Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উড়ল ছাদের শামিয়ানা, আছড়ে মৃত্যু

বোরোর বাসিন্দা শিশির দত্তের থানার পাশেই চায়ের দোকান। সম্প্রতি থানার কাছেই, মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তার ধারে নতুন বাড়ি তৈরি করেছেন। গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে রবিবার সকাল থেকে বাড়িতে নামগান এবং খাওয়াদাওয়ার আয়োজন ছিল।

থই-থই: বাঁকুড়ার রাজগ্রাম-পোয়াবাগান রাস্তা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

থই-থই: বাঁকুড়ার রাজগ্রাম-পোয়াবাগান রাস্তা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোরো শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৭
Share: Save:

হাওয়ার দাপটে বারে বারে নিভে যাচ্ছিল প্রদীপ। তার পরেও ন্যাড়া ছাদে চলছিল সংকীর্তন। একটা সময়ে হুড়মুড়িয়ে এল ঝড়। শামিয়ানা সমেত আছড়ে নিয়ে গিয়ে ফেলল মাটিতে। মৃত্যু হল এক জনের। মেয়েদের নিয়ে ছাদ থেকে গড়িয়ে নীচে পড়েছিলেন দুই মা-ও। মেয়েরা বরাত জোরে রক্ষা পেয়েছে। মায়েরা গুরুতর জখম। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ পুরুলিয়ার বোরো থানার পাশের ঘটনা।

বোরোর বাসিন্দা শিশির দত্তের থানার পাশেই চায়ের দোকান। সম্প্রতি থানার কাছেই, মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তার ধারে নতুন বাড়ি তৈরি করেছেন। গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে রবিবার সকাল থেকে বাড়িতে নামগান এবং খাওয়াদাওয়ার আয়োজন ছিল। সংকীর্তনের জন্য এসেছিল একটি দল। ঘটনায় মৃত প্রদীপ তন্তুবায় (৪৫) সেই দলেরই অন্যতম সদস্য ছিলেন। তাঁর বাড়ি বোরোর হাটতলায়।

শিশিরবাবুর বাড়িটি একতলা। ন্যাড়া ছাদ। গৃহকর্তার শাশুড়ি চাঁপা দে বলেন, ‘‘রোদের তাপ থেকে বাঁচতে ছাদে শামিয়ানা খাটানো হয়েছিল। সন্ধ্যায় ছাদে সংকীর্তনের আসর বসে। এমন হাওয়া দিচ্ছিল, ধূপটাও জ্বালানো যাচ্ছিল না। বার বার প্রদীপ নিভে যাচ্ছিল।’’ তাঁর দাবি, পরিস্থিতি দেখে তাঁরা সংকীর্তনের লোকজনকে নীচে ঘরের ভিতরে গিয়ে নামগান করতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁরা নামতে চাননি।

শিশিরবাবুর মেয়ে চায়না স্থানীয় স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। সে জানায়, তখন সবে দু’টি গান শেষ হয়েছে। হাওয়ার দাপট দেখে অনেকে নীচে নেমে যাচ্ছিলেন। এমন একটা সময়ে ঝড়ের দাপটে এক দিকের বাঁশ হেলে পড়ে। চায়না বলে, ‘‘সংকীর্তনের দলের এক কাকু উঠে গিয়ে সেটা সোজা করার চেষ্টা করছিলেন। টাল সামলাতে না পেরে বাঁশ আর কাপড় সমেত নীচে পড়ে যান।’’ চায়নার মা রিঙ্কুদেবী তখন ছিলেন এক তলায়। মেয়েকে ডেকে নিয়ে যেতে উপরে উঠে দেখেন, হাওয়ার ঝাপটে সে টলছে। তিনি ছুটে যান। চায়না বলে, ‘‘মায়ের সঙ্গে আমিও গড়িয়ে পড়লাম। পরে দেখি একটা কাপড়ে জড়িয়ে বাঁশ থেকে ঝুলছি। আমার কিছু হয়নি।’’

তবে রিঙ্কুদেবী ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর জখম হয়েছেন। জখম হয়েছেন কাজলি দাঁ নামে তাঁদের এক আত্মীয়াও। কাজলির মা শিবানী দাঁ বোরো বাজারে একটি মণিহারি দোকান চালান। সোমবার দুপুরে নাতনি ন’মাসের দেবীকাকে তেল মাখাচ্ছিলেন তিনি। বলেন, ‘‘কাজলি মেয়েটাকে নিয়ে নামগান শুনতে গিয়েছিল। হাওয়ার দাপটে পড়ে যায়। বাচ্চাটা একটা ঝোপে পড়েছিল। ওর বিশেষ চোট লাগেনি।’’

সংজ্ঞাহীন অবস্থায় জখমদের উদ্ধার করে পুলিশ নিয়ে যায় বোরোর বসন্তপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান, প্রদীপবাবুর মৃত্যু হয়েছে। রিঙ্কুদেবী এবং কাজলিদেবীকে পাঠানো হয় বাঁকুড়া মেডিক্যালে। ছাদ থেকে গড়িয়ে পড়েছিলেন আরও কয়েক জন। তাবে তাঁদের চোট গুরুতর নয়। সংকীর্তন দলের এক সদস্য বলেন, ‘‘হাওয়ার দাপট থেকে রক্ষা পেতে কেউ কেউ ছাদেই শুয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের কিছু হয়নি। যাঁরা উঠে নীচে নামার চেষ্টা করছিলেন, বা বাঁশ ধরে টাল সামলাতে গিয়েছিলেন, তাঁরাই পড়ে যান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Storm Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE