Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মানবাজারে জমছে আবর্জনা, সাফ করবে কে

মহকুমা হওয়ায় একসময়ে শহর গড়ে উঠবে, এই আশায় গ্রামাঞ্চল থেকেও অনেকে এখানে এসে বাড়ি তৈরি করছেন। সেই সঙ্গে বাসিন্দাদের ফেলে দেওয়া আবর্জনার পরিমাণও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। এতে পচনশীল এবং অপচনশীল জিনিসপত্র দুই রয়েছে। 

দূষণ: রাস্তার ধারে এ ভাবেই নোংরা ফেলেন অনেকে। নিজস্ব চিত্র

দূষণ: রাস্তার ধারে এ ভাবেই নোংরা ফেলেন অনেকে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৯
Share: Save:

মহকুমা সদরের স্বীকৃতি এসেছে। কিন্তু, পুরসভায় উন্নীত হয়নি। ফলে পঞ্চায়েত এলাকার অধীন থেকেও মহকুমা সদর হওয়ায় ক্রমশ বসতি বেড়ে চলেছে মানবাজারে। সে তুলনায় নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো গড়ে না ওঠায় নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে এখানে। তার মধ্যে যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ চিন্তা বাড়িয়েছে বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, এর ফলে মহকুমা সদরে দূষণ বাড়ছে।

দক্ষিণ পুরুলিয়ার মুখ্য বাজার মানবাজার। পঞ্চায়েত এলাকা হলেও কয়েক বছরের মধ্যে প্রচুর বাড়িঘর তৈরি হওয়ায় জনসংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজের সূত্রে আসা অনেকেই বাড়ি করে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গিয়েছেন। আবার মহকুমা হওয়ায় একসময়ে শহর গড়ে উঠবে, এই আশায় গ্রামাঞ্চল থেকেও অনেকে এখানে এসে বাড়ি তৈরি করছেন। সেই সঙ্গে বাসিন্দাদের ফেলে দেওয়া আবর্জনার পরিমাণও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। এতে পচনশীল এবং অপচনশীল জিনিসপত্র দুই রয়েছে।

ফলে পরিচ্ছন্নতা রাখতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা পঞ্চায়েতের। শহরে ইতিউতি জঞ্জালের স্তূপ দেখে ইতিমধ্যে বাসিন্দাদের একাংশ সরব হয়েছেন। মানভূম কলেজের অধ্যাপক প্রদীপ মণ্ডল থেকে কলেজ পড়ুয়া অর্ক দত্ত বলেন, ‘‘মানবাজার মহকুমা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু, সেই তুলনায় নাগরিক পরিষেবার উন্নতি হয়নি। সে কারণে শহরের বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা জমে থাকছে। অথচ সাফাই করা হচ্ছে না। এ বার এ নিয়ে প্রশাসনের একটা পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।’’ বাসিন্দাদের মতে, যে হারে আবর্জনার স্তূপ বেড়ে চলেছে, তাতে একটা ডাম্পিং গ্রাউন্ডের প্রয়োজন রয়েছে। যেখানে বাজারের সমস্ত আবর্জনা জমা করা হবে। পরে যন্ত্রের সাহায্যে ওই বর্জ্য সারে পরিণত করা যেতে পারে।

সমস্যার কথা মেনেছেন বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকারও। তিনি বলেন, ‘‘শহর যে ভাবে বাড়ছে, তাতে একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সত্যিই দরকার আছে। এ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা জমির সন্ধানে আছি।’’

ইতিমধ্যে মানবাজার পঞ্চায়েত কয়েকটি এলাকায় ময়লা সাফাইয়ের কাজ শুরু করেছে। প্রাক্তন প্রধান বর্তমানে মানবাজার পঞ্চায়েতের সদস্য নিতাই দত্তর দাবি, ‘‘প্রায় দেড় দশক আগে থেকে আমরা জঞ্জাল বহন করার একটি ঠেলাগাড়ির ব্যবস্থা করেছি। কয়েকজন অস্থায়ী কর্মীও রয়েছেন। তাঁরা পাড়ায়-পাড়ায় ঝাঁট দিয়ে আবর্জনা গাড়িতে তুলে বাইরে ফেলে আসেন। স্থানীয় দোকানদার ও বাসিন্দাদের কাছ থেকে তাঁরা এ জন্য মাসে সামান্য টাকা নেন। কিন্তু শহর যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এই পদ্ধতি যথেষ্ট নয়।’’

তিনি জানান, বিগত পঞ্চায়েতের সমস্ত সদস্য এক মত হয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ঠিক হয়, প্রথমে মানবাজার সদরের সমস্ত বাড়ির (পাকা এবং কাঁচা ) সংখ্যা তালিকাভুক্ত করা হবে। তারপরে শহর আবর্জনা মুক্ত করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, তার খরচ কী ভাবে আসবে, এ নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশকে সঙ্গে নিয়ে প্রস্তাব চাওয়া হবে। পাকা ভ্যাটের পরিবর্তে বিভিন্ন পাড়ায় পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য রাখার জন্যে লাল এবং সবুজ রঙের ড্রাম রাখার পরিকল্পনাও রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর ওই ময়লা তুলে নিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা হবে।

জয়েন্ট বিডিও (মানবাজার) অপূর্ব কর্মকার বলেন, ‘‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্যে খাস জমির প্রয়োজন। এ জন্য ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গেও কথা চলছে। নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেললে দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কাও থাকবে না।’’ কিন্তু, ময়লা তুলে নিয়ে যাবে কে? সেই খরচ আসবে কোথা থেকে?— প্রশ্ন তুলেছেন পঞ্চায়েতের সদস্যেরা।

পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, নিকাশি সংস্কার-সহ রাস্তায় আলো দেওয়ার মতো কাজে পঞ্চায়েতে আলাদা ভাবে আর্থিক সংস্থান থাকে না। তবু বাসিন্দাদের সমস্যার কথা ভেবে পুজো অথবা বিশেষ সময়ে নিকাশি সংস্কার করা হয়। বাল‌্‌বও পাল্টে দেওয়া হয়। এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েতে গৃহ কর ব্যবস্থা চালু নেই। বছরে ট্রেড লাইসেন্স থেকে কিছু টাকা আসে। তাতে এই ধরনের খরচের সংস্থান হয় না।’’

বিডিও-র আশ্বাস, ‘‘ময়লা তোলার কাজের টাকার সংস্থান কী ভাবে হবে, তা ঠিক করতে সবাইকে নিয়ে আলোচনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE