Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘কেন পাঠাব স্কুলে, বোমা খেতে?’

গত বৃহস্পতিবার থেকে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে উতপ্ত হয়ে ওঠে পাড়ুই থানার হাটইকড়া গ্রাম। দফায় দফায় গণ্ডগোল হয়েছে। প্রথমে বিজেপির বিস্তারককে মারধর ও তাঁর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

সুনসান: আসছে না পড়ুয়ারা। হাটইকড়ার স্কুলে তালা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

সুনসান: আসছে না পড়ুয়ারা। হাটইকড়ার স্কুলে তালা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

শুভদীপ পাল
সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০২:০৬
Share: Save:

গোলমাল থেমেছে আপাতত। কিন্তু, গত ক’দিন ধরে চলা রাজনৈতিক অশান্তির রেশ এখনও কাটেনি সিউড়ি ২ ব্লকের হাটইকড়া গ্রামের মন থেকে। তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের জেরে গ্রেফতার হয়েছেন মোট ১৪ জন। ধরপাকড়ের ভয়ে কার্যত পুরুষশূন্য হাটইকড়া। আতঙ্ক এতটাই যে, গ্রামের স্কুলে আসছে না পডু়য়ারাও।

গত বৃহস্পতিবার থেকে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে উতপ্ত হয়ে ওঠে পাড়ুই থানার হাটইকড়া গ্রাম। দফায় দফায় গণ্ডগোল হয়েছে। প্রথমে বিজেপির বিস্তারককে মারধর ও তাঁর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি থানায় অভিযোগ করে। বিজেপির অভিযোগ, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা শনিবার সকালে হাটইকড়া গ্রামে বিজেপি কর্মীদের হুমকি দেন। এর পরেই এলাকা জুড়ে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে পুরন্দরপুর-বোলপুর রাস্তায় হাটইকড়া সেতুর কাছে অবরোধ করে বিজেপি। সেই সময় দলের বিস্তারককে মারধরের ঘটনার মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ও তাঁর সঙ্গীদের মোটরবাইকে যেতে দেখে তাঁদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। দু’দলই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। ঘটনার জন্য সাসপেন্ড করা হয় পাড়ুই থানার এক সাব ইনস্পেক্টরকে। গ্রেফতার করা হয় অনেককে।

তার পরেও অবশ্য নিজের ছন্দে ফেরেনি হাটইকড়া গ্রাম। সোমবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল গ্রামের রাস্তা কার্যত ফাঁকা। বেশির ভাগ বাড়ির জানলা-দরজা বন্ধ। যে কয়েক জন গ্রামে আছেন, তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। গ্রামের এক বৃদ্ধা লক্ষ্মী দাস বললেন, ‘‘এত বছর ধরে এই গ্রামে থাকছি। কিন্তু এই দৃশ্য জীবনেও দেখিনি। মাঠে যে চাষ করতে যাব, ভয়ে তা-ও পারছি না। ঘর ফাঁকা রেখে যাই কী ভাবে?’’ গ্রামের এক বৃদ্ধ তাঁতি বৃন্দাবন বিত্তার বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে দোকানের দরজা পর্যন্ত খুলতে পারিনি।’’

একই ছবি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মোট ১১৫ জন ছাত্রছাত্রী পড়ে এখানে। এ দিন দেখা গেল, ফাঁকা পড়ে আছে স্কুলের ক্লাসরুম। কোথাও কোনও পড়ুয়া নেই। তিন জন শিক্ষক-শিক্ষিকা বসে আছেন স্কুলের মধ্যে। তাঁরাও ভয়ে কোনও কথা বলতে চাইলেন না। স্কুলের কয়েক জন ছাত্রকে গ্রামে পেয়ে জিজ্ঞেসা করতেই তারা বলে ওঠে, ‘‘এই অবস্থায় কী করে স্কুল যাব?’’ এক বৃদ্ধার কথায়, ‘‘আমার নাতি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু, কেন ওকে এখন স্কুল পাঠাব? বোমা খেতে?’’ কবে নিজের ছন্দে ফিরবে হাটইকড়া? কবে থেকেই বা শুরু হবে স্কুল? আপেক্ষায় গ্রামের সাধারণ মানুষ।

গ্রামকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে তাঁরা উদ্যোগী হবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল ও বিজেপি—দু’দলের নেতারাই। তৃণমূলের সিউড়ি ২ ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা গ্রামকে ছন্দে ফেরানোর জন্য দু-এক দিনের মধ্যেই ওখানে মিটিং করব। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করব। একই সঙ্গে পুলিশকে গ্রামবাসীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আবেদন জানাব।’’ বিজেপির ওই ব্লকের সভাপতি পবন বাগদি বলেন, ‘‘আমরাও পুলিশকে অনুরোধ করব, নিষ্ক্রিয় না থেকে মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে গ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হোক।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আমরা গ্রামকে ছন্দে ফেরানোর চেষ্টা করছি।’’

সেই চেনা ছন্দে ফেরার অপেক্ষাতেই রয়েছে হাটইকড়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suri BJP TMC Clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE