Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষতির ক্ষত সারবে কী করে

সেই একই দুর্ভাবনায় ঘর হারানো বাঁকুড়া জেলার বহু বাসিন্দা। কী করে এই লোকসান সামলে উঠবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।

চেষ্টা: বন্যার জলে ভিজে গিয়েছে মাধ্যমিকের মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও আরও কিছু জরুরি কাগজপত্র। রোদ উঠতেই সে সব শুকোতে ব্যস্ত এক পড়ুয়া। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

চেষ্টা: বন্যার জলে ভিজে গিয়েছে মাধ্যমিকের মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও আরও কিছু জরুরি কাগজপত্র। রোদ উঠতেই সে সব শুকোতে ব্যস্ত এক পড়ুয়া। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৯
Share: Save:

বর্ষায় ভরে যেত বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জোড়। কিন্তু, এক রাতের বৃষ্টিতেই সেই জোড়ই যে ভোল পাল্টে ভয়াল হয়ে উঠবে আঁচ করতে পারেননি কেশিয়াকোলের বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের ব্যবসায়ী প্রহ্লাদ গড়াই। সোমবার সকালে সেই জোড়ের জলের তোড়েই ভেসে গিয়েছে তাঁর বাড়ি ও দোকানের একাংশ। নষ্ট হয়েছে লক্ষাধিক টাকার বৈদ্যুতিন জিনিসপত্র। মাথায় হাত পরিবারের। সেই একই দুর্ভাবনায় ঘর হারানো বাঁকুড়া জেলার বহু বাসিন্দা। কী করে এই লোকসান সামলে উঠবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।

আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হতেই জল নামতে শুরু করেছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। প্রহ্লাদবাবু মঙ্গলবার ভাঙা ঘর থেকে জিনিসপত্র বার করার কাজে হাত দেন। তিনি বলেন, ‘‘গন্ধেশ্বরীর জলে প্রতি বছরই এই এলাকায় বন্যা হয়। আমাদের বাড়ি নদী থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় তেমন সমস্যা হত না। কিন্তু এ বার গন্ধেশ্বরীর সঙ্গে যুক্ত জোড়ের জল তীব্র বেগে এসে ঘর ভেঙেচুরে দিয়ে গেল। সব ধুয়েমুছে নিয়ে গেল। এ বার সংসার চালাব কী করে ভেবে পাচ্ছি না।’’

কেশিয়াকোলের বাসিন্দা বাদল রজক লন্ড্রি চালান নিজের বাড়িতে। নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় তাঁর মাটির বাড়ি ধসে গিয়েছে। চাপা পড়ে নষ্ট হয়েছে বহু জামা-কাপড়। বাদলবাবু বলেন, “কত মানুষের জামা, প্যান্ট বাড়িতে জমা ছিল ইস্ত্রি করার জন্য। সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” তাঁর মেয়ে পূজা রজক বিকনা ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাপীঠের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। এ দিন কেশিয়াকোলে গিয়ে দেখা গেল, জলে ভিজে যাওয়া মাধ্যমিকের মার্কশিট-সহ বিভিন্ন জরুরি সার্টিফিকেট শুকোনোর চেষ্টা করছে সে। পূজা বলে, “প্রতি বছর বন্যা হচ্ছে, অথচ প্রশাসন কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা করছে না বন্যারোধের। আমরা যাব কোথায়?’’

পূজার মতোই পড়াশোনার খাতা, বইপত্র ভেঙে পড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার করে উল্টে পাল্টে দেখছিল কেশিয়াকোলের বাসিন্দা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র দীপ মল্ল।

মঙ্গলবার বিকেলে কেশিয়াকোল এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিলি করে বাঁকুড়া রামকৃষ্ণ মঠ। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের শুকনো খাবার বিলি করা হয়েছে মঠের তরফে। কেশিয়াকোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সোমবার ত্রাণ শিবির চালু করা হয়েছিল। তবে এ দিন দুপুরে ওই শিবিরে কেউ ছিলেন না।

বিডিও (বাঁকুড়া ২) অমরেশচন্দ্র দাস জানান, রাতে ত্রাণ শিবিরে কেউ থাকতে চাইলে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে প্রশাসনের তরফে। বাঁকুড়া রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী কৃত্তিবাসানন্দ বলেন, “আমি বন্যা পরিস্থিতি দেখতে কেশিয়াকোলে গিয়েছিলাম। প্রশাসনের পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মঠও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে।”

বন্যার ভয়াবহতার ক্ষত এখনও মোছেনি বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন জুনবেদিয়া এলাকায়। সোমবারই জুনবেদিয়া জোড়ের জলের তোড়ে উল্টে পড়েছে এলাকার আস্ত একটি দু’তলা বাড়ি। স্থানীয়দের চেষ্টায় রক্ষা পেয়েছেন ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া এক ছাত্রী ও তার মা। মঙ্গলবার দুপুরে সেই বাড়ির ভিতরের জিনিসপত্র বার করার কাজ চালাচ্ছিলেন বাঁকুড়ার দমকল বিভাগের কর্মীরা। তা দেখতে ভিড় করেছিলেন এলাকার মানুষজন।

এই ঘটনার জন্য জোড় খালের ধারে অবৈজ্ঞানিক ভাবে জলের গতিপথ রোধ করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করাকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। ভেঙে পড়া ওই বাড়ির মালিক সুধাংশু মুখোপাধ্যায় অবশ্য এই ঘটনার জন্য জোড় খাল দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না করার কারণকেই দুষছেন।

তাঁর দাবি, “বহু বছর ধরে এখানে বাড়ি তৈরি করে রয়েছি। কোনও দিন এমন পরিস্থিতি হয়নি। ওই জোড় খালটি সংস্কার করার জন্য দীর্ঘ দিন দাবি জানিয়ে আসছি। সংস্কার হলে এই ঘটনা ঘটত না।”

জুনবেদিয়ার পঞ্চায়েত প্রধান ভানু বাউরির দাবি, “জোড়ের সংস্কার করা হয়েছে। তবে বছরভর ওই জোড়ের খাল দিয়ে জল যায় বলে সংস্কার করা যায়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE