Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রথ রাখতে জমি দিলেন কালু মিঞা

উৎসবের তিথিতেই শুধু রাজপথে নামে রথ। বছরের অন্য সময় সেই রথ কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন রথের আয়োজকেরা। চিন্তা দূর করলেন গ্রামেরই কালু মিঞা। রথে গ্রাম পরিক্রমার পরে সাত দিন রথ ছিল কালু মিঞার দান করা এক শতক জায়গায়। উল্টোরথে গ্রাম ঘুরে রথ পৌঁছয় ফের সেখানেই।

সমাগম: রথ নিয়ে বেরিয়েছে মিছিল। রবিবার মাড়গ্রামের কয়েম্বা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

সমাগম: রথ নিয়ে বেরিয়েছে মিছিল। রবিবার মাড়গ্রামের কয়েম্বা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

উৎসবের তিথিতেই শুধু রাজপথে নামে রথ। বছরের অন্য সময় সেই রথ কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন রথের আয়োজকেরা। চিন্তা দূর করলেন গ্রামেরই কালু মিঞা। রথে গ্রাম পরিক্রমার পরে সাত দিন রথ ছিল কালু মিঞার দান করা এক শতক জায়গায়। উল্টোরথে গ্রাম ঘুরে রথ পৌঁছয় ফের সেখানেই। কালু মিঞার দেওয়া জায়গায় রথ রাখতে তৈরি হয়েছে ছিটেবেড়ার ঘর। খড়ের ছাউনি রয়েছে তাতে। কালু মিঞার প্রতিশ্রুতি— দরকারে সেই জায়গায় মন্দির গড়তেও তিনি সাহায্য করবেন।

রথ ঘিরে সম্প্রীতির এই নজির বীরভূমের মাড়গ্রাম থানার কয়েম্বা গ্রামে।

প্রত্যন্ত গ্রাম কয়েম্বা। হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়েরই বসবাস। প্রবীণ বাসিন্দা গয়ানাথ মাল জানান, একশো বছর আগে গ্রামের শেষপ্রান্তে বাইরে থাকা আসা এক সাধু গড়ে তোলেন বৈষ্ণব আশ্রম। সেই আশ্রম থেকে কাঠের রথ বের হত। আট বছর আগে এক বার অযত্নে রথ নষ্ট হয়। আশ্রম থেকে এখনও রথ বের হয়। কিন্তু সেই রথে জৌলুস নেই আগের মতো। কাপড় দিয়ে সাজানো রথ বের হয় রাস্তায়।

এ বছর গ্রামবাসীরা নতুন রথ তৈরি করেন। রথ তৈরি করতে গ্রামের দুই বাসিন্দা নিমকাঠ দিয়েছেন। নিমকাঠ দিয়েছেন হরিরামপুরের এক মুসলিম ব্যক্তিও। এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা রথের লোহার চাকা তৈরির জন্য চাঁদা দিয়েছেন বলে জানান অন্যতম আয়োজক কয়েম্বা গ্রামের বাচ্চু মাল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামেরই কাঠমিস্ত্রি সূবীর সূত্রধর, প্রণব ভাস্কর রথ তৈরির জন্য কোনও মজুরিও নেননি।

বাচ্চুবাবু জানান, গ্রামে কালীপুজো, সরস্বতী পুজো, লক্ষ্মী পুজো হয় মালপাড়ার মণ্ডপে। তার পাশেই কালু মিঞার এক শতক জায়গা রয়েছে। সেখানে রথ রাখতে তাঁর কাছে আর্জি জানানো হয়। স্বতঃফূর্ত ভাবে সেই জায়গা দান করতে চান তিনি। এমনকী মন্দির গড়ে তুলতে সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

গয়ানাথবাবু জানান, এ বছর মুসলিম অধ্যুষিত হরিরামপুরেও রথ ঘোরানো হয়।

কয়েম্বা গ্রামের বাসিন্দা ৬৫ বছরের চাষি কালু মিঞা বলেন, ‘‘জায়গাটা ফাঁকাই পড়ে ছিল। বিক্রি করে কত পয়সা পেতাম? তার চেয়ে একটা ভাল কাজে জায়গাটা দিতে পেরে খুব আনন্দ পেয়েছি। দরকারে এমন কাজে আরও সাহায্য করতে প্রস্তুত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘টাকা সঙ্গে নিয়ে আসিনি। টাকা সঙ্গে যাবেও না। যা থাকবে সেটাই মনে রাখবেন মানুষ। গ্রামের ভাল কাজে সব সময়েই পাশে থাকার চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ratha Yatra Ulta Rath Yatra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE