Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কর্মিসভায় নেতাকে সরালেন অনুব্রত

শনিবার সিউড়ি শহর এবং সিউড়ি ১ ব্লকের তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে বুথভিত্তিক কর্মীসম্মেলন ছিল সিউড়ি ইনডোর স্টেডিয়ামে। দলীয় সূত্রে খবর, কর্মিসভা চলাকালীনই সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী অঞ্চলের সভাপতি বিভাস রায়কে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন  দলের জেলা সভাপতি।

নির্দেশ: দলীয় কর্মিসভায়। শনিবার সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

নির্দেশ: দলীয় কর্মিসভায়। শনিবার সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০১:০১
Share: Save:

ভোটের অঙ্কে গত বিধানসভা নির্বাচনে সেখানে পিছিয়ে ছিল দল। তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, তার পরেও কেন সে অঞ্চলে ‘নিয়মিত’ দলীয় বৈঠক হয় না, সেই রোষে অঞ্চল সভাপতিকে সরিয়ে দিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

শনিবার সিউড়ি শহর এবং সিউড়ি ১ ব্লকের তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে বুথভিত্তিক কর্মীসম্মেলন ছিল সিউড়ি ইনডোর স্টেডিয়ামে। দলীয় সূত্রে খবর, কর্মিসভা চলাকালীনই সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী অঞ্চলের সভাপতি বিভাস রায়কে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন দলের জেলা সভাপতি। ওই গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান গৌতম রায়ের সঙ্গে সদ্যপ্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি বিভাস রায়ের কোন্দলের জেরেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জল্পনা ছড়িয়েছে। তবে ব্লক সভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘জেলা সভাপতির পরে আর কোনও কথা চলে না। তবে অঞ্চলে বৈঠক হয় না, এটা সঠিক তথ্য নয়।’’

লোকসভা ভোটের আগে সংগঠন মজবুত করতে এবং দলের বিভিন্ন ‘খামতি’ দূর করতে জেলার প্রতিটি ব্লকে বুথভিত্তিক কর্মী সম্মেলন করছে বীরভূম জেলা তৃণমুল কংগ্রেস। সিউড়ি ১ ব্লক, পুরসভা, প্রতিটি অঞ্চল, বুথের নেতাকর্মীদের নিয়ে শনিবার সম্মেলন ছিল। অনুব্রত ছাড়াও মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, দলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ উপস্থিত ছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য কর্মিসভার মতো এ দিনও কর্মীদের ‘ক্লাস’ নিচ্ছিলেন অনুব্রত। জেনে নিচ্ছিলেন, খামতি কোথায়। কী ভাবে সেই খামতি ঢাকতে হবে, সেই নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেঁধে দিচ্ছিলেন লোকসভা নির্বাচনে অঞ্চলভিত্তিক ‘লিড’ কত হবে, তার লক্ষ্যমাত্রাও।

দলের নেতাদের একাংশ জানান, নগরী পঞ্চায়েতের পালা আসতেই ভিন্ন ছবি। জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ তাঁকে মনে করান, ওই অঞ্চলে গত বিধানসভা নির্বাচনে দল ১ হাজার ২৪৪ ভোটে পিছিয়ে ছিল। তা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই অনুব্রতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘খুব খারাপ অবস্থা নগরীর। দলের নেতারা কেউ কাউকে মানে না। কাজের চেয়ে এদের দলাদলি বেশি। মানুষকে পরিষেবা দেয় না। মানুষের সঙ্গে মেশে না।’’

এর পরেই অনুব্রত প্রশ্ন করেন, ‘‘গৌতম এসেছে (প্রধান গৌতম রায়)?’’ গৌতমবাবু উঠে দাঁড়ান। অনুব্রত প্রধানের উদ্দেশে বলেন, ‘‘সেই জন্য তোকে প্রধান করেছি। এ বার কী হবে?’’ উত্তরে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ঠিকই আছে। তবে কিছু অসুবিধা রয়েছে। নিয়মিত অঞ্চল কমিটির বৈঠক ঠিক ভাবে হয় না। এটা বাস্তব কথা।’’ অনুব্রত তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘অঞ্চলে মিটিং কটা হয়?’’ উত্তর আসে, ‘‘দু-তিন মাস পর পর একটা।’’ এ কথা শোনার পরে নগরীর অঞ্চল সভাপতি বিভাস রায় ও কয়েক জন বুথ সভাপতি উঠে দাঁড়িয়ে বলার চেষ্টা করেন নিয়মিত বৈঠক হওয়ার কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যেই মতান্তর দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনুব্রতের নির্দেশ— ‘‘অঞ্চল সভাপতিকে সরাও।’’

অপসারিত অঞ্চল সভাপতি বিভাসবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি ১৯৯৮ সাল থেকে দল করি। দলের একনিষ্ঠ কর্মী। দলের কাজ চালিয়ে যাব। জেলা সভাপতি যা নির্দেশ দিয়েছেন, সেটা মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে যে বিতর্কের জন্য আমাকে সরানো হয়েছে, সেই বৈঠক কিন্তু নিয়মিতই হয়ে থাকে। কেন প্রধান এমন মন্তব্য করলেন সেটা তিনিই ভাল বলবেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের হয়ে ভোট করেছিলাম আমি, প্রধান নন।’’ নগরীর প্রধান গৌতমবাবু বলেন, ‘‘কর্মিসভায় জেলা সভাপতির সামনে যা বলার বলেছি। তার বাইরে আর মন্তব্য করব না।’’

কর্মিসম্মেলনে এ দিন উঠে এসেছে সিউড়ি পুরশহরে জলকষ্টের প্রসঙ্গও। সিউড়ির কয়েকটি ওয়ার্ডে ভোটের ‘মার্জিন’ কম কেন? সেই প্রশ্নে উঠে আসে জলের সমস্যা এখনও পুরোপুরি না মেটার কারণই।

এ দিকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উদ্ভুত উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিকে তোপ দাগতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে এ দিন সোনা গিয়েছে অনুব্রতের কথাতেও। তিনি বলেছেন, ‘‘যুদ্ধ যুদ্ধ আওয়াজ, ফাঁকা আওয়াজ। কয়েক দিন অপেক্ষা করুন। সত্যিটা সামনে আসবে। তখন বলব।”

গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিউড়ির ইনডোর স্টেডিয়াম থেকেই দলের মহিলাকর্মীদের মানুষের সঙ্গে নিবিঢ় জনসংযোগ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের জেলা সভাপতি। এ বারও সেই একই সুরে অনুব্রত মহিলাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন , ‘‘আপনারা অমানুষিক পরিশ্রম করেন। তবে আরও একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে এ বার। প্রতিটি বাড়িতে যেতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে। কারণ এ বারের নির্বাচন সবটাই মিথ্যা আর ভাওতাবাজিতে চলছে।’’ পরে অনুব্রত বলেন, ‘‘মহিলারা প্রতি বাড়ির রান্নাঘরে পৌঁছে যেতে পারেন। যেটা পুরুষেরা পারবেন না।’’

এ দিন সিউড়ির পরে রাজনগর ব্লকে বুথভিত্তিক কর্মী সম্মেলন হয় চন্দ্রপুরে। তবে ব্লকে সংগঠন যথেষ্ট ভাল জায়গায় থাকার কথা বলে কর্মীদের লিড বাড়ানোর পরামর্শ ছাড়া তেমন কিছু বলেননি অনুব্রত।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূমে যে সব এলাকায় বিরোধীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন, সেই তালিকায় ছিল রাজনগর ব্লকও। কিন্তু পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি— সব জায়গায় জয়ী হয় তৃণমূলই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Workshop Anubrata Mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE