থানার সামনে পড়ে রয়েছে রাজু থান্দারের দেহ। ফাইল চিত্র। (ডানদিকে) রাজুর স্ত্রী ও মেয়ে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
মল্লারপুর থানায় পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন নাবালকের মৃত্যুর ঘটনার রেশ এখনও মেলায়নি। এ বার চার বছর আগে বোলপুরে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর মামলায় আত্মসমর্পণ করলেন অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিক। পুলিশের দাবি, গত রবিবার প্রবীর দত্ত নামে ওই পুলিশ আধিকারিক নরেন্দ্রপুর থানায় আত্মসমর্পণ করেন। বর্তমানে তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার ডিরেক্টর অব এনফোর্সমেন্ট বিভাগে কর্মরত।
মঙ্গলবার ওই পুলিশ আধিকারিককে ট্রানজ়িট রিমান্ডে বারুইপুর থেকে পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সে করে বোলপুর আদালতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু, সদ্য করোনা থেকে সেরে ওঠা অসুস্থ প্রবীরবাবু অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামতে পারেননি। ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমেই শুনানি করে তাঁকে ৭ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বোলপুরের এসিজেএম অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ১১ অগস্ট তৎকালীন বোলপুর থানার পুলিশ চুরির অভিযোগে দর্জিপাড়ার বাসিন্দা, বছর আঠাশের রাজু থান্দারকে আটক করে। তিন দিন পরে সেই যুবকের দেহ পাওয়া যায় বোলপুর হাসপাতালের সামনে। কী ভাবে মৃত্যু হয়েছিল ওই যুবকের, তা আজও ধোঁয়াশায় ভরা। রাজুর স্ত্রীর অভিযোগ ছিল, পুলিশ লক-আপে মারধরের জেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এমনকি, টানা তিন দিন রাজুকে থানায় আটকে রাখলেও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার দেখায়নি।
ময়না-তদন্তের পরে রাজুর দেহ এলাকায় ফিরতেই উত্তেজিত জনতা থানায় ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পুলিশকে রবার বুলেট চালাতে হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বোলপুর থানার তৎকালীন আইসি প্রবীর দত্ত-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে। পরে তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় সিআইডির হাতে। সূত্রের খবর, সিআইডি তদন্তে নেমে তৎকালীন আইসি-র গাড়ির চালক নান্টু মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। বোলপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী ফিরোজ কুমার পাল জানান, চলতি বছর জুনে সিআইডি এই ঘটনার প্রথম চার্জশিট জমা দেয় বোলপুর আদালতে। তাতে যদিও নাম ছিল না প্রবীর দত্তের। মাস চারেক পরে সিআইডি ফের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেয়। সেখানে অবশ্য ওই পুলিশ আধিকারিকের নাম অভিযুক্ত হিসেবে ছিল। এর পরেই প্রবীরবাবুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ১২০বি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মঙ্গলবার এসিজেএমের এজলাসে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী স্বাগত বিশ্বাস সওয়াল করেন, তাঁর মক্কেল কিছুদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হন। করোনা সেরে গেলেও তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ। আইনজীবী বলেন, ‘‘আমি আদালতের কাছে যে কোনও শর্তে জামিনের আবেদন করছি।’’ কিন্তু সরকারি আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করে প্রশ্ন তোলেন, উনি একজন অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ লক-আপে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। তিনি সম্প্রতি অসুস্থ হয়েছেন। আরও আগে কেন আত্মসমর্পণ করেননি? সরকারি আইনজীবী পরে বলেন, ‘‘দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে বিচারক জামিনের আবেদন খারিজ করে সাত দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy