জরাজীর্ণ: আবাসন ঘিরেছে আগাছার জঙ্গলে। লাভপুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র
বছর পাঁচেক আগে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন এক মাত্র চিকিৎসক। এখনও সেখানে নতুন কোনও চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়নি। উল্টে একের পর এক ফাঁকা হয়েছে নার্স, অন্য স্বাস্থ্যকর্মীর পদও। সে সব পদও পূরণ হয়নি। শুধু রয়েছেন এক ফার্মাসিস্ট। কার্যত এমন ভাবেই জোড়াতালি দিয়ে চলছে লাভপুরের বিপ্রটিকুরি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্য দফতরের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দারা তাতে ক্ষুব্ধ।
স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্তরের দশকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হয়। তার জন্য বরাদ্দ করা হয় এক জন চিকিৎসক, দু’জন নার্স, এক জন ফার্মাসিস্ট, এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং এক জন পরিষ্কার করার কর্মী। ২০১৩ সালে ওই কেন্দ্রের এক মাত্র চিকিৎসক বদলি নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যান। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তার পরে দীর্ঘ দিন চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা হয়নি। প্রশাসনের কাছে অনেক বার আর্জি জানানোর পর ২০১৫ সালে অস্থায়ী ভাবে এক জন চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু তিনিও মাসতিনেক পর ইস্তফা দিয়ে চলে যান। তারপর থেকে অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা অবসর বা বদলি নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যান। সে সব শূন্যপদ আজও পূরণ হয়নি।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক মাত্র স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে রয়েছেন ফার্মাসিস্ট পিণ্টু চট্টোপাধ্যায়। কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে তিনিই টিকিয়ে রেখেছেন স্বাস্থ্য পরিষেবা। পিণ্টুবাবু বলেন, ‘‘অভিজ্ঞতায় যত টুকু করা সম্ভব সেটুকুই করতে পারি। বেশি অসুস্থ রোগীদের বোলপুর বা লাভপুরে নিয়ে যেতে বলি।’’
এলাকার বাসিন্দারা এতে চরম সমস্যায়। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই ইন্দাস, মালিতপুর, গোপ্তা, কাশিয়াড়া, বুদুরা সহ ১৫-১৬টি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। অনেক সময় বাধ্য হয়ে ওই সব গ্রামের বাসিন্দাদের হাতুড়ের দ্বারস্থ হতে হয়। কারণ সে সব গ্রাম থেকে বোলপুর বা লাভপুরের হাসপাতাল ১২-১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্কর হাজরা, মকরুমা বিবি বলেন, ‘‘অত দূরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ নেই। হাতুড়ের পাল্লায় পড়ে অনেক সময় রোগীর প্রাণসংশয় হয় জেনেও তাঁদের কাছেই ছুটতে হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তো চিকিৎসাই মেলে না।’’
এলাকাবাসীর বক্তব্য, ওই অথচ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল আগে এমন ছিল না। এক সময় অন্তর্বিভাগ পরিষেবাও মিলত সেখানে। বিষক্রিয়া, ডায়েরিয়া আক্রান্তদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা হত। ২০১০ সাল পর্যন্তও স্বাভাবিক প্রসব ব্যবস্থা চালু ছিল। চিকিৎসক, নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনে থাকতেন। অভিযোগ, এখন অব্যবহার আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়ে রয়েছে সে সব আবাসন। আর্বজনা আর ঝোপজঙ্গলে ভরে সাপখোপের বাসা হয়ে উঠেছে।
বিনয় দাস, কালীসাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক মণ্ডলদের স্মৃতিতে এখনও স্পষ্ট অতীতের সেই ছবি। তাঁরা জানান, তখন দূরদূরান্ত থেকে গরুর গাড়িতে করে রোগীদের নিয়ে আসা হত। এখন তাঁদেরই গাড়ি ভাড়া করে দূরের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যেতে হয়।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এক সময়ে গড়ে দৈনিক ২০০-২৫০ জন রোগী আসতেন। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০০-১২০ জনে। ফার্মাসিস্ট জ্বর, পেটখারাপের টুকাক ওষুধ দিতে পারছেন বলেই আসছেন রোগীরা। বিপদতারণ ভট্টাচার্য, গৌতম পালের কথায়, ‘‘পিণ্টুবাবু রয়েছেন বলে কোন রকমে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অস্প হলেও পরিষেবা মিলছে। না হলে এত দিনে ওটা হানাবাড়ি হয়ে যেত।’’
পিন্টুবাবু বলেন, ‘‘একার হাতে টিকিট লেখা, রোগী দেখা এবং ওষুধ দেওয়ার কাজ করতে হয়। কখনও শরীর খারাপ হলে বা ব্যক্তিগত কারণে ছুটিও নিতে পারি না।’’ লাভপুর ব্লক স্বাস্থ্য অধিকর্তা বুদ্ধদেব মুর্মূ জানান, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মী না থাকার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করা যায় দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy