Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
TMC

খাদানে হানা, ‘বাধা’ তৃণমূল নেতার

রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন আগে জেলায় এসে পুরুলিয়ায় বনভূমিতে পাথর খাদান বন্ধের ব্যাপারে ‘টাস্ক ফোর্স’ নজরদারি চালাবে বলে জানিয়ে গিয়েছেন।

বরাবাজারের বাঁশবেড়া পঞ্চায়েতের শাঁখারি গ্রামের কাছে একটি খাদান থেকে পাথর কাটার যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে আধিকারিকদের অভিযানে ‘বাধা’ দেন তৃণমূল নেতা সুদর্শন মাহাতো (সাদা পাঞ্জাবি)। নিজস্ব চিত্র

বরাবাজারের বাঁশবেড়া পঞ্চায়েতের শাঁখারি গ্রামের কাছে একটি খাদান থেকে পাথর কাটার যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে আধিকারিকদের অভিযানে ‘বাধা’ দেন তৃণমূল নেতা সুদর্শন মাহাতো (সাদা পাঞ্জাবি)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও বরাবাজার শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০২:০২
Share: Save:

অবৈধ পাথর খাদান অভিযানে প্রশাসনিক আধিকারিকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের এক ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার বরাবাজারে অবৈধ পাথর খাদান বন্ধে প্রশাসনের দ্বিতীয় দফার অভিযানে এমনই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।

রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন আগে জেলায় এসে পুরুলিয়ায় বনভূমিতে পাথর খাদান বন্ধের ব্যাপারে ‘টাস্ক ফোর্স’ নজরদারি চালাবে বলে জানিয়ে গিয়েছেন। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনও বরাবাজারের অবৈধ পাথর খাদান বন্ধে কড়া মনোভাব নিয়েছে। তার পরেও শাসকদলের ওই নেতার ‘বাধা দান’কে ঘিরে হইচই শুরু হয়েছে।

জেলা সভাধিপতি তথা দলের জেলা বরিষ্ঠ সহ-সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই অবৈধ খাদান বন্ধে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বরাবাজার ব্লক সভাপতি হয়তো নিজের স্বার্থেই ওখানে গিয়েছিলেন। বিষয়টি দলের জেলা সভাপতিকে জানিয়েছি।’’ দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদমন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘ওখানে কী ঘটেছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বিডিও (বরাবাজার) শৌভিক ভট্টাচার্য-সহ বন দফতর, ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং মানবাজার মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকদের একটি দল পুলিশকে নিয়ে বাঁশবেড়া পঞ্চায়েতের শাঁখারি গ্রামের অদূরে একটি অবৈধ খাদানে যান। কাছে পৌঁছতেই দেখা যায়, খাদানের মধ্যে যন্ত্রপাতি নামিয়ে কাজ চলছে। একটি ট্রাক্টরও ছিল। আধিকারিকদের দেখেই লোকজন দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়েন। ফাঁকা হয়ে যায় খাদান।

খাদানের ভিতরে নেমে প্রশাসনের আধিকারিকেরা যখন ট্রাক্টরের চাবি খুলে নিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখছেন, সেই সময় কিছু লোকজনকে নিয়ে সেখানে হাজির হন তৃণমূলের বরাবাজার ব্লক সভাপতি সুদর্শন মাহাতো। তিনি বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও বটে।

অভিযোগ, সুদর্শনবাবু আধিকারিকদের কাছে চিৎকার করে জানতে চান, ‘‘বন দফতর বা খাস জমিতে খাদান চলতে দেওয়া যায় না। কিন্তু ব্যক্তিগত বা রায়তি জমির উপরে কেউ খাদান চালালে তা চলতে দিতে হবে। প্রয়োজনে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। এখনই কত টাকা লাগবে বলুন। এখনি দিতে হবে।’’ তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন দাবি করেন, তাঁরা নিয়মিত জমির খাজনা দিয়ে আসছেন। সুদর্শনবাবু বলেন, ‘‘এখনই জেলাশাসক, পুলিশ সুপারকে এখানে এসে কোনটা বৈধ, কোনটা অবৈধ খাদান তা ঘোষণা করতে হবে।’’ বিডিও তাঁদের বক্তব্য জেলাশাসককে লিখিত ভাবে জানাতে বলেন।

বেশ কিছুক্ষণ বচসা চলার পরে, অভিযান বন্ধ রেখে ফিরে যান আধিকারিকেরা। তবে কিছু যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করা হয়। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘কোনও জমি রায়তি (ব্যক্তি মালিকানার) হলেও মাটির নীচের সম্পদের অধিকার সরকারের। প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে সেই সম্পদ উত্তোলন করা বেআইনি।’’

বিডিও বলেন, ‘‘ওই খাদানে পাথর কাটার কিছু জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে। তা নিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ব্যবস্থা নেবে। ওই জমির মালিকের খোঁজ চলছে।’’ জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘বরাবাজারের এ দিনে ঘটনাটি শুনেছি। যা হওয়ার আইনগত ভাবেই হবে। যাঁরা কাজ করেন বলে দাবি করা হচ্ছে, বিধি মেনে তাঁদের কী কাজের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তা প্রশাসন দেখবে।’’

তবে ওই ঘটনাকে ঘিরে ‘অস্বস্তি’তে পড়েছেন জেলা তৃণমূলের নেতারা। বরাবাজারের বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদ সদস্য সুমিতা সিংহ মল্ল এবং এলাকার তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন বলেন, ‘‘বরাবাজার ব্লক সভাপতি ওখানে গিয়ে যা করেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। দলে আগে থেকে এমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’

সুদর্শনবাবু পরে দাবি করেন, ‘‘বাধা দিতে আমি ওখানে যাইনি। কোন জমিতে খাদান চলবে, কোন খাদান বৈধ, কোনটা অবৈধ— এ সব নিয়ে এলাকায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। লোকজন আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন। সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে জানার জন্যই গিয়েছিলাম।’’ তিনি দাবি করেন, ১২ হাজার মানুষের জীবনজীবিকা খাদানের উপরে নির্ভর করছে। যদিও সুজয়বাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, অত মানুষ কাজ করেন না। যন্ত্র দিয়েই বেশি কাজটা হয়।’’

ঘটনা কানে যেতে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এটা স্পষ্ট হয়ে গেল, খাদান নিয়ে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ লড়াই চলছে। তবে কেউ যদি সরকারি কাজে বাধা দিয়ে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত প্রশাসনের।’’ শান্তিরামবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘বিজেপি ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Stone Mining
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE