Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধ ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির দেহ

দু’টি দেহই ময়নাতদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রুজু হয়েছে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা।

শোকার্ত পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।

শোকার্ত পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

বন্ধ বাড়ি থেকে উদ্ধার হল বৃদ্ধ দম্পতির দেহ। পাশে পাওয়া গেল কীটনাশকের শিশি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠকপাড়ার ঘটনা। মৃতদের নাম অজিতকুমার চৌধুরী (৮৪ ) ও ইরা চৌধুরী (৭৪)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই দু’জন আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। দু’টি দেহই ময়নাতদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রুজু হয়েছে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছিলেন অজিত। থাকতেন পাঠকপাড়ায়। দোতালা বাড়ি। বড় ছেলে মানস চৌধুরী রেলে চাকরির সুবাদে থাকেন চান্ডিলে। মানসের স্ত্রী দীপান্বিতা এবং একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে থাকেন পাঠকপাড়ায়। দীপান্বিতার বাপের বা়ড়ি বিষ্ণুপুরের খড়বাংলা এলাকায়। তাঁর দাবি, বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে গিয়েছিলেন। মেয়ে গিয়েছিল টিউশনে। রাত ৮ নাগাদ বাড়ি ফিরে ডাকাডাকি করেও কারও সাড়া পায়নি। ভিতরে আলোও জ্বলছিল না। দীপান্বিতা বলেন, ‘‘মেয়ে তখনই আমায় ফোন করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে রওনা দিই। রাস্তা থেকে শ্বশুরমশাইয়ের মোবাইলে ফোন করছিলাম। বেজে যাচ্ছিল।’’

দীপান্বিতা জানান, পাঠকপাড়ায় ফিরে দেখেন মেয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে। দরজা বন্ধ। ফোন করলে ভিতর থেকে বেজে যাওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। দরজার কাচ ভাঙা হয়। ভাঙা হয় কোলাপসেবল গেটের তালা। ভিতরে ঢুকে দেখা যায় বৃদ্ধ দম্পতি শুয়ে রয়েছেন। কোনও সাড় নেই। ইরার কষ বেয়ে গ্যাঁজলা গড়িয়ে পড়ছে। খবর যায় বিষ্ণুপুর থানায়।

শুক্রবার বিষ্ণুপুর হাসপাতালে দাঁড়িয়ে অজিতের বড় ছেলে মানস বলেন, ‘‘চার দিন আগে ছুটিতে বাড়ি এসেছিলাম। ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পাইনি।’’ তাঁর দাবি, মাস দুয়েক ধরে ইরা মানসিক অসুখে ভুগছিলেন। বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। বৃদ্ধ দম্পতি বাড়িতেই থাকতেন। কোনও অশান্তি ছিল না।

শুক্রবার পরিজনেরা এসেছেন পাঠকপাড়ায়। অজিতের একমাত্র মেয়ে রীতা বিশ্বাস থাকেন কলকাতার বেহালায়। ছোট ছেলে সুজিত চৌধুরী অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মী। পরিবার নিয়ে থাকেন বাঁকুড়ায়। এ দিন রীতা বলেন, ‘‘এত কী অভিমান? দু’জনে এক সঙ্গে এ ভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।’’

মানস বলেন, ‘‘বাবা খাদ্যরসিক ছিল। নিয়মিত বাজার করত। নিজে রান্না করতে ভালবাসত। খবরের কাগজ আর টিভি ছিল সঙ্গী। মা-র দেখাশোনায় আমার স্ত্রীকে সাহায্যও করত বাবা। নাতি নাতনিদের নিয়ে ভরা সংসার। কী যে হল, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ খবর শুনে হতচকিত পড়শিরাও। পাঠকপাড়ার উমা মাহান্তি বলেন, ‘‘স্বচ্ছল পরিবার। কোনও ঝুট ঝামেলা দেখেনি। গিন্নি বাইরে বেরোতেন না। আজিতবাবু নিয়মিত বাজারে যেতেন। বৃহস্পতিবারই ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে ফিরছিলেন। পথে দেখা হতে কথাও বললেন। বড় নম্র, ভদ্র মানুষ ছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupur Dead body বিষ্ণুপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE