Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাথর নিয়ে দাঁতালকে তাড়া

হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে উৎপাত চালাচ্ছিল দলমা থেকে আসা দুই দাঁতাল।

ঘাড়ে-নিঃশ্বাস: সতর্কতা উড়িয়ে হাতির কাছাকাছি চলে গিয়েছেন কিছু গ্রামবাসী। কোড়ামি গ্রামের অদূরে জারার টিলায়। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

ঘাড়ে-নিঃশ্বাস: সতর্কতা উড়িয়ে হাতির কাছাকাছি চলে গিয়েছেন কিছু গ্রামবাসী। কোড়ামি গ্রামের অদূরে জারার টিলায়। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৯
Share: Save:

লোকালয়ে হাজির হল একটি দাঁতাল। জখম করল এক জনকে। আশ্রয় নিল টিলায়। তার পরে জনতার ছোড়া ইটে নাকাল হয়ে ছুটে বেড়াল এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। শনিবার রাত থেকে এ ভাবেই তেতে রইল বান্দোয়ানের চিরুগোড়া। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খেতে হল পুলিশ এবং বন কর্মীদের।

হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে উৎপাত চালাচ্ছিল দলমা থেকে আসা দুই দাঁতাল। ঘুম পাড়ানি গুলিতে কাবু করে বুধবার রাতে দু’টিকে নিয়ে আসা হয়েছিল ময়ূরঝর্না হস্তি প্রকল্পে থাকা বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের বুড়িগোড়ার জঙ্গলে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সারাদিন বুড়িগোড়াতেই ছিল দাঁতাল দু’টি। রাতে ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলের দিকে রওনা হয়। একটি হাতি ঝাড়খণ্ডে চলে গেলেও একটি থেকে যায় বান্দোয়ানেই। শুক্রবার সেটিকে দেখা যায় শিরকার জঙ্গলে। রাতে সেটিকে ঝাড়খণ্ডের দিকে পাঠানো হয়।

সেই হাতিই ফিরে এসেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ। তবে ডিএফও (কংসাবতী দক্ষিণ) অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’টি হাতিকে ঝাড়খণ্ডে পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে কোনওটি ফিরে এল কি না সেই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আশপাড়ার জঙ্গল হয়ে চিরুগোড়ায় হাজির হয় দাঁতালটি। জখম করে অরুণ কর্মকার নামে বছর পঞ্চান্নর এক ব্যক্তিকে। তাঁকে প্রথমে বান্দোয়ান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল, সেখান থেকে আবার বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যেতে হয়েছে। অরুণবাবুর পাঁজরে চোট লেগেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এর পরেই মধুপুর হয়ে বান্দোয়ান শহরে ঢুকে পড়ে হাতিটি। চিলা গ্রামের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আবার বান্দোয়ান বাসস্ট্যান্ডের পাশ দিয়ে ঘুরে জারা টিলায় আশ্রয় নেয় রবিবার ভোরে।

এলাকার মানুষ টের পেতেই ভিড় জমে যায় জঙ্গলের সামনে। এই জঙ্গলে গাছপালা কম। বাইরে থেকে সহজেই হাতিটিকে দেখা যাচ্ছিল। হাতি তাড়াতে পাথর ছোড়া শুরু করেন কেউ কেউ। ঘণ্টা দুয়েক ধরে তেমনটা চলতে থাকে। ঘটনার খবর পেয়ে আসেন বন দফতরের কর্মীরা। কিন্তু বেপরোয়া ভিড়কে সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয় বন কর্মীদের। পাথর বৃষ্টি চলছিল। জঙ্গলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটতে থাকে হাতি। বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের আধিকারিক বিনয়কুমার মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা মাইক নিয়ে বলে, বুঝিয়ে— সমস্ত ভাবে জনতাকে রোখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কিছুতেই তারা কথা শুনছিলেন না।’’ ডিএফও অসিতাভবাবু বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন এই জঙ্গলে হাতি আসেনি। সাধারণ মানুষ হাতিটিকে যে ভাবে বিরক্ত করলেন তাতে অবাক লাগছে।’’

খবর পেয়ে চলে আসে বান্দোয়ান থানার পুলিশ। মাইক নিয়ে জঙ্গল থেকে সরে যেতে বলা হয় সবাইকে। কিন্তু প্রায় দশটি গ্রাম থেকে আসা হাজারেরও বেশি মানুষের ভিড় সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। পাঁচটি বনাঞ্চলের বন কর্মীরা আসেন কিছু ক্ষণ পরেই। আরও পুলিশ আসে। দুপুর তখন প্রায় দেড়টা। এর মধ্যেই বন কর্মীদের সঙ্গে বচসা শুরু হয় এলাকার বাসিন্দাদের। কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। এলাকা ফাঁকা করেন পুলিশকর্মীরা। বিকেলের দিকে হুলা পার্টি হাতিটিকে ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলের দিকে সরানোর চেষ্টা শুরু করেছে।

শেষ পাওয়া খবরে, রবিবার রাতে হাতিটি কোড়ামি গ্রাম হয়ে জামিরার জঙ্গলে গিয়ে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Wild Life
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE