বিদায়ের সুর বেজে উঠল শান্তিনিকেতন পৌষমেলায়। এ বছরের মত মেলা শেষ। স্টল গোছাতে ব্যস্ত কিছু বিক্রেতা। যাওয়ায় আগে চৈত্র সেলের মতো তাঁরা হরেক জিনিসের দামে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করছেন। এক দিকে একটা কিনলে একটা ‘ফ্রি’-এই চিৎকারে ক্রেতাদের মন কাড়ছেন অন্য দিকে ঘোষণা— ‘আজই মেলার শেষ দিন, আগামী দিন থেকে বেচা-কেনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’
এমনই ছবি ধরা পড়ল বৃহস্পতিবার সন্ধেয় মেলার মাঠে।
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ১ নভেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেয়, এ বার থেকে মেলা হবে ছ’দিন। তারপরে আর কোনও ভাঙা মেলা থাকবে না। পাশাপাশি পৌষমেলার ক্ষেত্রে কয়েক দফা পরিবেশগত বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছিল। নিয়ম মেনে মেলা হচ্ছে কি না, তা দেখতে তিন সদস্যের একটি নজরদারি কমিটি তৈরি করা হয়। কথা ছিল, প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র এবং পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তকে নিয়ে তৈরি এই কমিটি নজর রাখবে পৌষমেলার উপর। ছ’দিন মেলা পর্যবেক্ষণ করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। বৃহস্পতিবার মেলা ঘোরেন প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র।
পৌষমেলার দূষণ নিয়ে ২০১৫ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাতেই জানা যায়, দু’সপ্তাহ ধরে মেলা চললেও আদতে মেলার আইনি সময়সীমা তিন দিন।
২০১৬ সালে তিন দিনের পর মেলা বন্ধের নির্দেশ থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। এবছর তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেলা যাতে বন্ধ করা যায় সেবিষয়ে বৃহস্পতিবার একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন কুমার দত্ত, ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অমিত হাজরা, মেলা কমিটির আহ্বায়ক গৌতম সাহা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষ, মহকুমাশাসক শম্পা হাজরা, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত, প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র এবং অন্যান্য আধিকারিকেরা।
বৈঠকের পর বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন কুমার দত্ত বলেন, ‘‘সমস্ত নিয়ম মেনে পরিবেশবান্ধব মেলা হয়েছে। আশা করছি, শুরুর মতোই শেষও ভালো হবে।’’ তিনি জানান, মেলার মাঠ স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে হয়তো ৩-৪ দিন লাগবে। তাই সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন। শৌচালয়, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে সেগুলি পরবর্তী মেলায় সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর যেমন প্রশাসন, মেলা কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে পর্যটকদের সহযোগিতা পাওয়া গিয়েছে, আগামী বছরেও তা পাওয়ার আশা রাখলাম।’’
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানান, ‘‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেলা গুটিয়ে ফেলা একটা চ্যালেঞ্জ। প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। দেখা যাক কতটা সফল হয়।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষ বলেন, ‘‘প্রশাসনিক তৎপরতা রয়েছে। সময়ের মধ্যে মেলা যাতে শেষ করা যায়, সে জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ মেলা কমিটির আহ্বায়ক গৌতম সাহা জানান, ছ'দিনই মেলা সুষ্ঠভাবে হয়েছে। মেলা গুটিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ সচেতন থাকছে।
এ বছর মেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার ১০০টি স্টল ছিল। গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুসারে মেলায় দূষণ সম্পর্কিত সচেতনতা জারি করা হয়। প্রশাসনের বক্তব্য, মেলায় এসেছিল প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার গাড়ি। তবুও কোনও সমস্যা হয়নি। সকাল, দুপুর এবং রাত— এই তিনটি ভাগে গাড়ি পার্কিংকে ভাগ করা হয়েছিল। এত পর্যটক, এত গাড়ি সত্ত্বেও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ বারে পকেটমারির ঘটনাও কমেছে। মেলা কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে যেসমস্ত পদক্ষেপ করা হয়েছিল, তা সফল ভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকে নাগরদোলা বন্ধ করা হয়। আগামী কাল সকাল থেকে বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহ বন্ধ করা হবে। বিদ্যুৎ বন্ধ হলেও জেনারেটর যাতে কোনও ভাবেই মেলা প্রাঙ্গনে প্রবেশ না করে সে দিকে নজর রাখবে প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ। মেলায় ঢোকার ৫টি গেট ছিল বন্ধ করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাতে সমস্ত দোকান তুলে নেওয়া হয়, সে জন্য রাতে প্রশাসন এবং কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধিদল প্রত্যেক স্টলে ঘুরেছে। খাবারের দোকানগুলিতে শুক্রবার সকাল থেকে কোনও কিছু জ্বালানো যাবে না, সেটা গ্যাসই হোক বা উনুন। এই নিয়ম ভাঙলে জরিমানা দিতে হতে পারে। তার থেকেও বেশি বিরুদ্ধাচারণ করলে পরবর্তী মেলায় সেই নির্দিষ্ট স্টলমালিককে স্টল দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে বলে মেলা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy