Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দ্বিতীয় দফাতেও গণ্ডগোল, বিরোধীদের অপহরণের অভিযোগ

বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধেই অপহরণের অভিযোগ তুলেছে। যদিও বোর্ড গঠনের পরেই তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেন, তাঁরা অপহৃত হননি।

ভাঙচুর: তৃণমূল কর্মী সোমনাথ মিশ্রের Tসেই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

ভাঙচুর: তৃণমূল কর্মী সোমনাথ মিশ্রের Tসেই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৯
Share: Save:

গোলমালের আশঙ্কায় বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএমের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে গিয়ে উঠেছিলেন পুরুলিয়া শহরে। কিন্তু, শেষ রক্ষা হল না। বরাবাজারের ভাগাবাঁধ পঞ্চায়েতের সেই সদস্যদের কয়েকজনকে বোর্ড গঠনের দিন মাঝ রাস্তা থেকে গাড়ি থামিয়ে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা অপহরণ করে নিয়ে গেল বলে অভিযোগ। যার জেরে বৃহস্পতিবার ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে হাজির থাকতে পারলেন না বিরোধীদের নয় সদস্য। সাত সদস্য নিয়েই সেখানে বোর্ড গঠন করল তৃণমূল।

বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধেই অপহরণের অভিযোগ তুলেছে। যদিও বোর্ড গঠনের পরেই তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেন, তাঁরা অপহৃত হননি। বরং তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। শুধু বরাবাজারের ভাগাবাঁধই নয়, বোর্ড গঠনের দ্বিতীয় দিনে অশান্তি হয়েছে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি ও পুরুলিয়া ২ ব্লকের হুটমুড়াতেও।

অপহরণে উত্তাল

ভাগাবাঁধ পঞ্চায়েতে ১৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূল সাত, বিজেপি পাঁচ, কংগ্রেস তিন এবং সিপিএম একটি আসনে জিতেছিল। বরাবাজারে বিজেপির স্থানীয় নেতা মদন গড়াইয়ের দাবি, ‘‘তৃণমূলকে ঠেকাতে বিরোধীরা এক কাট্টা হয়ে বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পাছে তাঁদের বোর্ড গঠনের দিন আটকে দেওয়া হয়, সে জন্য বুধবার রাতে পুরুলিয়া শহরে রাখা হয়।’’

তাঁদের নিয়ে এ দিন সকালে গাড়িতে সাত সদস্যকে নিয়ে ভাগাবাঁধে ফিরছিলেন বলে দাবি করেছেন বরাবাজার ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ভগীরথ মাহাতো। তিনি জানান, কংগ্রেসের দুই মহিলা সদস্য পারিবারিক সমস্যার জন্য পুরুলিয়ায় যেতে পারেননি। তাঁদের সরাসরি পঞ্চায়েতে যাওয়ার কথা ছিল। সকাল ৮টা নাগাদ পুরুলিয়া মফস্সল থানার শুকলাড়া জঙ্গলের কাছে দু’টি গাড়িতে করে মুখঢাকা অবস্থায় জনা কুড়ি দুষ্কৃতী পিস্তল নিয়ে এসে তাঁদের গাড়ি আটকে দেন।

ওই গাড়িতে থাকা বিজেপি সদস্য বিমলা হাঁসদার অভিয়োগ, ‘‘দুষ্কৃতীরা আমাদের গাড়ি থেকে টেনে নামায়। ভোটে জেতার শংসাপত্র ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। আমাকে ও কংগ্রেসের এক মহিলা সদস্যকে নামিয়ে দিয়ে বাকি পাঁচ সদস্য ও ভগীরথবাবুকে নিয়ে দুষ্কৃতীরা পালায়।’’ বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্য রামজীবন মাহাতো দাবি করেন, ‘‘থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়।’’

প্রতিবাদে বিরোধী দলগুলির কর্মীরা বরাবাজার-পুরুলিয়া রাস্তায় টকরিয়া গ্রামের মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন। ভাগাবাঁধ পঞ্চায়েত অফিসেও বিক্ষোভ চলে। বোর্ড গঠনে যোগ দেননি বিরোধী দলের বাকি সদস্যেরা। পরে বিডিও (বরাবাজার) শৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সাত সদস্য উপস্থিত হওয়ায় কোরাম হয়েছে। বাকি সদস্যেরা উপস্থিত হননি। তৃণমূলের প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।’’

বিকেলে ভগীরথবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পুঞ্চার কিসান মান্ডিতে নিয়ে গিয়ে সবার হাতে তৃণমূলের পতাকা ধরায়। কোনওরকমে আমরা পরে সেখান থেকে পালিয়ে আসি।’’ তা অস্বীকার করে জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো দাবি করেন, ‘‘অপহরণের অভিযোগ ঠিক নয়। ভাগাবাঁধ পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যরা নিজেরাই আমাদের স্থানীয় কর্মীদের কাছ থেকে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে দলবদল করেছেন।’’ যদিও জেলা বিজেপি সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘ওঁরা যদি দলবদল করতেন, তাহলে অনেক আগেই তা করতে পারতেন। ওদের জবরদস্তি করে পতাকা ধরানো হয়েছে। এটাকে দলবদল বলে না।’’

আক্রান্ত নেতা

বোর্ড গঠনের জন্য দলের জয়ী সদস্যদের নিয়ে যাওয়ার পথে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েতের কাছে বিজেপির হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুললেন তৃণমূল নেতা সোমনাথ মিশ্র। তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর ও গাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। রঘুনাথপুরের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছে। হামলার অভিযোগে পরে পুলিশ বিজেপির নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচিত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ গিয়ে তৃণমূল সদস্যদের উদ্ধার করে। ওই পঞ্চায়েতে সংখ্যা গরিষ্ঠ থাকায় বিজেপিই বোর্ড গঠন করেছে। সোমনাথবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সম্প্রতি পাড়ায় সভা করতে এসে বদলা নিতে উস্কানি দিয়ে যান। তাতেই আমার উপরে হামলা হল।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘নতুনডিতে যা ঘটেছে, তা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের। আমাদের কর্মীরা জড়িত নন।’’

ব্যালটে গন্ডগোল

পুরুলিয়া ২ ব্লকের হুটমুড়া পঞ্চায়েতে ১১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল চার ও বিজেপি সাতটি পেয়েছিল। পরে বিজেপির এক জন তৃণমূলে যোগ দেন। তারপরেও বিজেপি সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিল। কিন্তু, এ দিন প্রধান নির্বাচনের ভোট পর্বের সময় বিজেপির এক সদস্য তাঁকে ভুল ব্যালট পেপার দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। বিজেপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিবেক রঙ্গার অভিযোগ, ‘‘ব্লক অফিসের এক আধিকারিক ব্যালট পেপার পাল্টে দেননি। তা নিয়ে বচসার জেরে আমাদের ওই সদস্য শেষ পর্যন্ত ভোট দেননি।

তাতে দু’দল সমান হয়ে যাওয়ায় প্রশাসন টসে কারচুপি করে পঞ্চায়েতটি তৃণমূলকে পাইয়ে দেয়।’’ এর প্রতিবাদে বিজেপি কর্মীরা কিছুক্ষণ পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০এ জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধ উঠলেও ভিড়ের জেরে রাস্তা আরও ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। বিবেকবাবু জানান, তাঁরা আদালতে যাবেন। মহকুমাশাসক (পুরুলিয়া সদর) প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমাকে কেউ অভিযোগ করেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE