Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গ্রাহকদের সই জাল করে টাকা লোপাট

সই জাল করে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল সাঁইথিয়া থানা এলাকার এক শাখা পোস্টঅফিসের ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তকে না পেয়ে টাকা ফেরতের দাবিতে সংশ্লিষ্ট পোস্টঅফিসের প্রধান কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রাহকেরা। ঘটনাটি ঘটেছে সাঁইথিয়ার বড়সিজা পোস্টঅফিসে।

পোস্ট অফিসের সামনে জমায়েত। সাঁইথিয়ায়। ছবি: কল্যাণ আচার্য

পোস্ট অফিসের সামনে জমায়েত। সাঁইথিয়ায়। ছবি: কল্যাণ আচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২৪
Share: Save:

সই জাল করে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল সাঁইথিয়া থানা এলাকার এক শাখা পোস্টঅফিসের ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তকে না পেয়ে টাকা ফেরতের দাবিতে সংশ্লিষ্ট পোস্টঅফিসের প্রধান কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রাহকেরা। ঘটনাটি ঘটেছে সাঁইথিয়ার বড়সিজা পোস্টঅফিসে।

ডাক বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে ওই পোস্টঅফিসে স্থায়ী পোস্টমাস্টার নেই। ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার হিসেবে কাজ চালান সেখানকার
পিওন মহম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি অস্থায়ী পিয়নের দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর ছেলে মহম্মদ হাসানুরজাম্মানকে। কিন্তু বাবার অসুস্থতার জেরে ছেলেই দু’টি দায়িত্ব পালন করতেন। অভিযোগ, সেই সুযোগে তিনি কয়েক জন গ্রাহকের স্বাক্ষর নকল করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন।

সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে শেখ হাসিন নামে এক গ্রাহকের মেয়ের বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে। চলতি মাসেই তাঁর মেয়ের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। ওই পোস্টঅফিসেই সে জন্য লক্ষাধিক টাকা জমা করেছিলেন শেখ হাসিন। বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে পোস্টঅফিসে টাকা তুলতে যান তিনি। অভিযোগ, সপ্তাহখানেক ধরে তাঁকে বিভিন্ন টালবাহানায় ঘোরান হাসানুরজাম্মান। পরে হঠাৎ বেপাত্তা হয়ে যান। তাঁর বাবাও দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে দেন। তখনই সন্দেহ হয় গ্রামবাসীদের। কয়েক জন সাঁইথিয়া প্রধান ডাকঘরে গিয়ে পাসবই ‘আপ -টু-ডেট’ করে দেখেন বেশির ভাগ অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা নেই।

ওই পোস্টঅফিসের অন্য এক গ্রাহক মহম্মদ কামরুল হাসানের বক্তব্য, ‘‘আমার অ্যাকাউন্টে প্রায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা জমা ছিল। সাঁইথিয়া হেড পোস্টঅফিসে গিয়ে জানতে পারি তাতে ১ টাকাও নেই।’’ একই অভিযোগ আবুল কালামেরও। তিনি বলেন, ‘‘আমার অ্যাকাউন্টে প্রায় ১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা জমা ছিল। পড়ে রয়েছে মাত্র ১৮ হাজার টাকা।’’ তাঁদের অভিযোগ, স্বাক্ষর নকল করে ওই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিন বলেন, ‘‘এখন কী করে মেয়ের বিয়ে দেব ভেবে পাচ্ছি না।’’

শুধু ওই তিন জন নয়, গ্রামবাসীদের অভিযোগ— স্থানীয় মাদ্রাসা, মসজিদের অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি কয়েকশো গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা ওই ভাবে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।হাসানুরজাম্মানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর বাবা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘যা বলার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’

টাকা ফেরতের দাবিতে সোমবার শতাধিক গ্রাহক সাঁইথিয়া প্রধান ডাকঘরে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান। পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ডাকঘরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন গ্রাহকেরা। তাঁদের বক্তব্য, নিয়ম অনুযায়ী এক জন শাখা পোস্টমাস্টার সর্বাধিক একটি পাসবই থেকে নির্ধারিত ফর্মের মাধ্যমে দিনে সর্বাধিক ৫ হাজার টাকা মঞ্জুর করতে পারেন। তার বেশি টাকা তুলতে হলে প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টারের অনুমতি প্রয়োজন। প্রতিটি ক্ষেত্রে টাকা তোলার ওই ফর্মের স্বাক্ষরের সঙ্গে ডাকঘরে সংগৃহিত সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নমুনা স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখা আবশ্যক। প্রতারিত গ্রাহকেরা জানিয়েছেন, হেড পোস্টঅফিস কর্তৃপক্ষ এর দায় অস্বীকার করতে পারেন না। না হলে দিনের পর দিন এ ভাবে সই জাল করে টাকা তুলে নেওয়া সম্ভব হত না।

সাঁইথিয়া প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার বলেছেন, ‘‘টাকা তোলার ক্ষেত্রে আমাদের তরফে যা যা নিয়ম পালন করা উচিত তা করা হয়েছে। কী ভাবে ওই ঘটনা ঘটল তা তদন্ত সাপেক্ষ। বিষয়টি সাঁইথিয়া বিভাগের পোস্টাল ইনস্পেক্টরকে জানানো হয়েছে।’’

পোস্টাল ইনস্পেক্টর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Post Office Money Forgery Duplicate Signature
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE