Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উষ্ণ প্রস্রবণ ঘিরে পর্যটন চায় মল্লারপুর

এলাকাবাসীর অভিযোগ, তার পরেই থমকে যায় সব উদ্যোগ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন ওই সব শৌচাগার, স্থানাগার ভেঙেচুরে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। ওই এলাকায় এখন অসামাজিক কাজকর্ম চলে বলে নালিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রশাসনের নজর নেই বলে অভিযোগ।

বেহাল: সংস্কারের অভাবে এমনই পরিস্থিতিতে রয়েছে মল্লারপুরের উষ্ণ প্রস্রবণ। নিজস্ব চিত্র

বেহাল: সংস্কারের অভাবে এমনই পরিস্থিতিতে রয়েছে মল্লারপুরের উষ্ণ প্রস্রবণ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মল্লারপুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০১:১৯
Share: Save:

সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। কিন্তু অভিযোগ, প্রশাসনের গড়িমসিতে মার খাচ্ছে মল্লারপুরের উষ্ণ প্রস্রবণ ঘিরে পর্যটন। তা কার্যত অবহেলায় পড়ে রয়েছে। ওই প্রস্রবণকে ঘিরে এলাকায় পর্যটনক্ষেত্র গড়ে উঠতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।

প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মল্লারপুর লাগোয়া মেটেলডাঙা গ্রামে যাওয়ার রাস্তার পাশে কয়েক বছর আগে ওই উষ্ণ প্রস্রবণের খোঁজ মেলে। ২০০৯ সালে ‘সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’ ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলের অনুসন্ধানের কাজ চালায়। অনুসন্ধান শেষ হলেও মেটেলডাঙা গ্রামের কাছে পোঁতা একটি পাইপ সরানো হয়নি। পরে গ্রামবাসীরা ওই পাইপ থেকে অবিরাম ধারায় গরম জল উপচে পড়তে দেখেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই দলে দলে মানুষ ভিড় করেন সেখানে। আসেন দূরদূরান্তের লোকেরাও। শীতে সেখানে চড়ুইভাতি করতে ভিড় জমে।

২০১১ সালে ওই জায়গা বাঁধিয়ে মহিলা-পুরুষদের আলাদা আলাদা স্নানের জায়গার ব্যবস্থা করে মল্লারপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘নইসুভা’। মহিলা-পুরুষদের জন্য আলাদা শৌচাগার ও স্নানাগার গড়ে দেয় মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েত। বসানো হয় সৌরবাতিও।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, তার পরেই থমকে যায় সব উদ্যোগ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন ওই সব শৌচাগার, স্থানাগার ভেঙেচুরে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। ওই এলাকায় এখন অসামাজিক কাজকর্ম চলে বলে নালিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রশাসনের নজর নেই বলে অভিযোগ।

এলাকাবাসীর একাংশের বক্তব্য, প্রশাসন একটু উদ্যোগী হলেই বক্রেশ্বরের মতো সেখানেও একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। একাধিক উষ্ণ জলের কুণ্ড, উষ্ণ প্রস্রবণ আর বক্রেশ্বর শিবকে ঘিরেই বক্রেশ্বরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। মল্লারপুরের ওই আদিবাসী গ্রাম লাগোয়া এলাকা ঘিরেও একাধিক পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। স্থানীয় খরাসিনপুরে হদিস মিলেছে একই রকম আরও একটি উষ্ণ জলের ধারার। খোঁজ চালালে সেখানেও বক্রেশ্বরের মতোই আরও গরম জলের কুণ্ড বা প্রস্রবণের খোঁজ মিলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।

এলাকার লোকেরা জানান, মল্লারপুরেও রয়েছে মল্লেশ্বর শিব। পাশাপাশি সেখানে রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাও। এক দিকে হাওড়া-রামপুরহাট রেলপথ, অন্য দিকে পানাগড়-মোরগ্রাম জাতীয় সড়ক। রয়েছে আরও সংযোগরক্ষাকারী সড়ক। তাই সহজেই পর্যটকেরা মল্লারপুর থেকে তারাপীঠ, সাঁইথিয়া, বীরচন্দ্রপুর, ডাবুক, নলহাটি, গণপুর জঙ্গল এমনকী লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মলুটি গ্রামও ঘুরে আসতে পারেন।

স্বেচ্ছাসেবী ওই সংস্থার তরফে সাধন সিংহ, কালিদাস টুডু, গণেশ মুর্মূ, সুমন শর্মার বক্তব্য, পর্যটনকেন্দ্র তৈরি হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক চিত্র পুরোপুরি বদলে যেত।

ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোজন ডিপার্টমেন্ট’ মেটেলডাঙা ও খরাসিনপুরে গরম জলের নমুনা পরীক্ষা করে জানিয়েছিল বক্রেশ্বরের তুলনায় তাতে হিলিয়ামের পরিমাণ বেশি রয়েছে। তাদের এখানেও বক্রেশ্বরের মতো গবেষণাগার করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সাড়া মেলেনি। জেলা প্রশাসনের কাছে মল্লারপুরে পর্যটনকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী জানান, পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে কথা বলে কী ভাবে সেখানে পর্যটনকেন্দ্রের পরিকাঠামো তৈরি করা যায় তা দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Reforms Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE