Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হেলমেট জরুরি, নেই হুঁশই

রাজ্যের সর্বত্র হেলমেট পরে বাইক চালানো সুনিশ্চিত করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।নির্দেশ দিয়েছেন, হেলমেট ছাড়া বাইকের তেল মিলবে না। মফস্সলে সে নিয়মের প্রয়োগ নেই। উল্টে, শহরের রাস্তায় যে সব মোটরবাইকের ছড়াছড়ি, তার প্রায় সব সওয়ারিরই হেলমেট নেই।

আমার মাথা ফাঁকা। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই অবাধে সাঁইথিয়ার রাস্তায় যাতায়াত হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীদের। ছবি: অনির্বাণ সেন

আমার মাথা ফাঁকা। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই অবাধে সাঁইথিয়ার রাস্তায় যাতায়াত হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীদের। ছবি: অনির্বাণ সেন

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০২:১৭
Share: Save:

রাজ্যের সর্বত্র হেলমেট পরে বাইক চালানো সুনিশ্চিত করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।নির্দেশ দিয়েছেন, হেলমেট ছাড়া বাইকের তেল মিলবে না। মফস্সলে সে নিয়মের প্রয়োগ নেই। উল্টে, শহরের রাস্তায় যে সব মোটরবাইকের ছড়াছড়ি, তার প্রায় সব সওয়ারিরই হেলমেট নেই। এমনকী স্ত্রী, সন্তানদের মাথার দামও নেই বাইক আরোহীদের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথা রাখতে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়েছে রাজ্যের বহু জেলায়। শুরু হয়েছে মোটরবাইক আরোহীদের হেলমেট পরা নিয়ে ধর পাকড় এবং নজরদারি। কোথাও কোথাও মোটরবাইক চালক তো বটেই পিছনে বসা আরোহীরও যদি হেলমেট না থাকে, তাহলেও কোনও পাম্পে পেট্রোল মিলছে না। পুলিশি চোখরাঙানিতেই হোক বা আইন মানার ব্যাপারে বিবেকের তাড়নাতেই হোক নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকেই পাম্প মালিকরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। পাম্প কর্মীরা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল।’’ তাই সেই সব জেলার পাম্পে তেল না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক মোটরবাইক আরোহীকে। কিন্তু, এ সবের ব্যতিক্রম বীরভূম! হেলমেট নিয়ে মঙ্গলবারও কোনও হেলদোলই দেখা গেল না সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট, সাঁইথিয়ায়!

কিছুই তো হল না

সিউড়ির বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পেট্রল পাম্পে ২০০ টাকার তেল ভরতে আসার আগেও কুন্ঠায় ভুগছিলেন এক যুবক। তিনি ভাবছিলেন, মাথায় হেলমেট নেই। পেট্রল মিলবে তো? কিন্তু বিনা প্রশ্নে বাইকে পেট্রল নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন যুবক! জিজ্ঞেস করতে বললেন, ‘‘কাল টিভিতে দেখছিলাম অন্য জেলায় পাম্পে ধরপাকড় চলছে হেলমেট না থাকলে। এখানে তো কিছুই হল না।’’

নিরাপত্তা দেবে কে?

একই দৃশ্য সিউড়ি, দুবরাজপুর-সহ একাধিক পেট্রল পাম্পে। হেতমপুরের এক পাম্প মালিক বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ শুনেছি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনও নির্দেশিকা আসেনি। আসলে পুলিশ পাহারা ছাড়া ওই নিয়ম কার্যকর করা শুধু মাত্র পাম্পমালিকদের পক্ষে কষ্টকর। কেউ হেলমেট ছাড়া তেল নিতে এসে বাধা পেয়ে যদি ঝামেলা পাকায় তখন পাম্প কর্মীদের কে নিরাপত্তা দেবে?’’

হেলমেট ছাড়াই পেট্রোল বিক্রি সিউড়ির পাম্পে।নিজস্ব চিত্র।

মনে পড়ছে

এ দিন বোলপুরে বিকেলে ক্ষুদে পড়ুয়াদের একটি স্কুলে পড়ানোর জন্য, বাইক নিয়ে বেরিয়েছেন মধুমন্তী মণ্ডল। সকালে নিজের পড়াশোনা এবং টিউশন করে, গাড়ির তেল শেষ হয়েছে। শ্রীনিকেতন রাস্তার উপর একটি পেট্রল পাম্পে, তেল ভরতে যান। হেলমেট কোথায়? তাঁর উত্তর, ‘‘হেলমেট ছাড়া পাম্পে গাড়িতে তেল ভরতে অসুবিধে হয়নি তো। মুখ্য রাস্তার ওপর ওঠার পরে অবশ্য মনে পড়েছে, হেলমেটের কথা!’’

জানতামই না

রামপুরহাট শহরের ভিতরে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পেট্রল পাম্পে কিংবা রামপুরহাট ডাকবাংলো মোড় সংলগ্ন পেট্রল পাম্প— দু’ জায়গায়তেই হেলমেট মাথায় নিয়ে তেল কিনতে দেখা গেল কয়েকজনকে। তবে হেলমেট নেই এমন সংখ্যাটাই বেশি। সকাল সাড়ে এগারটো নাগাদ রামপুরহাট ডাকবাংলা পাড়া সংলগ্ন পাম্পে গিয়ে দেখা গেল বৈধড়া থেকে দু’জন বাইক চালিয়ে হেলমেট ছাড়া ১০০ টাকার তেল কিনছেন। পাম্প থেকে বেরোতেই এক বাইক চালক জানালেন, ‘‘হেলমেট! জানতামই না পরতে হয়। এবার হেলমেট পড়েই বাইক চালাব।’’ হেলমেট নেই এমন বাইক আরোহীর সংখ্যা জাতীয় সড়কে বেশি। প্রতি মিনিটে দশ জন!

লিখিত নির্দেশ কই

মহম্মদবাজারের ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে থাকা বা সাঁইথিয়া শহরের মধ্যে থাকা অধিকাংশ পাম্পে এ দিন দেখা গেল বেশিরভাগ বাইক আরহীদের হেলমেট নেই। হেলমেট ছাড়াই তেল দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকার নিষেধ করা সত্বেও হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়ার প্রশ্নে এক পাম্প মালিক বললেন, ‘‘কোনও লিখিত নির্দেশ আসেনি। লিখিত না পেলে কী করে নিয়ম জানব!’’

কারও মাথাতেই নেই হেলমেট। এক ছবি রামপুরহাটেও। নিজস্ব চিত্র।

নিয়ম না মানলে

অন্য জেলায় শুধু নিয়ম বলবৎ করেই ক্ষান্ত থাকছে না প্রশাসন। নিয়মিত নজরদারি করা হবে বলে জানিয়েছে তারা। পেট্রল পাম্পগুলি ঠিকমত আইন কার্যকর করছে কিনা, তা জানার জন্য পাম্পগুলির সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়াও ‘সারপ্রাইজ’ ভিজিট করা হবে। তাতে হেলমেটবিহীন বাইক চালককে ন্যূনতম একশো থেকে তিনশো টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। কিন্তু যে পাম্প থেকে হেলমেট ছাড়া চালককে পেট্রল দিতে দেখা যাবে অভিযোগ হলে ওই পাম্প মালিকের জরিমানা সহ সর্বাধিক দু’বছর জেলও হতে পারে। বীরভূমে অবশ্য এখন এর কোনওটিই শুরু করেনি প্রশাসন।

কী বলছে প্রশাসন?

জেলা পরিবহন আধিকারকি বীরবিক্রম রায় বলেন, ‘‘হেলমেট নিয়ে কোনও নির্দেশিকা এখনও আমাদের হাতে পৌঁছয়নি।’’ একই কথা বলেন, জেলা ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

helmet district unsafe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE