Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাসের ধাক্কায় মৃত্যু, জনরোষে রুদ্ধ সদর

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে সিউড়ি বাসস্ট্যাণ্ড সংলগ্ন সিউড়ি দুবরাজপুর রাস্তার ধারে মোটরবাইক থামিয়ে এক পরিচিতের সঙ্গে গল্প করছিলেন সিউড়ি-১ ব্লকের তিলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রামেশ্বরবাবু।

গতিরোধ: সিউড়িতে অবরোধ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

গতিরোধ: সিউড়িতে অবরোধ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৭
Share: Save:

খয়রাশোলের পর এবার জেলা সদর সিউড়ি। বাসের ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনায়, এবার অবরোধ হল বীরভূমের সদর শহরের প্রধান রাস্তায়। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে সিউড়ি বাসস্ট্যাণ্ডের কাছে রামেশ্বর মুর্মু (৪৭) নামে এক আদিবাসী প্রৌঢ়কে একটি বাস ধাক্কা দেয়। মৃত্যু হয় তাঁর। ওই ব্যক্তি পেশায় পঞ্চায়েত দফতরের কর্মী। শনিবার তাঁর মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণের দাবিতে তির, ধনুক, টাঙ্গি, লাঠি নিয়ে সিউড়ির প্রধান সড়ক অবরোধ করলেন আদিবাসী পুরুষ ও মহিলারা। দিন পনেরো আগেই বাসের ধাক্কায় মৃত এক আদিবাসী যুবকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়ার দাবিতে মৃতদেহ রাস্তায় রেখে খয়রাশোল থানা ঘেরাও করে প্রায় ১২ ঘণ্টা অবরোধ করেছিলেন তিনটি গ্রামের মানুষ। শেষ পর্যন্ত দাবি মানার আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। খয়রাশোলের সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হল সিউড়ি সদরে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে সিউড়ি বাসস্ট্যাণ্ড সংলগ্ন সিউড়ি দুবরাজপুর রাস্তার ধারে মোটরবাইক থামিয়ে এক পরিচিতের সঙ্গে গল্প করছিলেন সিউড়ি-১ ব্লকের তিলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রামেশ্বরবাবু। তাঁর বাড়ি স্থানীয় আবদারপুর আদিবাসী পল্লিতে। সেই সময় খয়রাশোলের বাবুইজোড় সিউড়ি রুটের একটি বাস সিউড়ি বাসস্ট্যাণ্ডে ঢোকার মুখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রামেশ্বরবাবুকে ধাক্কা মেরে ফুটপাথে উঠে পড়ে। মারাত্মক জখম হন তিনি। তাঁকে সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যা নাগাদ মারা যান তিনি। মৃতের পরিবারে উপার্জনের কেউ নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁর পরিজন বা প্রতিবেশীরা। ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়ার দাবিতে শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সিউড়ি বাসস্ট্যাণ্ড সংলগ্ন সমস্ত মূল রাস্তা অবরোধ করেন আদিবাসীরা। এ দিনের অবরোধে পূর্ণ সমর্থন ছিল আদিবাসী সংগঠন গাঁওতারও।

অবরোধকারীদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের বিষয়ে শুক্রবারই বাস মালিকের সঙ্গে তাঁরা বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আলোচনায় না বসে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই পথ অবরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। দিনের ব্যস্ত সময়ে এভাবে আচমকা অবরোধের জেরে নাকাল হন বহু মানুষ। অবরোধ চলাকালীন সিউড়ি বাসস্ট্যাণ্ডে বাস নিয়ে ঢোকার সময় অবরোধকারীদের হাতে এক বাস চালকের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটে এ দিন।

তির, ধনুক, লাঠি টাঙ্গি হাতে অবরোধে ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সের আদিবাসী পুরুষ ও মহিলাদের। তাঁরা জানান, মৃতের তিন জন মেয়ে একটি ছেলে। সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী মারা যাওয়ায় পরিবারটির কি হবে সেই নিয়ে আলোচনা করতেই বাস মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণের আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের দাবি, সাড়া দেওয়া তো দূরের কথা উল্টে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন বাস মালিক। তাই মৃতের অসহায় পরিবারকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়ার দাবিতে উপায় না দেখেই অবরোধের পথে হাঁটতে হয়েছে। তাঁদের শান্ত করতে ছুটে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুবিমল পাল, সিউড়ি থানার আই সি দেবাশিস পন্ডা-সহ পুলিশ আধিকারিকেরা। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয় অশান্তি বাড়ার আশঙ্কায়। শেষ পর্যন্ত বাসমালিক ও বাস কর্মীদের অ্যাসোসিয়েশন এবং আদিবাসীদের প্রতিনিধি ও গাঁওতা নেতা রবীন সরনেরদের সঙ্গে বৈঠক হয়। মৃতের আত্মীয় পরিজনেরা জানান, দীর্ঘ আলোচনার পরে শেষ অবধি দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন মালিক পক্ষ। তারপরেই অবরোধ উঠে যায়।

গাঁওতা নেতা রবীনবাবু বলেন, ‘‘আলোচনায় স্থির হয়েছে সংসার চালানোর জন্য আপাতত ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে মৃতের পরিবারকে। পরে বীমা বাবদ প্রাপ্য টাকা মৃতের পরিবারকে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বাসমালিক সংগঠন ও প্রশাসন।’’ আইএনটিটিইউসির জেলা কমিটির সদস্য রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘সমস্যা মিটেছে। নিশ্চয়ই বাসমালিক ও আদিবাসীদের মধ্যে কথাবার্তার মধ্যে কোথাও একটা অসুবিধা ছিল। তবে এরকম হঠাৎ করে অবরোধ হলে সকলেরই খুব অসুবিধা হয় এটাও মাথায় রাখা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Agitation Death Bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE