ক্রেতা: ঘুড়ির দোকানে দুই পড়ুয়া। রবিবার কীর্ণাহারে। —নিজস্ব চিত্র।
আকাশে উড়ছে হরেক রংয়ের ঘুড়ি। হাওয়ায় দুলছে সে সবের ‘লেজ’। মাঠেঘাটে মাঝেমধ্যেই আওয়াজ উঠছে— ‘ভোকাট্টা’।
আকাশ একই। সেই ঘুড়ি ক্রমশ হারাচ্ছে তার নীল থেকে। বিশ্বকর্মা পুজোই কোনও রকমে আঁকড়ে রেখেছে ঘুড়ি ওড়ানোর ঐতিহ্য।
এক সময় কচিকাঁচাদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল ঘুড়ি ওড়ানো। বিশ্বকর্মা পুজো থেকে শুরু হত ঘুড়ির চাহিদা। চলত অগ্রহায়ণ মাসের নবান্ন পর্যন্ত। শহরের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জের দোকানে বিশ্বকর্মা পুজোর আগে থেকেই মিলত রংবেরঙের ঘুড়ি, লাটাই, সুতো।
সে সব দিনের কথা আজও মনে পড়ে ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি ধীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, সাঁইথিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। তাঁরা বলেন— ‘‘বিশ্বকর্মা পুজোর অনেক দিন আগে থেকেই ঘুড়ি ওড়ানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত। হামানদিস্তায় কাঁচ গুঁড়ো করে সাগুদানার আঁঠা দিয়ে আমবাগানে সুতোয় মাঞ্জা পড়ত। তার পরেই শুরু ঘুড়ির লড়াই।’
পুরনো সে সব দিনের কথা বলতে গিয়ে নস্টালজিক হয়ে ওঠেন আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলের শিক্ষক প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায়, সাংস্কৃতিক কর্মী উজ্বল মুখোপাধ্যায়। তাঁদের কথায়— ‘‘ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে অনেক দিন স্কুল কামাই হয়ে যেত। মাঝআকাশে থাকা ঘুড়ি নামিয়ে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করত না। আকাশ ছেয়ে থাকত রংবেরঙের ঘুড়িতে। এখনকার ছেলেমেয়েরা তো মোবাইল আর কম্পিউটার গেমসেই মগ্ন! ঘুড়ি ওড়ানোর সময় তাদের কোথায়।’’ প্রবীণদের বক্তব্য, এখন ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য আগের মতো কষ্ট করতে হয় না। মাঞ্জা দেওয়া সুতো মেলে বাজারে। মেলে প্লাস্টিকের ঘুড়িও।
বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ৩ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয় এক একটি ঘুড়ি। ২০ গুটি মাঞ্জা দেওয়া সুতো সহ লাটাইয়ের দাম ২৩০ টাকা। ৩০-৫০ টাকা দামে লাটাই এবং ১৫ টাকা গুটি দরে আলাদা সুতোও মেলে।
তবুও ঘুড়ি ওড়ানোর প্রবণতা দিনদিন কমছে বলে ঘুড়ি বিক্রেতাদের দাবি। কীর্ণাহারের সুমন্ত সিংহ, রাজু ঘোষ, লাভপুরের অজয় রুজ বলেন, ‘‘প্রতি বছরই ঘুড়ির বিক্রি কমছে। অনেক সময় এক বছর আগের আনা ঘুড়ি, লাটাই পরের বছর বিক্রি করতে হয়। কিন্তু সুতো পচে যায়। লোকসানের আশঙ্কায় আজকাল আরে বেশি করে ওই সব জিনিস রাখি না।’’ এমনই পরিস্থিতির মধ্যেই রবিবার ঘুড়ির দোকানে দেখা গেল নানুরের পরোটার সপ্তম শ্রেণির প্রশান্ত হাজরা, নিমড়ার সায়ন সেন, ময়ূরেশ্বরের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সুবর্ণ দাস, অয়ন মণ্ডলদের। তাঁরা বলল, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়াবো না তা হয় নাকি? ঘুড়ি-লাটাই কেনার জন্য আমরা টাকা জমিয়ে রাখি।’’
কিন্তু অনেক প্রবীণের কথায়, ‘‘হাতেগোণা ঘুড়িতে এখন আর আকাশ ভরে না। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। ভরে না মনও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy