আঁকা-শেখাও চলছে। নিজস্ব চিত্র
একটা সময় ছিল, গমগম করত চালকল। প্রায় পাঁচ বছর ধরে সেটি বন্ধ। সোমবার সেই পোড়ো চালকলের বারান্দায় পড়তে বসল ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। কেউ সেখানে শিখছে আঁকা। যাঁরা পড়াচ্ছেন বা রঙ-তুলি ধরা শেখাচ্ছেন, তাঁরাও সবাই ছাত্রছাত্রী। কেউ পড়েন কলেজে। কেউ বিএড কোর্স করছেন।
গত বছরে কেরলে বন্যার সময়ে সাহায্যের জন্য পথে নেমেছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। ইন্দাসের জনা পঁচিশ ছাত্রছাত্রীও জোট বেঁধেছিলেন সেই সূত্রে। তাঁদের কর্মসূচির নাম দেন ‘প্রয়াস’। সেই প্রয়াস শুধু বন্যাত্রাণেই থেমে থাকেনি শেষ পর্যন্ত। আকুই ১ পঞ্চায়েতে একটি পুরনো পরিত্যক্ত চালকলের বারান্দায় সোমবার থেকে তাঁরা দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের জন্য নিখরচার পড়া আর আঁকার ক্লাস শুরু করেছেন। প্রথম ক্লাস শুরুর সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিডিও (ইন্দাস) মানসী ভদ্র চক্রবর্তী, ইন্দাস থানার ওসি বিদ্যুৎ পাল, আকুই ১ পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান দীনবন্ধু নন্দী, স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ সরকার এবং মিলটির মালিক পুলক পাঁজা।
ওই মিলটিতে এক সময়ে অনেকে কাজ করতেন। এখন দিনমজুরি করেন। কেউ কাজ নিয়েছেন অন্য কোথাও। মূলত তাঁদের ছেলেমেয়রাই পড়তে আসছে। ‘প্রয়াস’-এর পক্ষ থেকে ইন্দ্রাণী সেন বলেন, ‘‘কেরলের বন্যাত্রাণের জন্য আমরা একজোট হয়েছিলাম। তার পরেও নানা রকমের সামাজিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিছু দিন ধরেই চোখে পড়ছিল, চালকলের ওই এলাকাটায় এমন শিশুরা রয়েছে, যারা আইসিডিএস সেন্টারে খাবার পায়। কিন্তু পড়ার মতো আরও একটু সুযোগ, একটু দেখভাল পেলে একটা সুন্দর ভবিষ্যত পেতে পারে।’’ তাঁরা যান চালকলের মালিক পুলকবাবুর কাছে।
পুলকবাবু রাজি হয়ে যান। ঠিক হয়েছে, এখন থেকে প্রতি শনি-রবিবার আর ছুটির দিনগুলিতে শিশুদের নিয়ে বসা হবে চালকলের বারান্দায়। এলাকায় ভাড়া নেওয়ার মতো ঘর দেখছেন ‘প্রয়াস’-এর সদস্যেরা। তাঁরা চান, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ভরসার একটা পাকা ঠিকানা দিতে। সোমবার ছিল শিবরাত্রির ছুটি। প্রথম দিনেই হইহই করতে করতে হাজির হয়ে গিয়েছিল জনা তিরিশ শিশু। নতুন খাতা আর রং পেনসিল পেয়ে হাসিতে মুখ ঝলমল করছিল রাকেশ হাঁসদা, শুভজিৎ ছেত্রীদের।
‘প্রয়াস’-এর সদস্য কলেজ পড়ুয়া শুভেন্দু ঘোষ, সৌমদীপ গুঁই, রিক্তা নন্দীরা বলেন, ‘‘অনেকেই আমাদের পাশে রয়েছেন। ওসি বিদ্যুৎবাবু আঁকার সব সরঞ্জাম আর খাতা দিয়েছেন। বিডিও ম্যাডাম, প্রসেনজিৎবাবু, দীনবন্ধুবাবুও সাহায্য করেছেন।’’ অর্ক ভট্টাচার্য, সপ্তর্ষি নন্দীরা বলেন, ‘‘কিছু যে একটা করতে পারছি, এটাই আমাদের আনন্দ।’’ উদ্যোগের প্রশংসা করছেন বিডিও (ইন্দাস) মানসী ভদ্র চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘ওরা যেটা করছেন, তার জন্য গর্ব হচ্ছে। সব রকমের সাহায্য করব।’’ ভবিষ্যতে খুদেদের শেখানোর জন্য কম্পিউটার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ওসি বিদ্যুৎবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy