পুলিশকে ঘিরে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
ফের বীরভূম। ফের আক্রান্ত পুলিশ।
দুই গ্রামের বিবাদের জেরে রাস্তা অবরোধ চলছিল। শনিবার মুরারই থানার কনকপুরে সেই অবরোধ তুলতে গিয়েই পুলিশ আক্রান্ত হয় বলে অভিযোগ। কোনও পুলিশকর্মী জখম না হলেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে পুলিশের একটি গাড়িতে ক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর চালায়। ওই ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার বা আটক করতে পারেনি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার এবং এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস কে, কেউ-ই ফোন ধরেননি। এমনকী, মেসেজেরও উত্তর মেলেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নানা কারণে বেশ কিছু দিন ধরে স্থানীয় ডুমুরগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কনকপুর ও পাশের গ্রাম পানিয়ারার মধ্যে ঝামেলা চলছিল। কনকপুর থেকে মুরারই যাতায়াতের পথেই পড়ে পানিয়ারা। কনকপুরের বসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক দিন থেকে পানিয়ারার কিছু ছেলে আশা যাওয়ার পথে তাঁদের গ্রামের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছে। পাশাপাশি সন্ধ্যা-রাতে পানিয়ারা সাঁকোর কাছে বাসিন্দাদের টাকা, মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। তাঁদের দাবি, ওই ঘটনাতেও পানিয়ারা গ্রামের কিছু যুবক জড়িত। কনকপুরেরই বসিন্দা তথা ডুমুরগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তৃণমূলের রাহিবুদ্দিন শেখের অভিযোগ, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতেও পানিয়ারা সাঁকোতে আমাদের গ্রামের দুই যুবককে ঘিরে ধরে মারধর করা হয়। তাঁদের মোবাইলও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে মুরারই থানায় গেলেও পুলিশ যুবকদের অভিযোগ নেয়নি।’’
পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তারই প্রতিবাদে এ দিন সকাল থেকে কনকপুর গ্রামের গা দিয়ে যাওয়া মুরারই–কনকপুর রাস্তা অবরোধ করেন সেখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রের খবর, অবরোধ চলাকালীন পানিয়ারার তিন অটোচালক কনকপুর গ্রামে এসে পড়লে গ্রামবাসীদের একাংশ তাঁদের মারধর করে স্থানীয় একটি ক্লাবে আটক করে রাখে। বৃহস্পতিবারের ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের গ্রামে হাজির না করলে ওই তিন অটোচালককে ছাড়া হবে না বলে কনকপুরের বাসিন্দাদের ওই একাংশ হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। সেই খবর পেয়ে পানিয়ারার বাসিন্দাদেরও একাংশ আবার কনকপুরের দুই যুবককে আটকে রাখে বলে অভিযোগ। এ দিকে, গণ্ডগোলের খবর পেয়ে অবরোধ তুলতে এবং ওই তিন যুবককে উদ্ধার করার জন্য মুরারই থানা থেকে পুলিশের একটি গাড়ি কনকপুরে পৌঁছয়। অভিযোগ, উত্তজিত জনতা পুলিশের গাড়ি লক্ষ করে ইট ছুড়তে শুরু করে। ইটের ঘায়ে পুলিশের গাড়ির সামনে এবং পিছনের কাচ ভেঙে যায়। গ্রামবাসীর বিক্ষোভ ও প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ কোনও রকমে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে গ্রামে চলে আসেন মুরারই থানার এসি পার্থসারথি মণ্ডল। দীর্ঘ ক্ষণ গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশ পানিয়ারা গ্রামের আটক তিন যুবককে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ছেড়ে দেওয়া হয় কনকপুরে আটক যুবকদেরও।
এ দিকে, তাঁর গ্রামের লোকেদের বিরুদ্ধে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাহিবুদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের গাড়ি ভাঙচুড় হয়েছে কিনা বলতে পারব না।’’ অন্য দিকে, পানিয়ারা গ্রামের কিছু বাসিন্দার বিরুদ্ধে যে ছিনতাই এবং মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে, তা অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত সদস্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের মকিবুল শেখ। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের গ্রামের যুবকদের উপর মিথ্যা বদনাম দেওয়া হচ্ছে।’’ পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনার উদ্ধার হবে, দু’পক্ষই এমনটা দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy