ভেঙে গিয়েছে জলাধারে ওঠার সিড়ি। চার দিকে শুধু নোংরা জল। (ইনসেটে) তৃষার পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
পাইপলাইনে এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প চালু হয়েছিল ৩৫ বছর আগে। সেই প্রকল্পের পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে তাতে যেন ঘৃতাহুতি হল।
পেটের রোগে মুরারই থানার পাইকর গ্রামের হালদারপাড়ার আট বছরের তৃষা ভাস্করের মৃত্যুতে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন এলাকাবাসী। প্রশ্ন উঠল, সংশ্লিষ্ট দফতরের ভূমিকা নিয়েও। অনেকেই বললেন, প্রশাসন আরও আগে উপযুক্ত পদক্ষেপ করলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাইকর গ্রামে ১৯৮৩ সালে পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প চালু হয়েছিল। তার মাধ্যমে পাইকর ১ ও পাইকর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। জলের সংযোগ দেওয়া হয় ৬২০টি বাড়ি, দশটি পাড়ায় ১৩০টি স্ট্যান্ড পয়েন্টে। সম্প্রতি ওই প্রকল্পের মাধ্যমে পাইকর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের হিয়াতনগর গ্রামে ৫০টি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরখানেক আগে পরিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্পের জলাধারে ওঠার লোহার সিঁড়ি ভেঙে গিয়েছিল। তার পরে থেকে ওই জলাধার আর পরিষ্কার করা হয়নি। অপরিশ্রুত জলই সরবরাহ হচ্ছে। ওই এলাকার মল্লিকপাড়ায় পাইপলাইন ফেটে গেলেও তা মেরামত করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাইপলাইনে নোংরা জল ঢুকছে তা জেনেও জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর কোনও পদক্ষেপ করেনি। অভিযোগ, বুধবার থেকে পাইকর গ্রামের হালদারপাড়া ও রাজবংশীপাড়ায় ডায়েরিয়ার প্রকোপ ছড়ানোর কারণ পাইপলাইনের ‘পরিশ্রুত’ জলই। জলপ্রকল্পের স্ট্যান্ডপয়েন্ট-গুলির বেশিরভাগই প্ল্যাটফর্মহীন। সেগুলির সামনেও জমে থাকে নোংরা জল।
এ দিকে, শিশুমৃত্যুর জেরে গণবিক্ষোভ প্রশমিত করতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। ব্লক প্রশাসনের তরফে পাইকর এলাকায় পানীয় জল ফুটিয়ে খাওয়ার কথা মাইকে প্রচার করা হয়। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরমার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, পাইপলাইনে সরবরাহ হওয়া জল থেকেই পাইকরে ডায়েরিয়া ছড়িয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে ওই জলের নমুনা কলকাতায় পরীক্ষা করতে পাঠানো হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর অবশ্য পাইপলাইনের জল থেকেই ডায়েরিয়া ছড়ানোর কথা মানতে রাজি নয়। দফতরের সহকারী বাস্তুকার সরোজ চৌধুরী বলেন, ‘‘পাইকর জল প্রকল্পের মাধ্যমে ওই এলাকায় দশটি পাড়ার জল সরবরাহ করা হয়। তার মধ্যে দু’টি পাড়ায় ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। পাইপলাইনে সরবরাহ করা পানীয় জল দূষিত হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হত।’’ লোহার সিঁড়ি ভাঙার পরে জলাধার পরিষ্কার করা হয়নি, সেই প্রশ্নে সরোজবাবু বলেন, ‘‘ওই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ মল্লিকপাড়ায় পাইপে ফাটল এবং অধিকাংশ স্ট্যান্ডপয়েন্টে প্ল্যাটফর্ম না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘সব কিছু দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy