বাঁকুড়া ইঁদারাগড়া। নিজস্ব চিত্র।
শহরের ভিতরে সরু রাস্তায় এমনিতেই যানজট নিত্যসঙ্গী। তার উপরে আবার রাস্তার একাংশ জুড়ে পুজো উপলক্ষে পোঁতা বাঁশের খুঁটি, মণ্ডপের কাঠামো।
দুর্গাপুজো শেষ হয়ে লক্ষ্মীপুজোও পেরিয়ে গিয়েছে। প্রায় সব জায়গাতেই মণ্ডপ খোলার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, সাধারণ মানুষজনের অভিযোগ, রাস্তা দখল করে যে সমস্ত কাঠামো তৈরি হয়েছিল, সেগুলি খোলার ব্যাপারেই গা ছাড়া মনোভাব দেখা যাচ্ছে অনেক উদ্যোক্তার। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুজো কমিটি, এমনকী প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও।
বাঁকুড়া শহরের বহু রাস্তার উপরেই পুজো উপলক্ষে দেওয়া বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপন, আলোকস্তম্ভ এখনও রয়ে গিয়েছে। এর ফলে যানজট যেমন হচ্ছে, তেমনই আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে দুর্ঘটনারও। শহরের কাটজুড়িডাঙা ইলেক্ট্রিক সাবস্টেশন মোড় এলাকায় রাস্তার উপরে, দু’পাশেই পুজো কমিটির গড়া বাতিস্তম্ভ এখনও খোলা হয়নি। ওই রাস্তা দিয়ে গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলার বিভিন্ন রুটের বাস বেরোয়। চলাচল করে ভারি যানবাহন। এমনতিতেই রাস্তাটি বেশ যানজটপ্রবণ। এই ঘটনার জেরে রাস্তার একাংশ দখল হয়ে গিয়ে সমস্যা আরও বেড়েছে। শহরের বাসিন্দা দেবদাস বিশ্বাস, পরেশ মালাকারদের অভিযোগ, “রাস্তার দু’পাশে বাঁশের খুঁটির জন্য পারাপারে খুব সমস্যা হচ্ছে। রাস্তায় যানজট হচ্ছে। পুজোর পরেই এগুলি খুলে নেওয়া দরকার ছিল। অথচ পুজো কমিটি বা প্রশাসন কেউই উদ্যোগী হচ্ছে না।” লালবাজার এলাকায় রাস্তার পাশে এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে পুজোর আলোর তোরণ। বাঁকুড়া শহরে ঢোকার এটিই মূল রাস্তা। সেখানে যানজটের সমস্যা হচ্ছে। ইঁদারাগড়া হরেশ্বরমেলাতেও পুজোর অস্থায়ী আলোর স্তম্ভ এবং বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং-এর খুঁটি রয়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে, বিষ্ণুপুর পুরশহরের অবস্থাও কার্যত এক। শহরের রবীন্দ্রস্ট্যাচু মোড়ে রাস্তা জুড়ে রয়ে গিয়েছে তোরণের কাঠামো। পুজোর ছুটিতে বহু পর্যটক বেড়াতে এসেছেন বিষ্ণুপুর শহরে। যানজটে ফেঁসে নাকাল হচ্ছেন তাঁরা। আরামবাগ থেকে সপরিবার বিষ্ণুপুর বেড়াতে আসা আশালতা সরকার বলেন, “বেড়াতে এসে প্রায়ই যানজটের মুখে পড়ছি। কোথাও রাস্তার উপরে খুঁটির জন্য পাশ কাটিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না, কোথাও আবার সরু রাস্তায় গাড়ি আটকে যাচ্ছে।” বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে স্টেশন যাওয়ার পথে, ঝাঁপড় মোড়ে রয়ে গিয়েছে তোরণের কাঠামো। বিষ্ণুপুর স্টেশনে ঢোকার রাস্তার উপরেই হয়েছে লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপ। এর ফলে স্টেশনে ঢোকার রাস্তায় যানজট হচ্ছে। রাস্তায় মণ্ডপ করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাওয়া হলে পুজোর উদ্যোক্তা বিষ্ণুপুর স্টেশন লক্ষ্মীমাতা ষোলোআনা কমিটির সম্পাদক তথা বিষ্ণুপুর পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তন্ময় ঘোষের জবাব, “আমরা ৫০ বছর ধরে এখানে পুজো করছি। কোনও দিনই কারও অনুমতি লাগেনি। তাহলে এখন কেন নিতে যাব?” তবে যানজট এড়াতে পুজো কমিটির সদস্যেরা ট্রাফিক সামলাচ্ছেন বলে তাঁর দাবি।
জেলার দুই পুরশহরে এই সমস্যা মেটাতে পুরসভা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “শহর জুড়ে মাইক নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। সমস্ত পুজো কমিটিকে দ্রুত খুঁটি সরিয়ে রাস্তা মুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।”
বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় বলেন, “শহরের কোনও এলাকাতেই রাস্তার উপরে বিজ্ঞাপনস্তম্ভ বা মণ্ডপ গড়ার জন্য আমরা ছাড়পত্র দিইনি। দ্রুত যাতে এই সব সরিয়ে ফেলা হয় সেই জন্য শীঘ্রই নির্দেশ দেব।”
পুরুলিয়া শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে মণ্ডপের খুঁটি খুলে ফেলা হয়ছে। তবে শহরের রাঁচি রোডে ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন মোড়ের অদূরে তোরণের খুঁটি এখনও রয়েছে। হাটের মোড়ের অদূরে চাইবাসা রোড। ব্যস্ত রাস্তা। ধারে বাজারও বসে। সেখানে ফুটপাথে খুঁটি পোঁতা। একই ছবি রাজাবাঁধের রাস্তাতেও। পুরুলিয়ার উপ পুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডল জানান, কোথাও রাস্তার উপরে বা ফুটপাথে খুঁটি পোঁতা থাকায় যান চলাচলে অসুবিধার অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। তবে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy