Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সিউড়ির মাথায় আর এক উজ্জ্বল

এক উজ্জ্বল গেলেন। আর এক উজ্জ্বল এলেন। কিন্তু, জেলা সদর শহরের পুরপরিষেবার আঁধার কাটবে কি?

নতুনকে বরণ পুরাতনের। বৃহস্পতিবার সিউড়ি পুরসভায়। —নিজস্ব চিত্র।

নতুনকে বরণ পুরাতনের। বৃহস্পতিবার সিউড়ি পুরসভায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০২:৪৬
Share: Save:

এক উজ্জ্বল গেলেন। আর এক উজ্জ্বল এলেন। কিন্তু, জেলা সদর শহরের পুরপরিষেবার আঁধার কাটবে কি?

শহরবাসীর এমন প্রশ্নের মাঝেই সিউড়ির পুরপ্রধানের দায়িত্ব নিলেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ পুরসভায় কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে পুরপ্রধান পদে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান এসডিও অরুন্ধতী ভৌমিক। তার পরেই তাঁকে মালা পরিয়ে বরণ করে নেন বিদায়ী পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। দায়িত্ব নিয়েই নতুন উজ্জ্বল বলেন, ‘‘আমি খুব খুশি। প্রথম দায়িত্ব হবে শহরের সর্বত্র পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। সঙ্গে শহরবাসী যেন যথাযথ পুরপরিষেবা পান, তা নিশ্চিত করা।’’

দুর্নীতি, অনুন্নয়ন, দুর্বল পরিষেবা-সহ নানা আভিযোগ তুলে দলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর তাঁর বিপক্ষে চলে যাওয়ায় নেতৃত্বের নির্দেশে গত ৭ জুলাই পদ থেকে ইস্তফা দেন উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে এত দিন উপ পুরপ্রধানের দায়িত্ব সামলানো উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্ক দারুণ ছিল, এমনটাই মনে করেন জেলার রৈজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। শুধু এই বোর্ডে নয়, আগের বোর্ডেও এই জুটিই সিউড়ি পুরসভা চালিয়ে এসেছিল। সেই তাঁদের হাতে থাকা পুরবোর্ডের বিরুদ্ধেই এত দিন নানা অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে পানীয় জলের সমস্যা ও জঞ্জালযুক্ত পথঘাট নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ ছিল সিউড়ি শহরে। সঙ্গে ছিল বিদায়ী তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে জল প্রকল্প ও বস্তি উন্নয়নে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। যা তুলেছিলেন খোদ প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক স্বপন ঘোষ।

তৃণমূল সূত্রের খবর, গত ৫ জুলাই উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়কে সরানোর আর্জি জানিয়ে মোট ১৯ জনের মধ্যে যে ১৫ জন কাউন্সিলর দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে চিঠি দেন, তাতে উপরের দিকেই নাম ছিল উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের। এবং তাঁকেই যে পুরপ্রধান করা হোক, তা চেয়েছিলেন বাকি কাউন্সিলরেরাও। দলেরই এক নেতা বলছেন, ‘‘সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে— এই পদ্ধতি অবলম্বন করে অনুব্রত উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়কে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ দিয়ে (ইস্তফা দিতে নির্দেশ দেন।’’ কিন্তু গত বোর্ডের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকার পরে, সেই উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়কেই পুরপ্রধান করা হল? তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলছেন, ‘‘এত অভিযোগ সত্ত্বেও গত পুরভোটে যথেষ্ট বড় ব্যবধানে বিপক্ষকে হারিয়ে চতুর্থবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। ভাল ফলের পুরস্কার হিসাবেই তাঁকে আবার পুরপ্রধান করা হয়েছিল।’’

যদিও উজ্জ্বলবাবুকেই ফের পুরপ্রধানের পদে বসানোয় দলের একটা অংশের অসন্তুষ্ট ছিল বলেই খবর। তাই বছরখানেকের মধ্যেই পদ ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। প্রকাশ্যে না বললেও কাউন্সিলরদের একাংশের ক্ষোভ, ‘‘কয়েক জন বিশেষ কাউন্সিলর ছাড়া আর কাউকেই বিশেষ পাত্তা দিতেন না উজ্জ্বলবাবু।’’ দলীয় সূত্রের খবর, সেই অসন্তোষ কাজে লাগানোর বেশ কয়েকটি সুযোগ জুটে যায় বিক্ষুব্ধদের হাতে। প্রথম বিতর্ক শুরু হয় বিধানসভা ভোটে আশোক চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করার ইঙ্গিত দেওয়ার সময়েই। খোদ পুরপ্রধানের ওয়ার্ডেই অশোককে বহিরাগত তকমা দিয়ে পোস্টার পড়ে। ওই কাজের পিছনে উজ্জ্বলের হাত রয়েছে, এমন একটা গুঞ্জন ওঠে দলেরই অন্দরে। যদিও বিধানসভা ভোটে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল লিড পায়। তবে, সব থেকে বেশি ক্ষোভ ছিল শহরে অবৈধ দখলদারি ও জঞ্জাল পরিষ্কার না হওয়া নিয়ে। পুরভোটের আগে চাপে পড়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়ে লিফলেট ছাড়তে হয়েছিল। তার পরেও তেমন কোনও কাজ না হওয়ায় অনুব্রতকে নালিশ জানাতে আর এক মুহূর্ত দেরি করেননি উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় সমেত ১৫ কাউন্সিলর। প্রাক্তন উজ্জ্বলের অবশ্য দাবি, ‘‘সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এখন দলের স্বার্থেই অন্য ভূমিকায়।’’

এ বার যে উজ্জ্বল দায়িত্বে এলেন, তিনি কি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন? মানুষের চাহিদা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন নতুন পুরপ্রধান। যদিও ছবিটা পাল্টাবে না বলেই দাবি করছেন বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলছেন, ‘‘যে পুরবোর্ড নিয়ে জনমানসে এত ক্ষোভ, তার ক্ষমতায় দু’নম্বরে থাকা ব্যক্তি হলেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। যা কিছু দুর্নীতি হয়েছে বা পুরপরিষেবার মান নেমেছে, তার জন্য পুরপ্রধান তো একা দায়ী নন। বাকিরাও সমান দায়ী। তাঁদেরই এক জনকে পুরপ্রধান করে তৃণমূল আসলে মানুষকে ধোঁকা দিতে চাইছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরেই এই পরিবর্তন।

শহরবাসীর অনেকেই যদিও এই রাজনৈতিক কুচকাচালির মধ্যে যেতে নারাজ। কেউ কেউ নতুন পুরপ্রধানকে কিছু সময় দেওয়ারও পক্ষপাতি। এরই মাঝে ফের আশার বাণী শুনিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সিউড়ি শহরে পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে আরও টাকা বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সে দিকে তাকিয়ে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়াকেই আপাতত পাখির চোখ করছেন বর্তমান উজ্জ্বল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Municipality Siuri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE