কীর্ণাহারে এলেন প্রণব। মঙ্গলবার। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি
আফশোষের শেষ নেই লাভপুরের কেমপুরের আদিত্য সাহার। বছর দু’য়েক ধরেই কপ্টার দেখার বায়না ধরেছিল নাতি ৭ বছরের প্রসেনজিৎ। এ বার নাতিকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া মাঠে। কিন্তু কোথায় কী? কোথাই সেই বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে উপছে পড়া ভিড়। গোটা মাঠ খাঁ খাঁ করছে।
বাসস্ট্যান্ডের দোকানদারের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এবারে আর কপ্টারে নয়, প্রণববাবু আসছেন গাড়িতে। তারপর থেকে চরম আফশোষ আদিত্যবাবুর। তিনবছর আগে কীর্ণাহারে বাজার করতে এসে প্রণববাবুর কপ্টার দেখে সাতকাহন করে গল্প করেছিলেন নাতির কাছে। সেই শুনে নাতিও বায়না ধরেছিল কপ্টার দেখার। গতবার হয়নি, এ বার সঙ্গে করে এনেছিলেন নাতিকে। কিন্তু তিনি কি করে জানবেন, আর কপ্টার আসবে না। তাই কোনও রকম রাখঢাক না করে বলেই ফেললেন, ‘‘এ বার এলে কী এমন ক্ষতি হত? আর তো নাতিটার কপ্টার দেখা হল না!’’
একই আক্ষেপ শাসপুরের শশীবালা দাসীরও। পুজোয় বেড়াতে এসেছে বোনঝি ৮ বছরের প্রিয়া। তাঁকে কপ্টার দেখাতে এনেছিলেন তিনি। কিন্তু কপ্টার আসছে না শুনে বোনঝির কাছে যেন আর মুখ থাকল না তাঁর। বললেন, বড়ো মুখ করে কপ্টার দেখাব বলে এনেছিলাম। এখন আইসক্রীম খাইয়ে মান রক্ষা করতে হল।
এ আক্ষেপ শুধু আদিত্য সাহা, কিংবা শশীবালা দাসীদেরই নয়, কার্যত কীর্ণাহার সংলগ্ন গোটা এলাকার।
ষষ্ঠীতে কপ্টার-জ্বরে ভোগাটা কীর্ণাহার এলাকার বাসিন্দাদের কাছে অভ্যেস হয়ে উঠেছিল। ষষ্ঠীর দিন বিকালে মিরিটি গ্রামের বাড়িতে পুজোয় যোগ দিতে আসেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীনই তাঁকে দিল্লী থেকে উড়িয়ে আনে কপ্টার। রাস্ট্রপতি হওয়ার পর থেকে সেনাবাহিনীর তিন তিনটি কপ্টার উড়িয়ে আসত তাঁর সফরে। আর সেই কপ্টার দেখতে দুপুর থেকে কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাঠে ভিড় জমাতেন হাজার হাজার মানুষ। গাড়ির কনভয়, নিরাপত্তা রক্ষীদের ঘেরাটোপে জমজমাট হয়ে উঠত কীর্ণাহার বাজার। দীর্ঘদিন পর এবারই দেখা গেল উল্টো চিত্র। অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক বাজার এলাকা। বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া মিষ্টির দোকানের মালিক সমীর মণ্ডল, চায়ের দোকানের পরেশ দাসরা বলেন, ‘‘অন্যান্যবার কপ্টার দেখতে এত লোক আসেন যে আমাদের চারগুন বিক্রিবাটা বেশি হত। এবারে কিন্তু তা হয়নি।’’
কপ্টার না এলেও তিনি এসেছেন।
এ দিন বিকাল ৫টা নাগাদ ৬ গাড়ির কনভয় নিয়ে প্রণববাবু পরোটা গ্রামে দিদি অন্নপূর্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছন। সেখানে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী এবং জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীরকুমার তাঁকে ফুলের স্তবক দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। সন্ধ্যেয় মিরিটি গ্রামের বাড়িতে যাবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy