Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বুক জল ভেঙে স্কুলে পৌঁছনো

স্কুল শুরু বা ছুটির সময়ে মুরারই ১ ব্লকের মহুরাপুরে পৌঁছলেই দেখা যাবে এই দৃশ্য। যেমনটা দেখা গেল বুধবার।

বুকজলে: ঝুঁকি নিয়ে এ ভাবেই বাঁশলৈ নদী পেরিয়ে স্কুলে যাতায়াত। বইখাতা থাকে গামলায়। নিজস্ব চিত্র

বুকজলে: ঝুঁকি নিয়ে এ ভাবেই বাঁশলৈ নদী পেরিয়ে স্কুলে যাতায়াত। বইখাতা থাকে গামলায়। নিজস্ব চিত্র

তন্ময় দত্ত
মুরারই শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০০:২৮
Share: Save:

নদীর ধারে একে একে জড়ো হল ওরা। স্কুলব্যাগগুলো বোঝাই করল কড়াইয়ে। সেই কড়াই নদীতে ভাসিয়ে জনা পনেরো ছাত্রছাত্রীও নামল নদীতে। বুক-জলে কখনও হেঁটে, কিছুটা সাঁতরে মিনিট কুড়ি পরে উঠল অন্য পাড়ে। তার পরে পোশাক পাল্টে স্কুলের পথ ধরল ওরা।

স্কুল শুরু বা ছুটির সময়ে মুরারই ১ ব্লকের মহুরাপুরে পৌঁছলেই দেখা যাবে এই দৃশ্য। যেমনটা দেখা গেল বুধবার। বর্ষার তিন মাস বাঁশলৈ নদী পার হয়ে এ ভাবেই অপর পাড়ের কাহীনগর হাইস্কুলে পৌঁছয় বীরভূমের মুরারই ১ ব্লকের মহুরাপুর পঞ্চায়েতের রামনগর, কামদেবনালা, সাবাইপুর ও বেশ কয়েক’টি গ্রামের পড়ুয়ারা। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাওয়ার এই ছবি দশকের পর দশকের। গ্রামের উজ্জ্বল সরকারের আক্ষেপ, ‘‘আমরা পনেরো বছর আগে এ ভাবেই নদী সাঁতরে স্কুলে যেতাম। এখন ভাইপো-ভাইঝিরা যাচ্ছে।’’

অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী বৃষ্টি মণ্ডল যেমন। বৃষ্টির কথায়, ‘‘আমি সাঁতার জানি না। একটা কলার ভেলায় বাবা নদী-পার করে দেয়। ব্যাগে স্কুলের বই-খাতার সঙ্গে আর একটা ড্রেস রাখতে হয়। কাহীনগরে এক জনের বাড়িতে পোশাক পাল্টাই। স্কুল ছুটি হওয়ার সময় বাবা ঘাটে অপেক্ষা করে। আবার একই ভাবে নদী পেরিয়ে বাড়ি ফিরি।’’ পড়ুয়ারা জানায়, জল বাড়লে গেলে নদী পেরিয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন বালিয়ারা গ্রামের ভেতর দিয়ে দশ কিলোমিটার ঘুরে সাইকেলে যেতে হয়। অনেক পডুয়ারা তা পক্ষেই সম্ভব হয় না। যার ফল অবধারিত স্কুল কামাই।

এলাকার পডু়য়ারা অন্য স্কুলে ভর্তি হবে এমন সুযোগও নেই। কেন? অভিভাবকদের কথায়, ‘‘কাছেই আছে তিয়োড়পাড়া হাইস্কুল। সেখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় পড়াশোনা তেমন হয় না। তা ছাড়া আগে স্কুলটি জুনিয়র হাই ছিল। এ বছরেই নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়া শুরু হয়েছে।’’ এ দিকে, টানা কয়েক মাস স্কুল কামাইয়ের ফলে এলাকার অনেকের রেজাল্ট ভাল হয় না। কাহীনগর হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষক গোলাম চিস্তি বলছেন, ‘‘বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৯০ জন ছাত্রছাত্রী আমাদের স্কুলে পড়ে। বর্ষায় সাঁতার আসে বলে আমাদেরও চিন্তার শেষ থাকে না। বৃষ্টি একটু বেশি হলে ছুটি দিয়ে দিতে হয়।’’ এখানেই শেষ হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু অভিভাবক যোগ করছেন, ‘‘নদীতে অবৈধ ভাবে বালি তোলা হয়। তাতে বিভিন্ন জায়গায় গর্ত হয়ে রয়েছে। ফলে প্রাণ নিয়ে যাতায়াত করাই দায়।’’ পড়ুয়ারা থেকে অভিভাবক, সকলেই এলাকায় স্থায়ী সেতুর দাবি তুলেছেন। তাঁদের আর্জি, আপাতত জরুরি ভিত্তিতে নৌকা বা বাঁশের সাঁকোর ব্যবস্থা করা হোক। সব শুনে বিডিও (মুরারই ১ ব্লক) নিশীথ ভাস্কর পাল বলেন, ‘‘সমস্যা এত গভীরে জানা ছিল না। পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে নৌকোর বিষয়টি এখনই দেখব। তিয়োড়পাড়া জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিও দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murarai School River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE