Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মৃত্যু সেই গুলিবিদ্ধ যুবকের, পাড়ুইয়ের আসছেন অভিষেক

বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওই রাতেই পুলিশ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের পাড়া থেকেই দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে।

নিহত পিন্টু সিংহের ছবি নিয়ে অপেক্ষায় সঙ্গীরা। পুঞ্চা কিসান মান্ডিতে।

নিহত পিন্টু সিংহের ছবি নিয়ে অপেক্ষায় সঙ্গীরা। পুঞ্চা কিসান মান্ডিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুঞ্চা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

অস্ত্রোপচারে গুলি বার করা গেলেও বাঁচানো গেল না পুঞ্চার পাড়ুই গ্রামের যুবক পিন্টু সিংহকে (৩৮)। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওই রাতেই পুলিশ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের পাড়া থেকেই দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে।

তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত পিন্টুর মৃত্যুকে ঘিরে রাজনীতির রং লেগে গিয়েছে। শুক্রবার তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘রাজনীতিতে জায়গা করতে না পেরে খুন, হানাহানি, বিভেদ তৈরির রাস্তা নিচ্ছে বিজেপি। এ ভাবে তৃণমূলকে ঠেকানো যাবে না। রাজ্যের উন্নয়নও বন্ধ করা যাবে না।’’ পুঞ্চার বাসিন্দা তথা জেলা সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আজ, শনিবার যুব তৃণমূল সভাপতি তথা দলের জেলা পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিহত কর্মীর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পুঞ্চায় আসছেন। সে জন্য কিসানমান্ডি চত্বরে প্রাথমিক ভাবে জায়গা দেখা হয়েছে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে পাল্টা দাবি করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

পিন্টুকে খুনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে পাড়ুইয়ের বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ রায় ও বাবু বাউড়িকে। তাঁদের পরিজনেরা ধৃতদের ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন। ধৃতদের শুক্রবার পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা দাবি করেন, ‘‘পিন্টু-খুনের ঘটনায় ধৃতেরা জড়িত বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তাদের জেরা করে খুনের কারণ, খুনে ব্যবহৃত বন্দুক ইত্যাদি উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।’’

পুলিশ হেফাজতে খুনে অভিযুক্ত ধৃতেরা।

বুধবার ভোরে বাড়িতে দাদা বাবলু সিংহের সঙ্গে পিন্টু বলি দেওয়া পাঁঠার চামড়া ছাড়াচ্ছিলেন। সেই সময় পিছন থেকে আততায়ী এসে অন্ধকারের মধ্যে থেকে তাঁকে গুলি করে পালায়। পিন্টুর থাইয়ের পিছনে গুলি বিঁধে যায়। স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল হয়ে তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বেলার দিকে তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়।

শুক্রবার নিহতের দাদা বাবলু সিংহ বলেন, ‘‘বুধবার অস্ত্রোপচারের পরে ভাইয়ের অবস্থা স্থিতিশীল শুনে আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু, বৃহস্পতিবার রাতে ১০টা নাগাদ খবর পাই ভাই আর নেই। বিশ্বাস করতে পারছি না।’’

দাদার সঙ্গে মুদিখানা দোকান চালানো আর কখনওসখনও একশো দিনের কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা পিন্টুকে কে বা কারা খুন করল? নিহতের দাদা বলেন, ‘‘ভাই তৃণমূল কর্মী ছিল। দলের মিছিল, মিটিংয়ে যোগ দিত। কারও সঙ্গে ভাইয়ের শত্রুতা ছিল বলে শুনিনি। দলেও ভাই কোনও উঁচুপদে ছিল না। তাহলে ওকে খুন করে কার কী স্বার্থরক্ষা হল, বুঝতে পারছি না।’’

তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী পিন্টুকে বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে খুন করিয়েছে। বিজেপি জেলায় খুনের রাজনীতি শুরু করেছে।’’ স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা দাবি করেন, ধৃতদের মধ্যে ইন্দ্রজিতের বৌদি পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির প্রার্থী হয়ে হেরে যান। সেই দিকটাও দেখা দরকার।

পুঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েত তো বটেই পাড়ুই সংসদও তৃণমূলের দখলে। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘তৃণমূলই পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকে এখনও পর্যন্ত তাদের আশ্রিত দুষ্কৃতী ও পুলিশকে কাজে লাগিয়ে আমাদের পাঁচ কর্মীকে পুরুলিয়ায় খুন করেছে। ওরাই এখানে খুনের রাজনীতি আমদানি করেছে। এখন আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে পুঞ্চার মতো শান্ত এলাকাও তৃণমূল অশান্ত করতে চাইছে।’’

এ দিকে, পিন্টুর মৃত্যুর খবর আসার পরে বৃহস্পতিবার রাতে পুঞ্চার কিসান মান্ডি চত্বরে কালীপুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করে শুক্রবারের যাবতীয় অনুষ্ঠানও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় শোক নেমে আসে। অভিষেকের আসার সম্ভাবনায় কিসান মান্ডি চত্বর পরিদর্শনে যান পুলিশ কর্তারা। এ দিন ময়না-তদন্তের পরে পিন্টুর দেহ রাতে পুঞ্চায় পৌঁছয়। অপেক্ষায় থাকেন বহু তৃণমূল কর্মী।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE