Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
চমকপ্রদ উত্থান কাজলের, ধৃত আরও ৫

আনাজের ব্যবসায়ী আজ বালি-নিয়ন্ত্রক

পুলিশের দাবি, বোমা-কাণ্ডের পরপরই যে চার জনকে ধরা হয়েছিল, তারা প্রত্যেকেই  ময়ূরাক্ষীর বাঁশজোড় বালিঘাটের সঙ্গে যুক্ত এবং বোমাবাজির কথা কবুল করেছিল।

 কোর্টে কাজল শাহ। নিজস্ব চিত্র

কোর্টে কাজল শাহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫২
Share: Save:

জেলাশাসকের বাংলোয় বোমাবাজির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার রাতেই গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল নেতা কাজল শাহ এবং তাঁর চার সঙ্গী। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে তিলপাড়া ব্যারাজের পলিটেকনিক কলেজের কাছাকাছি এলাকা থেকে আরও পাঁচ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছে ২২টি তাজা বোমা মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। এই পাঁচ জনও কাজলের সঙ্গী বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কাজলের বাড়ি যে এলাকায়, সেই বাঁশজোড়েরই বাসিন্দা ধৃত পাঁচ জন। সব মিলিয়ে বোমাবাজির ঘটনায় মোট ১৫ জন গ্রেফতার হলেন।

পুলিশের দাবি, বোমা-কাণ্ডের পরপরই যে চার জনকে ধরা হয়েছিল, তারা প্রত্যেকেই ময়ূরাক্ষীর বাঁশজোড় বালিঘাটের সঙ্গে যুক্ত এবং বোমাবাজির কথা কবুল করেছিল। ধৃতেরা পুলিশকে জানিয়েছিল, অবৈধ ভাবে বালি মজুত নিয়ে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর কড়া অবস্থানের জন্য বালি কারবার প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই রাগেই হামলা। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে বালি কারবারের ‘নিয়ন্ত্রক’ কাজল ও তাঁর সঙ্গীদের নাম সামনে আসে।

বর্তমানে কোনও পদে না থাকলেও, ২০১৩ থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত সিউড়ি ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলানো কাজল শাহের গ্রেফতারি এক দিকে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, অন্য দিকে শাসকদলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। বিরোধীদের দাবি, তৃণমূল যে দুষ্কৃতীদের দ্বারা পরিচালিত, এই গ্রেফতারিই তার নমুনা। শাসকদলের বক্তব্য, পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে, সেটাই প্রমাণ হয়েছে।

কিন্তু, যে চর্চটা চলছে বিভিন্ন এলাকায়, তা হল কে এই কাজল শাহ? বছর কয়েক আগেও সিউড়ি পুরসভার বিপরীতে বসা সামান্য এক আনাজ ব্যবসায়ী কী ভাবে বালি কারবারের নিয়ন্ত্রক হলেন?

তৃণমূলের অন্দরের খবর, এক দশক আগে আনাজ ব্যবসায়ী কাজলকে প্রথম দলে স্থান দেন এক প্রাক্তন বিধায়ক। সেই সময় ময়ূরাক্ষীর বালিঘাটগুলিতে দাপট ছিল সিপিএম মদতপুষ্ট ঘাট মালিকদের। তাঁদের বিরুদ্ধে লড়ে বিশেষ করে আলুন্দা অঞ্চলের সেই ঘাটগুলিতে ক্রমশ নিজের ক্ষমতা বিস্তার করতে থাকেন কাজল। ২০১৩ সালে কাজলকে পঞ্চায়েত সমিতির টিকিট দেয় দল। জিতে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হন। ধীরে ধীরে ওই বিধায়কের সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়তে থাকায় শিবির বদলে সিউড়ি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহের দিকে চলে আসেন কাজল। শাসকদলের নেতা হওয়ার সুবাদে ময়ূরাক্ষীর বালি কারবারের নিয়ন্ত্রকও হয়ে ওঠেন অচিরেই। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বালিঘাটের বৈধ মালিক না হয়ে এবং নদী থেকে বালি তোলায় বিধিনিষেধ জারি হওয়ার পরেও কাজল বালি কারবারে ছেদ পড়তে দেননি।

জাতীয় পরিবেশ আদালেতের নির্দেশে ’১৬ সালেই নদীবক্ষ থেকে ইচ্ছেমতো বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ই-অকশনের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে বালি তোলার অধিকার অর্জন করেন লিজপ্রাপ্তেরা। এর পরে ২০১৭ সালে কাজল শাহ এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে কর্মীদের মারধর, একাধিক বাইক পোড়ানোর মামলা করেন ময়ূরাক্ষী বালিঘাটের এক বৈধ মালিক। কিন্তু কাজলকে ছোঁয়া যায়নি।

২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দের অন্য এক প্রার্থীর জন্য, পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন দিয়েও কাজল টিকিট পাননি। সিপিএম এবং বিজেপির দাবি, ওই নির্বাচনে লোকজন নিয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন আটকে দেওয়ার কাজটা করেছিলেন কাজলই। এ বার তো খোদ জেলাশাসকের বাংলোয় বোমার মারা অভিযোগ! তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, পুলিশ তদন্ত করে কাজলের নাম পেয়েছে জানার পরেই, ব্লক নেতৃত্ব তাঁর গ্রেফতারি এড়ানোর জন্য জেলা নেতৃত্বের কাছে দরবার করেন। কিন্তু অপরাধের গুরুত্ব বুঝে কাজলকে আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তার পরেই ‘গ্রেফতারি’।

এ প্রসঙ্গে বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘এমন অনেক কাজল তৃণমূলে রয়েছে। পুলিশ নিরপেক্ষ হলে তারা ধরা পড়বে।’’ তাঁর মতে, বোমাবাজি যেহেতু জেলাশাসকের বাংলো লক্ষ্য করে হয়েছিল, তাই পুলিশ কাজলকে ধরতে বাধ্য হল। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিত সিংহ বলছেন, ‘‘কাজল এখন কোনও পদে নেই। তবে দলের ঘোষিত নীতি, রং বা পদ দেখে নয়, কেউ অপরাধী হলে রেয়াত করা হবে না। আইন আইনের পথে চলবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পুলিশ নিরপেক্ষ কাজ করে না বলে বিরোধীরা যে অভিযোগ করছেন, তা কতটা অসাড়, কাজলের গ্রেফতারিই সেটা প্রমাণ করল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Bombing DM Bungalow Suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE