Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

১০০ দিনের প্রকল্পে তৈরি মডেল নার্সারি

তিনি জানান, আপাতত বৃক্ষজাতীয় গাছের চারা তৈরি হবে ওই নার্সারিতে। বছরে কমপক্ষে এক লক্ষ চারা তৈরি হবে। পরে শুধু মাত্র ফলের চারা তৈরির জন্যই ব্যবহৃত হবে নার্সারিটি। স্বনির্ভর দলের ২০ জন মহিলা সদস্যকে সিউড়ি ২ ব্লকের সেকমপুরে, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীন আঞ্চলিক গবেষণা উপকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁদের সারা বছর কাজ একটা নিশ্চিত আয়ের ব্যবস্থা করা যায়।

উদ্যোগ:  কৃষি খামারে চারাগাছের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাটি। দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

উদ্যোগ: কৃষি খামারে চারাগাছের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাটি। দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৩
Share: Save:

প্রথাগত পদ্ধতি থেকে সরে এসে বছর তিনেক আগে থেকেই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নার্সারি পালন শুরু করেছিল জেলা বন দফতর। এ বার সেই একই পদ্ধতিতে গাছের চারা তৈরির ছবি চোখে পড়ছে দুবরাজপুর কিসান মান্ডি এবং সহ কৃষি অধিকর্তার কার্যালয়ের পিছনে কৃষি খামারে। তবে কৃষি দফতর নয়, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ‘পার্মানেন্ট মডেল নার্সারি’ গড়ে তা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ২০ জন মহিলা সদস্যের হাতে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের সঙ্গে সরকারি অন্য দফতরের মিলিত উদ্যোগে বেশ কিছু ‘উদ্ভাবনী’ কাজ হয়েছে জেলায়। প্রশাসনের দাবি, সেই তালিকায় রয়েছে দুবরাজপুরের এই উন্নত মানের নার্সারিটিও।

এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার প্রদীপ্ত বিশ্বাস বলছেন, ‘‘মডেল নার্সারি তৈরির জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা ও সেটিকে চালানোর জন্য মোট ৪৫ লক্ষ বরাদ্দ হয়েছে। তার মধ্যে জরুরি তহবিল হিসাবে ২০ লক্ষ টাকা রাখা হয়েছে। এখানে আমরা বন দফতরের মডেলকে এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পে ব্যবহার করছি।’’ তিনি জানান, আপাতত বৃক্ষজাতীয় গাছের চারা তৈরি হবে ওই নার্সারিতে। বছরে কমপক্ষে এক লক্ষ চারা তৈরি হবে। পরে শুধু মাত্র ফলের চারা তৈরির জন্যই ব্যবহৃত হবে নার্সারিটি। স্বনির্ভর দলের ২০ জন মহিলা সদস্যকে সিউড়ি ২ ব্লকের সেকমপুরে, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীন আঞ্চলিক গবেষণা উপকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁদের সারা বছর কাজ একটা নিশ্চিত আয়ের ব্যবস্থা করা যায়।

ঠিক কী ধরনের পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে? দুবরাজপুর কৃষি খামারের পিছনে গিয়ে দেখা গেল, সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা নার্সারি। পুকুর খনন করা হয়েছে। তার চারপাশে লাগানো বিভিন্ন ফলের গাছ। একটু তফাতে বিশাল এলাকা জুড়ে সারি সারি সাজানো লোহার টেবিল। তার পরেই ছোট ছোট প্লাস্টিক পাত্র বা ‘রুট ট্রেনার’-এ বসানোর ব্যবস্থা আকাশমুনি, প্রিয়া শাল, অর্জুন, বহেড়া, নিম, চিকরাশী, শিরিষ ইত্যাদি চারাগাছের। তৈরি হয়েছে অপেক্ষাকৃত ছোট গাছগুলি ‘হার্ডেনিং শেড’ বা ছাউনি। বীজ থেকে সবে অঙ্কুরোদ্গম হচ্ছে, এমন চারা রাখার জন্য ‘জার্মিনেশন শেডে’র ব্যবস্থা। চারাগাছগুলিতে জল দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। সব ধরনের বীজ মেলেনি। সবে শুরু হওয়া নার্সারিতে এখন একমাত্র দেবদারু ছাড়া অন্য চারা নেই। তবে ভবিষ্যতে বনসৃজনের জন্য চারা তৈরির জন্য ‘রুট ট্রেনার’-এ মাটির ভরার কাজ করেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।

১০০দিনের কাজ প্রকল্পের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, বন দফতরের আধুনিক নার্সারি তৈরির প্রযুক্তি মেনেই মাটিতে নয়, চারা বসানোর জন্য লোহার ফ্রেম ও রুট ট্রেনার নামক পটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ গাছের শিকড় ছিঁড়ে গিয়ে বা অনুন্নত পদ্ধতিতে গাছ লাগানো হলে, সেই গাছ বেঁচে থাকার সমস্যা দেখা দেয়। এখানে যে যত্নে চারা তৈরি হচ্ছে বা হবে, তাতে বৃক্ষরোপণ হলে ওই গাছের চারা বেঁচে থাকা এবং তার দ্রুত বৃদ্ধি এক প্রকার নিশ্চিত। নোডাল অফিসার প্রদীপ্তবাবুর কথায়, ‘‘এমনিতে মাটিতে গাছের চারা তৈরি হলে বর্ষা বা বেশ বৃষ্টি ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়। এখানে সেটা ঘটবে না। লোহার ফ্রেমের মধ্যে আলাদা করে চারা বসানো থাকলে বহনেরও সুবিধা থাকছে।’’

ব্লক সূত্রে খবর, ভবিষ্যতে পুকুরে মাছ চাষ ও ডাকারি করারও ভবনা রয়েছে। পুকুরের চারদিকে লেবু, পেয়ারা, মুসাম্বি-সহ নানা ফলের গাছের উন্নত জাতের চারা লাগানো হয়েছে। সেখান থেকেই ভবিষ্যতে কলম করে ফলের গাছের চারা তৈরির । বর্তমানে ওই নার্সারিতে কাজ করছেন দুবরাজপুর মাজুরিয়া গ্রামের তিনটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। তাঁদের মধ্যে সিধো কানহু দলের পদ্মাবতী রানা, জ্যোৎস্না রানা, সবুদি হেমব্রম, নাইস দলের রিনা বিবি, হামিদা বিবি, মা মনসা দলের লক্ষ্মী রানা, মাকুলি মাড্ডিরা বলছেন, ‘‘এই কাজ পেয়ে আমরা খুশি। কয়েক মাসের মধ্যে গোটা এলাকা সবুজ হয়ে যাবে। এখন সবে গাছের চারা লাগানোর জন্য পটে মাটি ভরার কাজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

District Forest Department Nursery 100 Days Work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE