Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ট্রেনের সময় নিয়ে হতাশ জেলা সদর

রেলের তরফে দাবিপূরণের আশ্বাসও মিলেছিল। কিন্তু তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় দু’বছর। দাবি মেটেনি। রেলের উপরে ক্ষুব্ধ  সিউড়ি ও দুবরাজপুরের বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন— ‘‘উপেক্ষিতই থাকলাম।’’

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৪০
Share: Save:

শহরবাসীর সুবিধার জন্য রেলকর্তার কাছে কয়েকটি আর্জি রেখেছিলেন সিউড়ির বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের মূল দাবিগুলির মধ্যে ছিল— হাওড়াগামী ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে দু’টি সংরক্ষিত কামরা যোগ করা এবং সকাল ১০টার মধ্যে কলকাতা পৌঁছনোর জন্য একটি ট্রেন। একই দাবি ছিল দুবরাজপুর পুর শহরের বাসিন্দাদেরও।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব রেলের তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার ঘনশ্যাম সিংহ সিউড়ি ও দুবরাজপুর স্টেশনে এসেছিলেন। ওই রেলকর্তা অণ্ডাল ও সাঁইথিয়া শাখার যে যে স্টেশনগুলির পরিকাঠামো, রেলের ট্র্যাক, সিগনালিং ব্যবস্থা, যাত্রী সুরক্ষার খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন, সেই তালিকায় ছিল ওই দু’টি স্টেশনও। রেলকর্তাকে নাগালে পেয়ে ওই সব দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন সিউড়ি ও দুবরাজপুরের নাগারিক সমিতি ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা। রেলের তরফে দাবিপূরণের আশ্বাসও মিলেছিল। কিন্তু তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় দু’বছর। দাবি মেটেনি। রেলের উপরে ক্ষুব্ধ সিউড়ি ও দুবরাজপুরের বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন— ‘‘উপেক্ষিতই থাকলাম।’’

জেলা সদরের বাসিন্দাদের বক্তব্য, রামপুরহাট ও বোলপুরের সঙ্গে কলকাতার রেল যোগাযোগ যথেষ্ট ভাল হলেও সব চেয়ে বঞ্চিত জেলা সদর সিউড়ি। সিউড়ি থেকে কলকাতা যাওয়ার একটি প্যাসেঞ্জার ও দু’টি এক্সপ্রেস মিলিয়ে তিনটি ট্রেন রয়েছে। রামপুরহাট থেকে হাওড়াগামী ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেন সিউড়ি থেকে কলকাতা যাওয়ার জন্য সকালে একমাত্র ট্রেন। অন্য দু’টি হল, হুল এক্সপ্রেস ও সিউড়ি-হাওড়া এক্সপ্রেস। হুল ছাড়ে দুপুরে, সিউড়ি-হাওড়া এক্সপ্রেস বিকেলে।

সিউড়ির বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, ময়ূরাক্ষী ট্রেনের ভাড়া কম ও জনপ্রিয়। কিন্তু ওই ট্রেনে যাতায়াতে সমস্যা দু’টি। সকাল ৬-২২ মিনিটের ওই ট্রেনে কলকাতায় পৌঁছতে প্রায় বেলা সাড়ে ১১টা হয়ে যায়। ওই সময় কলকাতা পৌঁছে ব্যবসার কাজ সেরে ফের বিকেল ৪-২৫ মিনিটে ফেরার ট্রেনে চাপা যায় না। দ্বিতীয় অসুবিধা, কোনও সংরক্ষিত কামরা না থাকায় ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে যাতায়াত খুব কষ্টকর। সিউড়ি ও দুবরাজপুর বাসিন্দাদের তরফে রেলকর্তাকে বলা হয়েছিল, একটি এমন ট্রেন দেওয়া হোক যেটি সকাল ১০টার মধ্যে কলকাতায় পৌঁছবে। আবার সন্ধ্যায় ছেড়ে আসবে। অন্য দিকে ভিড়ে ঠাসা মযূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে স্বচ্ছন্দে যাতায়াতের জন্য দু’টি সংরক্ষিত (তার মধ্যে একটি বাতানুকূল) কামরা যোগ করার দাবিও উঠেছিল।

তাঁদের যুক্তি ছিল, হুল এক্সপ্রেস নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তবে, সিউড়ি, সাঁইথিয়া প্রান্তিক হয়ে সিউড়ি-হাওড়া এক্সপ্রেসের কলকাতা যাওয়ার যুক্তি নেই। হাওড়া পৌঁছতে সেটির রাত ১১টা বাজে। সিউড়ি থেকে ওই ট্রেনটি মোটেই জনপ্রিয় নয়। সেটিকেই সকালে সিউড়ি থেকে অণ্ডাল দিয়ে চালালে ভাল হয়।

সিউড়ি নাগরিক সমিতির বরুণ দাস, ব্যবসায়ী সমিতির কিসান পাল ও নজরুল ইসলাম, শিবশঙ্কর কেজরিওয়াল বলছেন— সিউড়ি জেলা সদর হলেও রেল যোগাযোগ খুব খারাপ। সকালের ময়ূরাক্ষীতে কলকাতা পৌঁছতে এক বেলা পেরিয়ে যায়। তাই রামপুরহাট থেকে হাওড়াগামী বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ধরতে সিউড়ির অনেককে ১৮ কিলোমিটার

দূরের আমোদপুর স্টেশনে যেতে হয়। তাঁদের প্রস্তাব ছিল— ব্যবসায়িক দিক ‘অলাভজনক’ সিউড়ি-হাওড়া এক্সপ্রেসকে ভোর ৫টা নাগাদ সিউড়ি থেকে ভায়া অণ্ডাল চালানোর। ওই ট্রেনটিকেই সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হাওড়া থেকে ছাড়া হলে সকলে কাজ মিটিয়ে বা়ড়ি ফিরতে পারেন।

সিউড়ির ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, বিকেল ৪-২৫ মিনিটে ময়ূরাক্ষীর পরে আর ফেরার ট্রেন নেই। সরকারি বাস আছে। তবে অনলাইনে বুকিং হয় বলে বাসে সকলে বসার জায়গা পান না। ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে একই সঙ্গে পূর্ব রেলের অণ্ডাল-সাঁইথিয়া শাখার দুবরাজপুরের মানুষও উপকৃত হবেন।

শুধু জিএম নয়, একই দাবি নিয়ে একাধিক বার পূর্ব রেলের আসনসোল ডিভিশনের ডিআরএমের কাছেও দরবার করেছেন দুবরাজপুর সিউড়ির মানুষ। তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি। এ নিয়ে পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘স্থানীয় মানুষের দাবি রেলের বিবেচনাধীন রয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে অর্থনৈতিক ও ব্যবস্থাপনার দিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suri Train Timetable Indian Railway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE