবে। তার আগে বা পরে বাজি ফাটানো হলে, গ্রামাঞ্চলে কে দেখবে? কোন বাজি কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে, সেটাই বা মাপবে কে?— সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে এসেছে বিভিন্ন মহলে। দুই জেলার পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কম দূষণ ছড়ায় এমনই বাজির পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছে। তাও রাত আটটা থেকে ১০টার মধ্যে। তা যাতে বজায় থাকে, বিষয়টি অবশ্যই দেখা হবে।” পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, ‘‘বাজি ফাটানো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় না দেখে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”

ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা পুরুলিয়ায় ধুমধাম করেই পালিত হয় দীপাবলি। কালীপুজোতেও বাজি পোড়ে দুই জেলাতেই। বিশেষত, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, খাতড়া, পুরুলিয়া শহর, আদ্রা থেকে কয়লাখনি অঞ্চল নিতুড়িয়া— সর্বত্রই প্রচুর বাজি পোড়ানো হয়। আতসবাজিও পোড়ানোও কম হয় না। তবে, গত কয়েক বছর ধরেই এই উৎসবে জেলায় শব্দবাজি ফাটানো অনেকটাই নিয়ন্ত্রেণে আনতে পেরেছে পুলিশ। শব্দবাজি বিক্রি বন্ধে অভিযান চালিয়ে, নিষিদ্ধ বাজি আটক করা থেকে বাসিন্দাদের সচেতন করার কাজ করে পুলিশ এই সাফল্য পায়।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে এ বার অবশ্য পুলিশ-প্রশাসন থেকে আমজনতা কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। এত দিন বাজি বিক্রিতে নিষেধ ছিল বলে পুলিশ অভিযান চানিয়েছে। কিন্তু, এ বার আদালতের রায়ের পরে অভিযানে কি আদৌ যাওয়া যাবে? বিক্রেতারা দাবি করবেন, কম দূষণ ঘটনায় এমন বাজিই তাঁরা বিক্রি করছেন। কিন্তু, সেই বাজি পোড়ার জেরে কতটা দূষণ হচ্ছে, তা মাপার পরিকাঠামো জেলার পুলিশের নেই। পুরুলিয়া শহরের বাজি ব্যবসায়ী গৌতম চেল বলেন, ‘‘আমরা বাইরে থেকে বাজি কিনে এনে শহরে বিক্রি করি। আমাদের পক্ষে কখনই বোঝা সম্ভব নয়, কোন বাজি থেকে কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে।” ফলে বাজি বিক্রিতে যে রাশ টানা গিয়েছিল, তা আলগা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে শহরাঞ্চলে পুলিশ নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে যাতে বাজি না ফাটে, তাতে কিছুটা নজর রাখতে পারলেও, বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে কে নজর রাখবে?

নিতুড়িয়ার বাসিন্দা বুলা পান্ডের মতে, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা হলে দেদার বাজি পোড়ানো হলে মুশকিল। যাতে সবাই সঠিক রায় জানতে পারেন, তাই পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে লাগাতার প্রচারের প্রয়োজন।’’ পারবেলিয়ার বাসিন্দা নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব আবার বাজি পোড়ানোর সময় বেঁধে দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই গভীর রাতে কালীপুজো সেরে বাজি পোড়ানো শুরু করেন। ফলে সময় বেঁধে দিলে বাজি পোড়ানোর সুযোগটাই পাবেন না অনেকে।”

আবার বাঁকুড়ার নাট্য ব্যক্তিত্ব মধুসূদন দরিপা বলেন, ‘‘শব্দবাজির বন্ধের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আতসবাজিতে শব্দদূষণ না হলেও বায়ু দূষণ হয়। সুপ্রিম কোর্ট বাজি পোড়ানোর সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে ভাল করেছে। এ বার পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারি দরকার।’’ গৃহঋণ সংস্থার কর্মী শুভজিৎ ঘোষের মতে, ‘‘দীপাবলিতে বাড়ির ছোটরা আতসবাজি পোড়ায়। তবে ওই বাজির ধোঁয়া খুবই অস্বাস্থ্যকর। সুপ্রিমকোর্ট কম দূষণ ছড়ায় এমন বাজিই বাজারে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়ায় স্বস্তি পেয়েছি।’’

বাজির শব্দে রোগী, বয়স্ক ও শিশুদের কষ্টের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালের ভারপ্রাপ্ত সুপার গৌতমনারায়ণ সরকার বলেন, ‘‘মাত্রাতিরিক্ত শব্দ বিশিষ্ট বাজিগুলি অনেকের ক্ষেত্রেই খুবই সমস্যাদায়ক। বিশেষ করে হাসপাতাল চত্বর বা সংলগ্ন এলাকায় তা একেবারেই ফাটানো উচিত নয়। এতে রোগীরা খুবই সমস্যায় পড়েন। সাধারণ মানুষের এ নিয়ে সচেতনতা দরকার।’’ বাঁকুড়ার সঙ্গীত শিল্পী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এ বার সাউন্ডবক্সের দাপাদাপি রুখতেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নানা পুজো ও অনুষ্ঠানে পাড়ায় পাড়ায় রাতভর তীব্র স্বরে মাইক বাজানো হয়। এতে সবারই কমবেশি কষ্ট হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE