কল্লোলি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র
কল্লোলি প্রাথমিক স্কুলে ১৪ বছর হয়ে গেল মদনবাবুর। তিনি সেখানকার শিক্ষক নন। কিন্তু রোজ কুড়ি কিলোমিটার পথ উজিয়ে স্কুলে যান। খুদেদের পড়ান। সামলান। গান শেখান। তবলা বাজানো শেখান। টাকাকড়ি কিছু নেন না। বছর আটান্নর প্রৌঢ় বলছিলেন, ‘‘আমার বাচ্চাগুলো কাশীপুর বইমেলায় কী সুন্দর গান গাইল। এগুলোই আসল ব্যাপার।’’
যোগটা স্ত্রীর সূত্রে। আদ্রার বাঙালপাড়ার বাসিন্দা মদন চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, কাশীপুর ব্লক সদরের কল্লোলি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন তাঁর স্ত্রী। ২০০৫ সালে পা ভেঙেছিল তাঁর। একা একা চলতে পারছিলেন না। তখন তাঁর সঙ্গে স্কুলে যেতেন মদনবাবুও। ছুটি হওয়া পর্যন্ত বসে থাকতেন। এক দিন প্রধান শিক্ষককে জানান, পড়াতে চান। অনুমতি মিলতেই নেমে পড়লেন।
আর সেই যে নামলেন, আজ চোদ্দো বছর হয়ে গেল রুটিনে ছেদ পড়েনি। বছর পাঁচেক আগে স্ত্রী বদলি হয়ে অন্য স্কুলে চলে গিয়েছেন। কিন্তু মদনবাবু থেকে গিয়েছেন কল্লোলিতে। উচ্চমাধ্যমিকের পরে ব্যবসায় মন দিয়েছিলেন। আদ্রায় তাঁর নিজের একটা দোকান রয়েছে। কিন্তু স্কুলের ‘নেশায়’ এখন তাতে বিশেষ সময় দিতে পারেন না। জানালেন, দোকানের দেখাশোনা করেন এক ভাই। মদনবাবুর স্ত্রী ছবিদেবী বলছিলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক আর স্কুলের থেকে যে সম্মানটা উনি পান, সেটার মূল্য টাকায় হয় না।’’
কল্লোলি প্রাথমিক স্কুলে এখন পড়ুয়া ৭১ জন। শিক্ষক রয়েছেন তিন জন। পড়ুয়াদের পড়া বুঝতে সাহায্য করার পাশাপাশি, আঁকা, গান, বাজনা শেখান মদনবাবু। গত বছরই ঘরের টুকিটাকি দিয়ে রাখি বানানো শিখিয়েছিলেন খুদেদের। ছড়া লেখেন। শিখিয়ে দেন ছেলেমেয়েগুলিকে।
এমন একটা ‘নেশা’ হল কী ভাবে? মদনবাবু বলছিলেন, ‘‘শুধু ভালোবাসার টানেই।’’ জানান, অনেক দিন ধরে স্কুলে যেতে যেতে আলাদা টান তৈরি হয়েছে পড়ুয়াদের প্রতি। আর সেই টানের জন্যই, নিতান্ত শরীর খারাপ না হলে স্কুল কামাই করেননি। কল্লোলি স্কুলে পরিদর্শনে গিয়ে কাশীপুর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক গোপাল বালা দেখে এসেছেন মদনবাবুকে। তিনি বলেন, ‘‘নিজে থেকে কেউ এ ভাবে এগিয়ে এসেছেন, দেখলেও ভাল লাগে।’’ আর কল্লোলি স্কুলের শিক্ষিকা শ্রীময়ী আচার্য বলছেন, ‘‘আজকের দিনে নিঃস্বার্থ ভাবে এমনটা করতে কাউকে বিশেষ দেখা যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy