দরজা নেই। চড়িদা গ্রামের কালিন্দীপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়া জেলার পর্যটনের অন্যতম মুখ ছো মুখোশের গ্রাম চড়িদা। উঠোনে-উঠোনে শিল্পীদের ‘স্টুডিয়ো’। কিন্তু অনেকের বাড়িতেই সরকারি প্রকল্পে তৈরি ‘শৌচাগারে’ রাখা রয়েছে জ্বালানি কাঠ। গ্রামের কালিন্দীপাড়ার পুতুল কালিন্দী বলছিলেন, ‘‘বছর দু’য়েক আগে লোকজন এসে ওই ঘরটা বানিয়ে দিয়েছে। গর্তই (প্যান) তো নেই। আমরা এখনও পুকুরের পাড়ে যাই। ঘরটা কাজে লাগে না বলে জ্বালানি রাখি।’’ প্রায় একই অবস্থা গিডু কালিন্দী, কীর্তি কালিন্দীদেরও।
প্রবাদপ্রতিম ছো শিল্পী গম্ভীর সিংহ মুড়ার জন্মভূমি চড়িদার শিল্পীদের প্রায় বছরই ডাক পড়ে দিল্লিতে। প্রজাতন্ত্র দিবসে পৃথিবীর নানা প্রান্তের অভ্যাগতদের তাঁরা পরিচয় করিয়ে দেন নিজেদের কৃষ্টির সঙ্গে। আর দেশবিদেশ থেকে পর্যটকেরাও আসেন তাঁদের গ্রামে। প্রায় সারা বছর। অথচ, সেখানে নেই সাধারণ শৌচালয়। প্রয়োজনে কারও বাড়িতে গিয়ে তাজ্জব হতে হয়েছে অনেক পর্যটককে। পাকা বাড়িতে টেলিভিশন রয়েছে, মোটরবাইক রয়েছে, নেই শুধু শৌচালয়। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে চড়িদা ঘুরতে গিয়ে পর্যটক অর্পিতা সাহার অভিজ্ঞতা, ‘‘ওই গ্রামে গিয়ে ভীষণ নাকাল হতে হয়েছে শৌচালয় পেতে। অনেক খুঁজে শেষ পর্যন্ত এক শিল্পীর বাড়িতে শৌচালয় পেয়েছিলাম।’’
সংশ্লিষ্ট সিঁদরি পঞ্চায়েতের প্রধান সুভাষ কালিন্দীর অবশ্য বক্তব্য, গ্রামে অনেক বাড়িতেই শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, ২০১২ সালে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, চড়িদার ১৯১টি পরিবারের শৌচাগার নেই। তার মধ্যে ৯৫টি পরিবারকে শৌচাগার গড়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও তার মধ্যে অনেকগুলিই ব্যবহারের অযোগ্য বলে অভিযোগ। বিডিও (বাঘমুণ্ডি) উৎপল দাস মুহুরি অবশ্য বলছেন, ‘‘অনেকে শৌচালয় ব্যবহার না করে ফেলে রাখায় বা বাড়তি ঘর হিসেবে ব্যবহার করায় বিশ্বাসী। তার ফলেই এমনটা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, প্রশাসন গ্রামবাসীকে সচেতন করতে চেষ্টা করে চলেছে। জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের আশ্বাস, ‘‘বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’
প্রায় ২,৪০০ ভোটার চড়িদায়। জনসংখ্যা হাজার পাঁচেক। ব্রাহ্মণ, সূত্রধর, আদিবাসী ভূমিজ— নানা সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন। অল্প কয়েকজন চাকরি করেন। কয়েকজন চাষ-আবাদ। সংখ্যাগরিষ্ঠ ছো মুখোশ তৈরির সাবেক পেশা ধরে রেখেছেন। গ্রামের শিল্পী ফাল্গুনী সূত্রধর বলেন, ‘‘পর্যটকেরা মুখোশ কিনতে এসে শৌচালয় না থাকায় সমস্যায় পড়েন। গ্রামের নাম খারাপ হওয়া মানে তো আমাদেরও বদনাম।’’ বিডিও জানাচ্ছেন, যে সমস্ত পরিবারের শৌচাগার নেই, ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে সেখানে শৌচালয় দ্রুত গড়ে দেওয়ার কাজ চলছে। তবে শিল্পীরা চাইছেন, সাধারণ শৌচাগারও বানানো হোক। ব্লক প্রশাসনের দাবি, চেষ্টা করেও জায়গার অভাবে এগনো যায়নি।
পরিস্থিতি এমন যে মুখোশ শিল্পী উত্তম সূত্রধর, দুর্গাদাস সূত্রধর, মনোরঞ্জন সূত্রধরেরা বলেন, ‘‘প্রয়োজনে না হয় আমরাই জায়গার বন্দোবস্ত করে দেব। শৌচাগার হওয়াটা খুব জরুরি। না হলে মুখোশের গ্রামের মুখরক্ষা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy