প্রতীকী ছবি
আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি পঞ্চায়েতে এক জন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার ভাবনা শাসকদলের। তৃণমূল সূত্রে খবর, এলাকায় দলের সাংগঠনিক অবস্থা, দলের প্রতি মানুষের মনোভাব, নেতা-কর্মীদের ‘দুর্নীতি’— এ সবের হাতে গরম খবরাখবর পেতেই প্রতি পঞ্চায়েতে পর্যবেক্ষক রাখা হবে। যাতে দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যায়। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী শিবির।
আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে বীরভূম জেলার ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ১৬৭ জন পর্যবেক্ষক বেছে নেবে ব্লক কমিটি। ইতিমধ্যেই পর্যবেক্ষকদের নাম জমা পড়তে শুরু করেছে। চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে জেলা কমিটি। ওই পর্যবেক্ষকেরা বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত ‘দলের চোখ’ হিসেবে কাজ করবেন। নিরস্তর জেলা নেতৃত্ব সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন।
শাসকদল সূত্রে খবর, সংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখা জরুরি। গত লোকসভা নির্বাচনে সেটা বুঝেছিল দল। লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফল করার পর এ রাজ্যে শাসকদল ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের হাত ধরেছে। কেন তৃণমূলের থেকে মুখ ঘোরাল মানুষ, ক্ষোভ কোথায়, দলের খামতি কোথায়— জানতে পিকে টিমের পরামর্শে একের পর এক কর্মসূচি নিয়েছে শাসকদল। তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতগুলিতে পর্যবেক্ষেক নিয়োগের পিছনেও পিকে-র পরামর্শ রয়েছে।
ভোটে খারাপ ফল খুঁজতে গিয়ে স্থানীয় স্থরে তৃণমূল নেতাদের একাংশের ঔদ্ধত্য, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার পাশাপাশি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রচুর অভিযোগ উঠে এসেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এক বছরের কম সময় রয়েছে নির্বাচনের। এ বার যাতে সেই অভিযোগ না ওঠে, পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে সেখানেই আগল দিতে চাইছে দল। ঘটনা হল, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ব্লকে ব্লকে কর্মী সম্মলেন করে সংগঠন মজবুত করায় জোর দিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। অনুব্রতের হুঁশিয়ারি কোনও নেতা কর্মীর দুর্নীতির রিপোর্ট পেলেই তাঁকে পদ থেকে সরতে হবে, স্থান হবে কারাগারে। কে কোন স্তরের নেতা দেখা হবে না।
কিন্তু তাতেও নিচুতলায় সব খবর রাখা সম্ভব নয়। ১০০ দিনের কাজে টাকা নেওয়া, আবাস যোজনার টাকা নেওয়া-সহ নানা অভিযোগ উঠছে এখনও। সূত্রের খবর, দলের নেতারা আদৌ মানুষের পাশে থাকছেন কিনা, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন কিনা, পঞ্চায়েত স্তরের পর্যবেক্ষকেরা সেই খবরটুকু দেবেন দলকে।
যা শুনে বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘বাঁশ ঝাড়ে কী করে আপনি তালগাছ খুঁজবেন? যে দলটার চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল দুর্নীতিতে ডুবে, সেখানে কে কার বিচার করবে। এটা শুধু মানুষের নজর ঘোরানোর কৌশল। কিন্তু মানুষ এত বোকা নন।’’ অন্য দিকে, সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার বক্তব্য, ‘‘আমার তো মনে হচ্ছে, সবাই মিলে এক ছাতার তলায় এসে দুর্নীতি করবে। তারই কৌশল নিয়েছে তৃণমূল।’’
আবার তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, কোনও অঞ্চল সভাপতি যদি দুর্নীতি করেই থাকেন, সেটা ধরার সাহস কি পাবেন পর্যবেক্ষক? অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘কিসের ভয়! কিসের দুর্নীতি! সংগঠন চালানোর জন্য মানসিক, শারীরিক ও কৌশলগত ভাবে কোনও অঞ্চল সভাপতি দুর্বল হতে পারেন। তাঁর জায়গায় পাঁচ বা সাত জনের কমিটি গড়তে হতে পারে। সে-সব খবর ঠিকমতো নিচুতলা থেকে পেতেই পর্যবেক্ষকেরা থাকবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy