নিয়মের গেরোয় পড়ে পুরো জল প্রকল্পের দায়িত্ব পাচ্ছে না আদ্রার বেকো পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতের দাবি, জল প্রকল্পের পাইপলাইনের সমস্ত দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) সিভিল বিভাগ থেকে পঞ্চায়েতের হাতে দেওয়া হলেও পাম্প হাউস সংক্রান্ত দায়িত্ব দফতরের মেকানিক্যাল বিভাগ পঞ্চায়েতকে দেয়নি। ফলে বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া ও গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন পাড়ায় স্ট্যান্ড পোস্টের সংখ্যা বাড়ানোর কাজ করে ওঠা যাচ্ছে না। এমনকী ওই প্রকল্পের চারটি পাম্পের মধ্যে তিনটি গত তিন মাস ধরে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। বেকো পঞ্চায়েতের প্রধান কাজল ভট্টাচার্যের দাবি, পাম্প মেরামতির জন্য পিএইচই-র কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। আর পাম্প হাউসের দায়িত্ব না পাওয়ায় মেরামতির কাজ করতে পারছেন না তাঁরাও।
গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জলপ্রকল্পগুলি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের হাতে তুলে দেবে, চলতি বছরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই প্রেক্ষিতে কাশীপুর ব্লকের একটি জল প্রকল্প কাশীপুর ও বেকো পঞ্চায়েতেকে দেওয়ার কথা দফতরের। দ্বারকেশ্বর নদের ওই জল প্রকল্প থেকে কাশীপুর ও বেকো পঞ্চায়েতে জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে একটি জলপ্রকল্প থেকেই দু’টি পঞ্চায়েতে জল সরবরাহ হওয়ায়। ওই পাম্প হাউসের দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর (মেকানিক্যাল বিভাগ) কোনও একটি পঞ্চায়েতকে দিতে চাইছে না।
আদ্রার বেকো পঞ্চায়েত এলাকার একটা বড় অংশ শহরাঞ্চল। কিন্তু ওই এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে জলের সমস্যা রয়েছে। মাটির অনেক নীচে রয়েছে জলস্তর। নলকূপে সহজে জল ওঠে না। এলাকার বাসিন্দারা পরিষেবা কর দিয়ে বাড়িতে জল সংযোগ নিতে চান। কিন্তু পুরো জল প্রকল্পের দায়িত্ব হাতে না আসায় সেই সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করছে পঞ্চায়েত।
কয়েক মাস আগেই বেকো পঞ্চায়েতকে এই প্রকল্পের পাইপ লাইন সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব দিয়েছে পিএইচই-র সিভিল বিভাগ। পঞ্চায়েত প্রধান কাজলবাবু বলেন, ‘‘আমরা অর্ধেক দায়িত্ব পেয়ে বসে আছি। পাইপ লাইনের দায়িত্ব পেলেও পাম্প হাউসের দায়িত্ব না পাওয়ায় পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়িতে জলের সংযোগ দিতে পারছি না।’’ তিনি জানান, জল প্রকল্প থেকে দিনে দু’বার জল সরবরাহ করার কথা। কিন্তু পাম্প খারাপ থাকায় এক বার জল দেওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, পাম্প হাউসের দায়িত্ব হাতে থাকলে সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলতে পারতেন।
তবে পিএইচই-র মেকানিক্যাল বিভাগের পুরুলিয়ার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত দত্ত বলেন, ‘‘কাশীপুরের জল প্রকল্পের বিকল হয়ে পড়া পাম্পগুলি মেরামত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ দ্রুত সেগুলি চালু হয়ে যাবে বলে তাঁর আশ্বাস। কিন্তু একটি প্রকল্প থেকে দু’টি পঞ্চায়েতকে জল সরবরাহ করা হলে সেই পাম্প হাউসের দায়িত্ব নিয়ম মাফিক পঞ্চায়েতের হাতে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের হাতে প্রকল্প হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দফতরের নির্দেশ রয়েছে। সেখানেই বলা হয়েছে এ ক্ষেত্রে পাম্প হাউসের দায়িত্ব পিএইচই-র হাতেই রাখতে হবে।” একটি পঞ্চায়েতের হাতে পাম্প হাউসের দায়িত্ব গেলে সেই পঞ্চায়েত নিজের এলাকায় বেশি জল সরবরাহ করতে পারে, বঞ্চিত হতে পারে অন্য পঞ্চায়েত— এই আশঙ্কা থেকেই এমন বন্দোবস্ত বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে কাশীপুরের ক্ষেত্রে পাম্প হাউসের দায়িত্ব বেকো পঞ্চায়েতের হাতে দেওয়ার বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত বিভাগের স্থায়ী সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘কাশীপুর জল প্রকল্পের পাম্প হাউসের দায়িত্ব স্থানীয় ভাবে পঞ্চায়েতের হাতে থাকলেই সুবিধা হয়। আমরা পাম্প হাউসের দায়িত্ব বেকো পঞ্চায়েতকে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে পিএইচই-র মেকানিক্যাল বিভাগের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
সমিতির পাঠানো প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছন প্রশান্তবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষর কাছ থেকে নির্দেশ পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ততদিন পাম্প হাউসের দায়িত্ব আমাদের হাতেই থাকবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy