Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

৮ থেকে ২৭, আয়ে ছক্কা স্ত্রীদেরই

তিনি শাসকদলের দাপুটে নেতা। এলাকার বিদায়ী বিধায়কও বটে। আর তাঁরই পাঁচ বছরে ক্ষমতায় থাকার পরে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কমে গিয়েছে। কিন্তু, প্রায় ৫ লক্ষ টাকা সম্পত্তি কমলেও তাঁর গৃহবধূ স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ পাঁচ বছরে এক লাফে বেড়ে গিয়েছে বারো গুণেরও বেশি। তিনি লাভপুরের বিতর্কিত তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। যিনি এ বারও বিধানসভার ওই কেন্দ্রে শাসকদল তৃণমূলের প্রার্থী।

ভোট-উত্তাপ। শহর ঢেকে উঠেছে নানা দলের পতাকায়। রামপুরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ভোট-উত্তাপ। শহর ঢেকে উঠেছে নানা দলের পতাকায়। রামপুরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২৯
Share: Save:

তিনি শাসকদলের দাপুটে নেতা। এলাকার বিদায়ী বিধায়কও বটে। আর তাঁরই পাঁচ বছরে ক্ষমতায় থাকার পরে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কমে গিয়েছে। কিন্তু, প্রায় ৫ লক্ষ টাকা সম্পত্তি কমলেও তাঁর গৃহবধূ স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ পাঁচ বছরে এক লাফে বেড়ে গিয়েছে বারো গুণেরও বেশি। তিনি লাভপুরের বিতর্কিত তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। যিনি এ বারও বিধানসভার ওই কেন্দ্রে শাসকদল তৃণমূলের প্রার্থী।

বিরোধীদের অভিযোগ নয়, এই হিসেব দিয়েছেন স্বয়ং মনিরুলই। নির্বাচন কমিশনকে ২০১১ এবং এ বছর মনোনয়নপত্রে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন তৃণমূল নেতা, সেখানেই মিলেছে এই তথ্য। যেখানে দেখা যাচ্ছে— নগদ অর্থ, ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা এবং গয়নার মূল্য বাবদ পাঁচ বছর আগেও তাঁর স্ত্রী রসুলা খাতুনের মোট সম্পত্তির ছিল ২ লক্ষ আড়াই হাজার টাকার। এ বার তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে ২৭ লক্ষ টাকারও কিছু বেশি হয়েছে। শুধু স্থাবর সম্পত্তিরই পরিমাণ (‌বোলপুরের ভুবনডাঙায় জমি ও বাড়ি বানানো) ২৪ লক্ষ টাকা। অথচ পাঁচ বছর আগেও মনিরুল হলফনামায় জানিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ— শূন্য! এ ব্যাপারে অবশ্য মনিরুলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ফোন বেজে গেলেও তিনি ধরেননি।

এ তো গেল মনিরুল-কথা। এ বার চোখ ফেরানো যাক নানুরের বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারও শাসকদলের প্রার্থী গদাধর হাজরার দিকে। পাঁচ বছর আগে গদাধর যখন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, তখন তাঁর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮২৪ টাকার। স্থাবর সম্পত্তি মাত্র দেড় লক্ষ টাকার। আর গৃহবধূ স্ত্রী মমতাদেবীর কোনও সম্পত্তিই ছিল না। এ বার গদাধরের সেই অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লক্ষ টাকারও বেশি (যার মধ্যে ৭ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি চার চাকা গাড়িও রয়েছে)। আর স্থাবর সম্পত্তি প্রায় ১১ লক্ষ। স্ত্রীর সম্পত্তি পৌনে দু’লক্ষ টাকার। এখানেই শেষ নয়। গত বারের তাঁর মোট অস্থাবর সম্পত্তি যা ছিল, তার অর্ধেক টাকা এখন গদাধর জীবনবিমার প্রিমিয়াম দেন— বছরে দেড় লক্ষ টাকা। নিন্দুকেরা বলছেন, গত বার যখন বিধায়ক হলেন, গদাধরের আয়ের পথ ছিল একটি ভাড়া খাটানোর চার চাকা গাড়ি ও সামান্য জমি। সেই তিনি-ই পাঁচ বছরে সম্পত্তি প্রায় দশগুণ বাড়িয়ে ফেলেছেন! এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ওই তৃণমূল নেতার জবাব, ‘‘কমিশনকে হিসাব দিয়েছি। কোথায় কীভাবে বৃদ্ধি হয়েছে, তার হিসাব আমি সংবাদমাধ্যমকে দেব না।’’

এ দিকে, নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হিসাবে যাঁদের সম্পত্তির বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছেন জেলার দুই মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চন্দ্রনাথ সিংহও। গত বার আশিসবাবু নিজের ব্যক্তিগত অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দেখিয়েছিলেন সাড়ে ১৩ লক্ষের মতো। এবং স্থাবর সম্পত্তি ছিল ১৪ লক্ষ টাকার। এ বার সেই দু’ধরনের সম্পত্তির পরিমাণ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে দেড় কোটি টাকার মতো। আর সম্পত্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি হয়েছে আশিসবাবুর গৃহবধূ স্ত্রীর। অন্য দিকে, পাঁচ বছর আগে বোলপুরের বিদায়ী বিধায়ক চন্দ্রনাথের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। সেটাই এ বার হয়েছে প্রায় ৮১ লক্ষের কাছাকাছি। মোট সম্পত্তি হয়েছে ৯৭ লক্ষের কাছাকাছি। চন্দ্রনাথের স্ত্রী কুন্তলাদেবীর স্থাবর-অস্থাবর দুই প্রকার সম্পত্তি ছিল ১৫ লক্ষের একটু বেশি। পাঁচ বছরে সেই অঙ্কই তিনগুণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪৫ লক্ষ। বিরোধীরা বলছেন, ‘‘বাপ রে! স্ত্রী তো অর্ধাঙ্গিনী। ওই সম্পত্তি আসলে কার বাড়ল, সে তো ভালই বোঝা যাচ্ছে!’’

যদিও আশিসবাবু দাবি করেছেন, কোনও অসৎ টাকা নয়, সৎপথে আয় করা টাকারই হিসাব দিয়েছেন তিনি। রামপুরহাটের এই তৃণমূল প্রার্থীর বক্তব্য, ‘‘২০১১ সালের নভেম্বরে কলেজের অধ্যাপক থেকে অবসর নিয়েছি। অবসরকালীন প্রাপ্য টাকা, প্রভিডেন্ডফান্ড যা কিছু কর্মজীবনে জমিয়েছিলাম, সেই সব মিলিত ভাবে আমার সম্পত্তির অঙ্ক বাড়িয়েছে। সঙ্গে সুদ ও এরিয়ার বাবদ প্রাপ্য টাকাও রয়েছে। আমি দু’লক্ষের মতো টাকা শুধু এ বার আয়করই দিয়েছি।’’ এর মধ্যে কোথাও লুকোচুরি নেই বলেই আশিসবাবুর দাবি। অন্য দিকে, চন্দ্রনাথের দাবি, ‘‘যে সম্পত্তির জন্য আয়কর দিই, সেটা তো দেখাতে হবে। সম্পত্তি থাকলে সেটা আড়াল করব কেন! এর বেশি কিছু বলব না।’’

শাসকদলের নেতা, পরিবারের এমন সম্পদ-বৃদ্ধিকে অবশ্য সোজা চোখে দেখতে রাজি নন বিরোধীরা। তৃণমূল নেতাদের গৃহবধূ স্ত্রীরা কোন জাদুবলে কেউ দ্বিগুণ, কেউ তিনগুণ সম্পত্তি বাড়িয়ে নিয়েছেন— তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা এ বার সিউড়ি বিধানসভার প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম বলছেন, ‘‘শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা কে কত করিৎকর্মা, এই বৃদ্ধি থেকেই স্পষ্ট। গোটা রাজ্য জুড়ে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি গুণিতক হারে বেড়েছে। কারও পাঁচ গুণ, কারও দশগুণ। এ জেলায় কেউ ব্যতিক্রম আছেন বলে আমি মনে করি না। আর স্বাভাবিক ভাবে যে এই বৃদ্ধি ঘটেনি, তা সকলেই বোঝেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abnormally raised mla property
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE