পুরসভার এই জমিতেই তৈরি হচ্ছে সাঁইথিয়ার নতুন বাসস্ট্যান্ড। —নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে নতুন বাসস্ট্যান্ড পেতে চলেছে সাঁইথিয়া। সেচ দফতরের কার্যালয়ের পশ্চিমে ২৮২.২ ডেসিমেল (প্রায় চার বিঘে) জায়গার উপরে জোরকদমে ওই বাসস্ট্যান্ড তৈরির কাজ চলছে। সাঁইথিয়ার পুরপ্রধান বিপ্লব দত্তের কথায়, ‘‘পুজোর আগেই বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা রাখছি।’’
শহরের যেখানে এখন বাসস্ট্যান্ড রয়েছে, সেই জায়গার পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। বাণিজ্য শহর সাঁইথিয়ার বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল, আধুনিক একটি বাসস্ট্যান্ডের। গত পুরভোটের আগে সে কথা মেনেছিলেন শাসক দলের নেতামন্ত্রীরা। কথা দিয়েছিলেন, পুর নির্বাচনের পরে সিউড়ি রাস্তায় সেচ দফতরের দেওয়া জায়গায় অত্যাধুনিক বাসস্ট্যান্ড তৈরি হবে। সেই মতো কাজও শুরু হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজ সে ভাবে এগোয়নি।
কেন?
পুরসভা সূত্রের খবর, সেচ দফতরের জায়গা হস্তান্তর নিয়ে কিছু সমস্যা থাকায় জোরকদমে সেই কাজ শুরু করতে পারেনি পুরসভা। পুরপ্রধান বিপ্লব দত্তের কথায়, ‘‘জমি হস্তান্তরের সমস্যা এখন মিটে গিয়েছে। তারপরেই শুরু হয়ে গিয়েছে নির্মাণ কাজ।’’ ওই সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের জন্য ২০১২ সালে সেচ দফতরের কাছে জায়গা চেয়ে আবেদন করে পুর কর্তৃপক্ষ। সেচ দফতরের জেলা আধিকারিকেরা সেই আবেদন পত্র রাজ্য জলসম্পদ ভবনে পাঠিয়ে দেয়। সম্প্রতি সেচ দফতরের তাদের কার্যালয়ের পশ্চিমে প্রায় চার বিঘে জায়গা বাসস্ট্যান্ড তৈরির জন্য পুরসভাকে দিয়েছে। জায়গা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেচ দফতরের শর্ত ছিল, দফতরের কার্যালয় ও বাসস্ট্যান্ডের মাঝে পাঁচিল দিতে হবে। সেই শর্ত মেনে পুরসভা পাঁচিল তৈরি করেছে।
এত দিন এই শহরে স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড ছিল না। আগে স্টেশন চত্বরে বাস দাঁড়াত। আশির দশকে সেখান থেকে বাসস্ট্যান্ড সরানো হয়। এখন যেখানে বাস দাঁড়ায় বা বাসস্ট্যান্ড নামে পরিচিত, তা শহরের মাঝে এবং অত্যন্ত ঘিঞ্জি জায়গা। বাস ঢোকা বা বেরোনোর রাস্তাও একটিই। তা-ও অল্প পরিসরের। অস্থায়ী দোকানে ঘেরা। আর রিকশা-সহ বিভিন্ন যান ঢোকা বেরনোর ফলে যানজট লেগেই থাকে। এই অবস্থায় বাস বের করে রাস্তায় উঠতে বাস চালকদের কালঘাম ছোটে। ঠেলা গাড়ি, গুমটি, স্থায়ী দোকানের বর্ধিত শেড, রিকশা স্ট্যান্ড, টেলিফোন ও ইলেকট্রিক পোল, যাতায়াতের পথকে আরও দুর্গম করে তোলে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে টোটো। বাসস্ট্যান্ডে প্রবেশ ও বেরোনোর পথও একটা। বাসচালক সনৎ মণ্ডল, শেখ জুলফিকর, তাপস মণ্ডল, শেখ রাকেশরা এক সুরে বলছেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ড থেকে মেন রাস্তায় ওঠা ও বাসস্ট্যান্ডে ঢোকা যে কী কষ্টের তা কল্পনা করা যায় না। পেট বড় বালাই, তাই এ ভাবে বাস চালাই।’’
এতো গেল বাস ঢোকা-বেরোনোর সমস্যা। বাসস্ট্যান্ডের কথাও তথৈবচ। নেই ছাউনি, নেই কংক্রিকেটের ঢালাই। বর্ষার সময় চারদিক জল কাদায় ভরে যায়। জলকাদা ডিঙিয়ে গিয়ে বাসে ওঠা-নামা যেমন দুর্বিসহ হয়, তেমনই অবস্থায় হয় শৌচালয়ের। মাঠপলসা এলাকার সরজু শেখ, কোটাসুরের বিজয় মণ্ডলরা বলেন, ‘‘শৌচালয়ে যাওয়াটা তো বারোমাসই সমস্যার।’’ বাসের নিত্যযাত্রী বারিন ঘোষ, অরুণ দাস, সিরাজুল হকরা আবার তুলছেন পানীয় জলের সমস্যার কথা।
পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত নিজেও সে সব সমস্যার কথা মানছেন। বলছেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ড এলাকাটা অত্যন্ত ঘিঞ্জি। ইচ্ছা থাকলেও এখানে ঢোকা বেরোনোর দু’টি পথ করা যাবে না। তাই ঠিক মতো পরিষেবাও দেওয়া যাচ্ছে না।’’ নতুন বাসস্ট্যান্ডে যাবতীয় সুবিধে মিলবে বলে তাঁর আশ্বাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy