নতুন সিলেবাসের বই হাতে পায়নি স্কুলের পড়ুয়ারা। এখনও হাতে আসেনি বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট। আবার অন্যত্র পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ‘ট্রান্সফার সার্টিফিকেট’ পাচ্ছে না চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা। এমনকী, বছরের শুরু থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে মিড-ডে মিলের রান্নাবান্না।
গত পাঁচ মাস ধরে এমনই ডামাডোল অবস্থা রামপুরহাট উত্তর চক্রের আম্বা প্রাথমিক স্কুলের। যার নেপথ্য কারণ হিসেবে উঠে আসছে এত দিন ধরে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির কথা। গত ৯ অগস্টের পর আর স্কুলমুখো হননি প্রধান শিক্ষক অমর সিংহ। সরকারি খাতায় তিনি এখনও ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক হলেও বর্তমানে অমরবাবু ক্লাস নিচ্ছেন ওই চক্রেরই অন্য একটি স্কুলে! অথচ সরকারি খাতায় তিনি কোনও ছুটিতেও নেই। আর এই সব কিছুর ফল ভুগছে আম্বা প্রাথমিক স্কুল। অভিভাবকহীন হয়েই ওই স্কুলের এমন অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও অমরবাবু ছাড়াও ওই স্কুলে আরও পাঁচ জন শিক্ষক রয়েছেন। কাউকে ওই সময়পর্বে দায়িত্ব দিয়ে কেন স্কুলের এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেল না? সদুত্তর দিতে পারছেন না প্রাথমিক স্কুল প্রশাসনের কর্তারা।
প্রধান শিক্ষকের সই ছাড়া উপরের ওই কোনও কাজই করা যাচ্ছে না বলে স্কুলের বাকি শিক্ষকেরা জানিয়েছেন। অথচ স্কুলশিক্ষা দফতর কাউকে সাময়িক ভাবে প্রধান শিক্ষকের ‘চার্জে’ বসালেই এই সমস্যা এড়ানো যেত বলে শিক্ষক মহলের মত। স্কুলের সহকারী শিক্ষক মহম্মদ ইরাজউদ্দিন শেখ বলছেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকের অবর্তমানে এত দিন দু’জন শিক্ষক দায়িত্ব নিয়ে মিড-ডে মিল চালু রেখেছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় টাকা এবং রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ আছে।’’ স্কুলের সহকারী শিক্ষক কামারুল খায়েরের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক স্কুলের ভর্তির রেজিস্টার খাতা নিয়ে চলে গিয়েছেন। তাঁর অবর্তমানে স্কুলে নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রি-প্রাইমারি স্তরে পড়ুয়াদের ভর্তিও করা যাচ্ছে না। একই কারণে স্কুল পরিচালনায় আরও অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। দু’জনেরই ক্ষোভ, ‘‘স্কুলের এই চরম অব্যবস্থার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি।’’
কেন আসছেন না স্কুলে?
স্কুল ছাড়ার পিছনে সহকর্মী এবং বাসিন্দাদেক একাংশের প্রতি একগুচ্ছ অসহযোগিতার অভিযোগ করছেন অমরবাবু। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ আমার উপর মানসিক অত্যাচার চালাতেন। সে ক্ষেত্রে সহকর্মীদের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পেতাম না।’’ অমরবাবুর দাবি, সেই কারণে তিনি ২০১৪ সাল থেকে একাধিক বার ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু সাড়া মেলেনি। তিনি বলেন, ‘‘গত অগস্টে এক অভিভাবক তুচ্ছ কারণে আমাকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশে অভিযোগ করি। সমস্ত ঘটনা লিখিত ভাবে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক, এআই, ডিআই এবং সংসদের সভাপতিকেও জানাই।’’ তার পরই তিনি স্কুল ছেড়ে দেন।
দফতর কি তাঁকে অন্যত্র বদলি করে দিয়েছে? অমরবাবুর স্বীকারোক্তি, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনও লিখিত নির্দেশ নেই। তৎকালীন অবর স্কুল পরিদর্শক কিশোর মণ্ডলের মৌখিক নির্দেশে আমি রামপুরহাট উত্তর চক্রের কনকপুর প্রাথমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করছি।’’ এমনটা কোনও সরকারি ক্ষেত্রে হতে পারে, তা ভাবতে পারছেন না জেলার শিক্ষকেরা। তাঁরা গোটা ঘটনায় দফতরেরই দায়সাড়া মনোভাবকে দুষছেন। সময়মতো ব্যবস্থা না নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই স্কুলটির এমন বেনজির হাল করেছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে ঘটনায় কোনও আলোকপাত করতে পারেননি জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) অলোক মহাপাত্র। তিনি কেবল বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট অবর স্কুল পরিদর্শককে এ নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছি। রিপোর্ট দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy