জেলায় কেউ নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এমন খবর স্বাস্থ্য দফতর কিংবা বীরভূম জেলা প্রশাসনের কাছেও নেই। কিন্তু, থেমে নেই ভিন্ রাজ্য থেকে আমদানি হওয়া ভাইরাস নিয়ে গুজব। এ বার কিছুটা হলেও তার ছাপ পড়ল মঙ্গলবারের জামাইষষ্ঠীর বাজারে। নানুর, ময়ূরেশ্বরের ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, দাম কমিয়েও ফল সেভাবে বিক্রি করা যায়নি। ফলের বিকল্প হিসেবে এ দিন চাহিদা বেড়েছে মিষ্টির।
গত বছর জামাইষষ্ঠীর সময়ে এক কুইন্ট্যাল আম বিক্রি করেছিলেন কীর্ণাহার ফল বাজারের বামাচরণ দাস। এ বারেও প্রায় একই পরিমাণ আম তুলেছিলেন। লাভপুরের সাধন দাস প্রায় এক কুইন্ট্যাল ২০ কেজি লিচু বিক্রি করেছিলেন। তিনিও সম পরিমাণ লিচু আমদানি করেছিলেন। কিন্তু, দিনের শেষের বিকিকিনির হিসেব বলছে, দাম নামিয়েও অর্ধেক ফল বিক্রি করা যায়নি। কেন এমন হল, প্রশ্ন করতেই একরাশ বিরক্তি উগরে জবাব দিচ্ছেন, ‘‘কেন আবার, নিপা ভাইরাসের আতঙ্কে তো বিক্রিবাটা মাথায় উঠেছে। খদ্দেরদের জবাবদিহি করতে করতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। সবাই সন্দেহের চোখে দেখছেন আর জিজ্ঞেস করছেন ইঞ্জেকশান দেওয়া নেই তো, বাদুরে ঠোকরানো নয় তো?’’
দিন কয়েক ধরেই ভাইরোলজিস্ট’রা নিপা থেকে বাঁচতে নানা দাওয়াই দিয়ে এসেছেন। তাঁদের সতর্কবার্তা ছিল, বাজার থেকে ফল নেওয়ার সময় ভাল করে দেখে কিনতে হবে। মাঠে-ঘাটে পড়ে থাকা ফল না খেলেই ভাল। নিপা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে ৭৫ শতাংশ বাঁচার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেউ জানিয়েছিলেন, ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ৩–১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ শুরু হয়৷ প্রথমে জ্বর মাথাব্যথার মতো সাধারণ কষ্ট থাকে, যাকে সাধারণ ফ্লু বলে মনে হতে পারে৷ তা ছাড়া পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর ভাবে থাকা, নাকে–মুখে হাত দেওয়ার আগে বা খাবার খাওয়ার আগে হাত ভাল করে ধোয়ার দাওয়াই তো ছিলই।
ফল বিক্রেতাদের দাবি, জেলায় কেউ নিপায় আক্রান্ত হলে গুজবের তাও একটা ভিত্তি থাকত। তবে ক্রেতাদের অনেকেই আগাম সতর্ক। তাঁদের অনেকেই বলছেন, সব ফল তো আর জেলার নয়। ভিন্ রাজ্য থেকেও প্রচুর ফল আসে। ফলে দেখে নিতে দোষ কি? এ সবের মাঝে দরাদারি ছাড়াও চলছে ফল নিয়ে নানা প্রশ্ন। নানুরের বিডিও অফিস পাড়ার ফলবিক্রেতা রওসন আলি, আমোদপুর স্টেশন রোডের ফল বিক্রেতা মানিক দাসেরা বলছেন, ‘‘মনে হচ্ছে আমরাই যেন চোরের দায়ে ধরা পড়েছি।’’
জামাইষষ্ঠীর অন্যতম ফল আম আর লিচু। কিন্তু, নিপার আতঙ্কে কিছু কিছু এলাকায় বাজার তলানিতে বলে বিক্রেতাদের দাবি। তাঁরা জানিয়েছেন, খদ্দেররা নিয়ম রক্ষার্থে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পরিমাণ ফল কিনেছেন। জেলার বিভিন্ন বাজারে মাঝারি মানের আমের কেজি ছিল ৩৫/৪০ টাকা। চাহিদা কমে যাওয়ায় এ দিন সকাল থেকে সেই আমই বিকিয়েছে ২৫/৩০ টাকা কেজি দরে। যে লিচুর দাম ছিল কেজি প্রতি ২০০/২৫০ টাকা সেই লিচুরই দাম নেমে দাঁড়ায় ১৮০ টাকা। ৬০ টাকা কেজি দরের শশা নেমে দাঁড়ায় ৪০ টাকায়। কীর্ণাহারের নুরসালিম শেখ, সুরজিৎ দে, ময়ূরেশ্বরের বীরচন্দ্রপুরের সুখেন মণ্ডলরা জানান, গত বারের তুলনায় এ বারে খরিদ্দাররা বাজার থেকে ফল অনেক কম কিনেছেন। তার সত্যতা মিলেছে নানুরের আলিগ্রামের গৃহবধূ পাপিয়া পাঠক, ঝর্ণা ঘোষদের কথাতেও। ময়ূরেশ্বরের রামনগরে সাধনা রায়, লাভপুরের কুরুন্নাহারের অতসী মণ্ডলরা বলছেন, ‘‘জামাইষষ্ঠীতে তো আর জামাইয়ের পাতে ফল না দিলে চলে না। তাই গ্রামগঞ্জে যে সব বাড়িতে আমের গাছ ছিল তাদের কাছে থেকেই যৎসামান্য পরিমাণ সংগ্রহ করেছিলাম।’’
অনেক কাজ থাকলেও জামাইষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়ি যান নানুরের চারকলগ্রামের সুদাম মেটে, লাভপুরের ধনডাংগার বিবেকানন্দ মণ্ডলরা। তাঁরা বলেন, ‘‘অন্য বছর ফল খেয়ে শেষ করা যায় না। এ বার অনেক কম ছিল।’’ ফলের বিকল্প হিসেবে মিষ্টির পরিমাণ বাড়িয়েছেন শাশুড়িরা। আমোদপুরের অলোকা দাস, বাতাসপুরের সুনয়নী মণ্ডল বলেন, ‘‘জামাইয়ের থালা ভরাতে অন্য বারের তুলনায় ৩-৪ রকম মিষ্টি বেশি এনেছিলাম।’’ লাভপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ী স্বপন রুজ, ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার মোড়ের দীনেশচন্দ্র দে জানান, এ বার মিষ্টি বিক্রি হয়েছে অনেক বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy