সরকারি আবাস যোজনায় নিয়ম মেনে বাড়ি করছেন। কিন্তু, পঞ্চায়েত কর্মীদের খুশি করে হাতে নাকি টাকা ধরিয়ে দেননি। তাই মেলেনি দ্বিতীয় কিস্তির টাকা। তাতে চার মাস হল থমকে রয়েছে বাড়ি তৈরির কাজ। খয়রাশোলের লোকপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বসবাসকারী ১৯ জন উপভোক্তা এই মর্মেই বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত দুই কর্মী অভিযোগ মানতে চাননি। বিডিও (খয়রাশোল) প্রশান্ত রাজ শুক্লা বলছেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’’
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমে চলতি বছরে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি প্রাপকের সংখ্যা ৭০ হাজার। বঞ্চিত নয় খয়রাশোলও। ব্লকের লোকপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সরকারি প্রকল্পে বাড়ি প্রাপকের সংখ্যা ৬০০-র বেশি। লোকপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১০ নম্বর ভাড্ডি সংসদে ৪০ জন উপভোক্তা রয়েছেন। তাঁদের একটা বড় অংশই অন্যায় ভাবে টাকা চাওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
সরকারি প্রকল্পে বাড়ি প্রাপকদের অন্যতম গামা বাউড়ি, মণি বাউড়ি, দুলাল বাউড়ি, রাজ বাউড়ি, লাটু বাউড়িরা বলছেন, ‘‘ব্লক থেকে জেনেছিলাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাচ্ছি আমরা। মাস পাঁচেক আগে প্রথম কিস্তির ৪৫ হাজার টাকা করে পেয়েছি প্রত্যেকেই। সেই টাকা খরচ করে বাড়ির ড্যাম প্রুফ পর্যন্ত করিয়েছি। টাকা ঠিক ভাবে খরচ হয়েছে পঞ্চায়েতে জানালে তা দেখতে সরেজমিনে তদন্ত হয়। ছবি তোলা হয় (জিও ট্যাগিং)। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি।’’
কেন? প্রাপকদের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েতের তরফে যে সব কর্মী এ কাজ করেন তাঁদের মধ্যে প্রদ্যুৎ নায়ক এবং উত্তম বাদ্যকররা জানিয়ে দেয় ৫০০০ টাকা দিলে কাজ হবে। একই বক্তব্য শাসকদলের লোকেদেরও। বহু বার স্থানীয় তৃণমূল সদস্য, তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানকে জনিয়েও কাজ হয়নি।’’ উপভোক্তারা জানাচ্ছেন, এলাকায় যে সব বাড়ি প্রাপক ওই কর্মীদের শর্ত মেনে নিয়েছেন তাঁরা দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেয়ে বাড়ি অনেকটা তুলে ফেলেছেন। তাঁরা টাকা না দেওয়ায় কাজ আটকে আছে। এক উপভোক্তার কথায়, ‘‘আমাদের মধ্যে অনেকেই মাটির বাড়ি ভেঙে সেই জায়গায় বাড়ি শুরু করেছিলাম। বর্ষার পরে শীত আসছে। কী ভাবে থাকব? তাই সব বিডিও সাহেবকে জানিয়েছি।’’
পঞ্চায়েতের যে দুই কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই প্রদ্যুৎ নায়ক এবং উত্তম বাদ্যকররা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, ‘‘আমরা কেউ টাকা চাইনি। আমরা তো অস্থায়ী কর্মী মাত্র। গরিব মানুষ বাড়ি করতে পারবেন না, এমনটা কেন চাইব। তা হলে তো যে কোনও মুহূর্তে কাজ যাবে। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জিও ট্যাগিং এর নির্দেশ এলেই আমরা সে কাজ করব।’’ উপভোক্তাদের একাংশের মৌখিক অভিযোগ, দুই কর্মীকে সামনে রেখে গোটা কাজে মদত রয়েছে শাসকদলের। যদিও সে অভিযোগ মানেননি স্থানীয় সংসদের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য তনুজা ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। ওঁরা যে প্রথম কিস্তির টাকা খরচ করেছেন, সে খবরটাই দেননি।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের আর্থ-সামাজিক জাতিগত সমীক্ষার ভিত্তিতে ঠিক হয় গৃহহীন কোন উপভোক্তারা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাবেন। সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি অনুমোদিত হলে চার কিস্তিতে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার পেয়ে থাকেন। কিন্তু, নিয়ম হল এক কিস্তির টাকা ঠিক ভাবে খরচ হয়েছে জানিয়ে ব্লকে আবেদন করতে হয়। প্রান্তিক পরিবারগুলিই এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে থাকেন, এ ব্যাপারে সমন্বয় করেন এলাকার নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য। আবেদন পত্রে সই করার দায়িত্বও তাঁর।
লোকপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নবনির্বাচিত প্রধান টুকুরানি মণ্ডল বলছেন, ‘‘বাড়ির প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে বলে খবর পাইনি। পেলে নিশ্চয়ই জিও ট্যাগিংয়ের ব্যবস্থা হতো। টাকা চাওয়ার অভিযোগও মিথ্যে।’’ যদিও প্রধানের দাবি মানতে নারাজ অভিযোগকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy