তদন্ত: ঝামেলার পরে নিজের অফিসে পুলিশের সঙ্গে কথা বিএলএলআরও-র (লাল সোয়েটার)। নিজস্ব চিত্র
ডাম্পারে বালি ‘ওভারলোড’ করার জরিমানা নিয়ে বচসার জেরে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে (বিএলএলআরও) মারধরের অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটে নানুর বিএলএলআরও অফিসে। অভিযোগ, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরও করা হয়। ওই ঘটনায় তৃণমূলের প্রাক্তন এক পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে অন্য অভিযুক্তের। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম শেখ জামিরুল ওরফে জামু।
প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেল ৩টে নাগাদ বর্ধমানের নতুনহাট সংলগ্ন অজয় নদ থেকে বালিবোঝাই একটি ডাম্পার কীর্ণাহারের দিকে যাচ্ছিল। নানুরে চালান পরীক্ষার জন্য সেটি থামান বিএলএলআরও শ্রাবন্ত দত্ত। অভিযোগ, চালান দেখানোর নাম করে ডাম্পার ফেলে পালিয়ে যান চালক। বিএলএলআরও ওই ডাম্পার পুলিশের হেফাজতে তুলে দেন। তাঁর অভিযোগ, মঙ্গলবার ১৫-১৬ জন ব্যক্তি ওই ডাম্পারটি ছাড়ানোর জন্য কথা বলতে বিএলএলআরও অফিসে আসেন। ডাম্পারটির জন্যে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছিল। তা নিয়ে দু’পক্ষে বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, বিএলএলআরও-র টেবিলে টাকা-ভর্তি প্যাকেটে ছুড়ে দিয়ে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। অভিযোগ, সরকারি ওই আধিকারিককে মারধরও করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই অভিযুক্তেরা পালিয়ে যান।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই ডাম্পারের মালিক নতুন ডাঙাপাড়ার শেখ জামিরুল ওরফে জামু। জামু ও তাঁর দাদা আলম শেখ এলাকায় সক্রিয় তৃণমূলকর্মী হিসেবে পরিচিত। গত বারের আগের নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জিতে থূপসড়া পঞ্চায়েতের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জামু। শেখ আলমও ওই বারে তৃণমূলের টিকিটে জিতে নানুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন। যৌথ অংশীদারিত্বে আলমের নতুনহাটের কাছে অজয়ে বালির ঘাট রয়েছে। এ বিষয়ে আলম বলেন, ‘‘ওই ঝামেলার কথা আমি কিছু জানি না। আমি বাইরে রয়েছি। আমাদের বালির ঘাটের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে।’’ হুমকি, মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে জামু দাবি করেছেন, ডাম্পারে অতিরিক্ত বালি ছিল না। বৈধ কাগজও ছিল। অযথা হয়রানির ভয়ে চালক পালিয়ে যান। তাঁরা এ দিন বৈধ কাগজ দেখিয়ে ডাম্পার ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, বিএলএলআরও তাঁদের কোনও কথা শোনেননি। সে জন্য বচসা হয়।
বিএলএলআরও বলেন, ‘‘যা বলার পুলিশ এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এর পরে যা হওয়ার আইন মোতাবেক হবে।’’ বোলপুরের এসডিএলএলআরও অনুপম দাস মজুমদার বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ মেনে কাজ করতে গিয়ে ওই আধিকারিক হেনস্থার মুখে পড়েছেন। আমরা আইনি পথে যা করার করব।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে বালি নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি আটক করায় সরকারি আধিকারিকের উপর হামলা ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আলম ও জামু আমাদের দলের সমর্থক মাত্র। আমরা এ ব্যাপারে বিএলএলআরও-র পাশে রয়েছি।’’ পুলিশের বক্তব্য, দু’জনের বর্ণনা সহ অভিযোগ মিলেছে। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy