Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ফেরেনি হাল হাত বদলেও

চার একর জায়গা নিয়ে বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হলেও দিন দিন ঠেলাগাড়ি, রিকশা ও টোটোর দখলদারিতে ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে।

সারি-সারি: বাস, ভ্যান আর দোকানে গিজগিজে অবস্থা জেলার সদর বাসস্ট্যান্ডের। ছবি: সুজিত মাহাতো

সারি-সারি: বাস, ভ্যান আর দোকানে গিজগিজে অবস্থা জেলার সদর বাসস্ট্যান্ডের। ছবি: সুজিত মাহাতো

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩৭
Share: Save:

পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে বারবার হাত বদল হয়েছে বাসস্ট্যান্ডের। কিন্তু শ্রী ফেরেনি। ভোগান্তি কাটেনি যাত্রীদেরও। যার জেরে পুরুলিয়া জেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড যেন ভাগের মা হয়ে গিয়েছে। যাত্রীদের আক্ষেপ— রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়ন হলেও ছিটেফোঁটা জোটেনি এখানে। উল্টে বছর পর বছর বাসস্ট্যান্ডে বেড়ে গিয়েছে দখলদারি। যাত্রী থেকে পরিবহণ কর্মী সকলেরই দাবি— নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে ঢেলে সাজানো হোক বাসস্ট্যান্ড। জেলার মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোও মানছেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ডটি সামগ্রিক সংস্কারের প্রয়োজন ঠিকই। পুরসভা ও জেলা প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠকে বসব।’’

চার একর জায়গা নিয়ে বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হলেও দিন দিন ঠেলাগাড়ি, রিকশা ও টোটোর দখলদারিতে ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে। অনেকখানি অংশ ঢালাই করা হলেও যাত্রীদের যাতাযাতের পথ এখনও কাঁচা রয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি হলেই সেখানে জল জমে যেন নরক হয়ে ওঠে। সেই কাঁচা অংশের দু’পাশে সার দিয়ে হরেক জিনিসের ঠেলাগাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। পড়ে থাকা সামান্য জায়গাতেও যাত্রীরা যে নিশ্চিন্তে পা ফেলবেন উপায় নেই। বাস খুঁজতে গিয়ে বেখেয়াল হলেই হয় টোটো, নয় রিকশার গুঁতো খেতে হবে। পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড দিয়ে যাঁরা নিত্য যাতায়াত করেন, এমনই অভিজ্ঞতা তাঁদের।

রিকশা, টোটোর প্রবেশ ঠেকানো যায়নি কেন? জেলা বাস মালিক সমিতি জানাচ্ছে, অবৈধ পার্কিং রুখতে বেশ কয়েক বছর আগে বাসস্ট্যান্ডের প্রতিটি প্রবেশপথে কম্পিউটার চালিত ‘ড্রপগেট’ চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়ন্ত্রণ বেশিদিন চলেনি। ফলে বাস ঢুকলেই যাত্রী তুলতে টোটো ও রিকশা যেন ছেঁকে ধরছে। ঠেলাগাড়ির সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে বলে যাত্রীদের ক্ষোভ। তার উপরে প্রচুর হকার জিনিসপত্র নিয়ে বাসস্ট্যান্ড চষে বেড়ান। সব মিলিয়ে বাসস্ট্যান্ডের ভিতরেও মাঝে মধ্যে যানজট পাকিয়ে উঠছে।

সমস্যা রয়েছে আরও। নিকাশি নালা থাকলেও তা আবর্জনা আর প্লাস্টিকে বুজে গিয়েছে। ফলে নোংরা জল উপচে বাসস্ট্যান্ডে চত্বরে জমে থাকে। এত যাত্রী থাকলেও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। মাস তিনেক আগে ওষুধ বিক্রেতাদের একটি সংগঠনের তরফে পানীয় জলের একটি ব্যবস্থা হয়েছে।

পুরসভা নিয়ন্ত্রিত একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয় থাকলেও অবস্থা শোচনীয়। দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা পুরকর্মী শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ই স্বীকার করেন, ‘‘দোতলায় চারটি ঘর থাকলেও আমরা উঠি না। ভয় লাগে, যে কোনও সময়ে চাঙড় খসে মাথায় পড়তে পারে।’’ তিনি জানান, কয়েকদিন আগে দোতলার জানালার একটি ‘শেড’ দিনের বেলায় ভেঙে পড়ে। ভাগ্যিস সে সময় নীচে কেউ ছিলেন না!

অথচ যাত্রীদের ভিড়ের নিরিখে এই বাসস্ট্যান্ডের গুরুত্ব কম নয়। জেলা বাস মালিক সমিতির হিসেবে প্রতিদিন এই বাসস্ট্যান্ড থেকে তিনশোর বেশি বাস যাতায়াত করে। দৈনিক গড়ে ৩০ হাজার যাত্রী বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করেন। এখান থেকে আশপাশের জেলা তো বটেই, ঝাড়খণ্ড রাজ্যেরও বেশ কিছু জায়গার বাস যোগাযোগ রয়েছে। তাহলে এমন অবস্থা কেন?

বাস মালিক সমিতির জেলা সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত দাবি করেন, এক সময়ে এই বাসস্ট্যান্ড ছিল জেলা প্রশাসনের হাতে। ১৯৮৯-’৯০ সালে বাসস্ট্যান্ড পুরসভার হাতে আসে। ২০১১ সালে ফের চলে যায় জেলা প্রশাসনের কাছে। এই সময় জেলা প্রশাসন যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কাজও শুরু হয়। যদিও পরবর্তীকালে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে বাসস্ট্যান্ড চলে যায় পুরসভার হাতে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমরা চাই বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়নে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করা হোক। না হলে পরবর্তীতে আমরা আন্দোলনে নামব।’’

বাসস্ট্যান্ডের যে উন্নয়ন প্রয়োজন, সে ব্যাপারে একমত শাসক-বিরোধী সবাই। তৃণমূল কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস থেকে ওই ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রদীপ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বাসস্ট্যান্ড নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘পুরসভার উদাসীনতাতেই এই দুরাবস্থা। পুরসভার পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি তুলব। পরিবহণমন্ত্রীর কাছে এ ব্যাপারে প্রস্তাব দিতে অনুরোধ করব।’’ পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ডটি আমূল সংস্কারের জন্য পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করেছিলাম। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে জানিয়েছিলাম। কেএমডিএ-র প্রতিনিধিদল বাসস্ট্যান্ড পরিদর্শন করে যান। কিন্তু জেলা প্রশাসন জানায়, বাসস্ট্যান্ড শহরের বাইরে শিমুলিয়ায় সরানো হবে। সেই ঘোষণার জেরে কাজ আর এগোয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Bus Stand Conjested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE