Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মেঝেয় পড়ে তিন জনের দেহ, পাশে বসে অঝোরে কাঁদছে শিশু!

রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল একই পরিবারের তিন জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থা বাকি তিন জনের। শনিবার পুরুলিয়া শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিবিরবাঁধ পাড়া এলাকার ঘটনা।

তদন্ত: বিবিরবাঁধ পাড়ায় পড়শিদের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

তদন্ত: বিবিরবাঁধ পাড়ায় পড়শিদের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৪
Share: Save:

রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল একই পরিবারের তিন জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থা বাকি তিন জনের। শনিবার পুরুলিয়া শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিবিরবাঁধ পাড়া এলাকার ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বিকাশ গোপ (২৫) ওই বাড়ির জামাই। বাকি রঞ্জিত গোপ (১০) ও রুম্পা গোপ (১২) গৃহকর্তার দুই সন্তান। অসুস্থ গৃহকর্তা রথু গোপ ও তাঁর স্ত্রী মঞ্জু গোপ এবং বড় মেয়ে টুম্পা গোপকে (বিকাশের স্ত্রী) প্রথমে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দুপুরে বোকারোর হাসপাতালে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়। দেহ তিনটির ময়না-তদন্ত এ দিনই হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাঁদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ওই বাড়ি থেকে সংগৃহীত শুক্রবার রাতের খাবারের উচ্ছিষ্ট নমুন সংগ্রহ করে ফরেন্সিক পরীক্ষা করাতে পাঠানো হচ্ছে। মৃতদেহ থেকে সংগৃহীত ভিসেরাও পরীক্ষা করানো হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদতে পুঞ্চা থানার ডাহিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রথু অনেকদিন ধরেই পুরুলিয়া শহরের বিবিরবাঁধ পাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। দুলমি এলাকায় তিনি ঠেলাগাড়িতে খাবার বিক্রি করেন। ওই পরিবার অন্যান্য দিন ভোরে উঠলেও, এ দিন অনেক বেলা পর্যন্ত তাঁদের ঘরের দরজা না খোলায় পড়শিদের সন্দেহ হয়।

পড়শি নিতাই সেন, মোহন পরামানিক বলেন, ‘‘দরজায় কান পেতে দেখা যায়, ঘরের ভিতর থেকে একটা শিশুর কান্নার শব্দ আসছে। কিন্তু, ধাক্কাধাক্কি করেও কোনও সাড়া মিলছিল না। শেষে সবাই মিলে দরজা ধাক্কা দিয়ে খোলা হয়।’’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, পরিবারের সকলেই সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। কয়েকজন বিছানায়, কয়েকজন মেঝেতে ছিলেন। কয়েকজনের মুখ থেকে গ্যাঁজলাও বেরিয়েছে। শুধু টুম্পার পাঁছ-ছ’মাসের মেয়েটি কাঁদছিল। তাঁকে তুলে নেন পড়শিরা। খবর দেন পুলিশে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিন জন সংজ্ঞাহীন ছিলেন। পরে বিকাশের পরিবারের লোকজন এসে শিশুটিকে নিয়ে যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ওই ঘরে ঢুকে পুলিশ তদন্ত করে। পুলিশ আধিকারিকেরা জানান, তাঁরা ঘর থেকে সন্দেহজনক কিছু পাননি। শুক্রবার রাতে রুটি ও মাংস খেয়েছিল ওই পরিবার। তার কিছু উচ্ছিষ্ট ও জল পুলিশ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এলাকার কাউন্সিলর মৌসুমী ঘোষ জানান, অনেকদিন ধরেই এই পরিবারটি এখানে রয়েছে। পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, পরিবারে কোনও অশান্তিও ছিল না। কী করে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল, বুঝতে পারছি না।’’

পড়শিরা জানান, বিকাশ ও টুম্পা ডাক্তার দেখাতে পুরুলিয়ায় এসেছিল। তাঁরা বরাবাজারের বেলিয়াবাদ গ্রামে থাকে। শুক্রবার রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে ১১টা নাগাদ শুয়ে পড়ে। তারপর তাঁদের ঘর থেকে আর কোনও সাড়া পাননি পড়শিরা।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কিছু রুটি ও অল্প মাংস মিলেছে। কিন্তু, তা ছাড়া আর কোনও খাবার খেয়েছিলেন কি না, তা জানা সম্ভব হয়নি। কারণ খাওয়া-দাওয়ার পরে বাসনপত্র ধুয়ে রাখা হয়েছিল। পরিবারের জীবিত সদস্যেরা সংজ্ঞাহীন থাকায় কথা বলাও সম্ভব হয়নি।’’

পড়শি সন্তু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পরে তাঁদের জ্ঞান ফিরলেও আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছেন। এমনকি পরিচিতদের চিনতেও পারছেন না। কাউন্সিলর মৌসুমী বলেন, ‘‘রঞ্জিত ও রুম্পার দেহ আত্মীয়েরা পুঞ্চা থেকে এসে সৎকারের জন্য নিয়ে গিয়েছেন। জামাইয়ের দেহ তাঁর বাড়ির লোকজন নিয়ে যান।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Mysterious Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE