Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Purulia

পৌরোহিত্যের তালিম নিতে প্রবীণের কাছে

কোন দেবতার আরতিতে কোন বাদ্য বাজানো যায়, কোন ফুল কোন দেবতাকে নিবেদন করা যাবে— এমন খুঁটিনাটি তথ্য পুরোহিতদের পইপই করে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ‘শিক্ষক’।

রীতিনীতি: চলছে প্রশিক্ষণ। পুরুলিয়ার গড়জয়পুরে। নিজস্ব চিত্র

রীতিনীতি: চলছে প্রশিক্ষণ। পুরুলিয়ার গড়জয়পুরে। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
জয়পুর শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৫২
Share: Save:

কোন দেবতার আরতিতে কোন বাদ্য বাজানো যায়, কোন ফুল কোন দেবতাকে নিবেদন করা যাবে— এমন খুঁটিনাটি তথ্য পুরোহিতদের পইপই করে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ‘শিক্ষক’। ‘ছাত্রেরা’ মন দিয়ে তা শুনছিলেন। ছাত্র-শিক্ষক দু’তরফই পুরোহিত। দুর্গাপুজোর মুখে পুরোহিতদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পুরুলিয়ার গড়জয়পুরের একটি দুর্গামন্দিরে শুরু হয়েছে এই প্রশিক্ষণ। সেখানে পাঠ দিচ্ছেন প্রবীণ পুরোহিতেরা।

কেন এই প্রশিক্ষণের আয়োজন? প্রশিক্ষণ দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পুরোহিত ছাড়া পুজো-পার্বণ বা শুভকাজ হবে না। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আসতে চাইছে না। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়েছে, এই পেশায় বেঁচে থাকার মতো আয় নেই। আর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে প্রশিক্ষণের অভাবও রয়েছে। কারণ, এখন আর টোল, চতুষ্পা ঠী বা বেদ বিদ্যালয় কোন কিছুই অন্তত এই তল্লাটে নেই। ফলে নতুন প্রজন্মের যাঁরা পারিবারিক পেশা সূত্রে আসছেন, তাঁদের পুজোপাঠের প্রশিক্ষণের অভাব রয়ে যাচ্ছে। সেই ঘাটতি পূরণ করতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’’

শাস্ত্রমতে পুজোর মূল বিষয়টিই দাঁড়িয়ে রয়েছে, সঠিক মন্ত্রোচ্চারণের উপরেই। সঠিক মন্ত্রোচ্চারণ কেন জরুরি? কেন ঘটস্থাপন করা জরুরি? কী ভাবে ঘটস্থাপন করতে হবে, কী ভাবে আরতি করতে হয়?— এমনই নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই প্রশিক্ষণ শিবিরে বিশদে আলোচনা করা হচ্ছে। দিব্যেন্দুবাবু জানান, পুজোয় বসলে জল দিয়ে আচমন করতে হয়। কেন আচমন করা হয়, তা না বুঝলে তো পুজো করা যাবে না। এটা তো আর করতে হয় বলে করা নয়, এই শাস্ত্রাচারের পিছনেও কারণ রয়েছে। সে সব আলোচনা করা হচ্ছে পুরাণ ধরে ধরে। গুরুচরণ আচার্য, বিকাশ মুখোপাধ্যায়ের মতো পুরোহিতেরাও রয়েছেন।

উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, উল্টোরথ থেকে তাঁদের এই সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। জেলার কয়েকটি ব্লকের পুরোহিতেরা প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিয়েছেন। এমনকী ঝাড়খণ্ড থেকেও অনেকেই আসছেন। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজোর জন্য মহালয়ার আগের দিন অর্থাৎ রবিবার আপাতত সাময়িক ভাবে শিবিরে ইতি টানতে হয়েছে। এই সমস্ত পুজো মিটলেই আবার শিবির শুরু হবে।

জয়পুরের অলীক হাজরা, মানবাজারের তপন গোস্বামী-সহ অনেকেই জানাচ্ছেন, প্রশিক্ষণে পুরোহিতের পেশায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মানোন্নয়ন ঘটবে। কোনও গানের অন্তর্নিহিত অর্থ আত্মস্থ করে সেই গান পরিবেশন করলে তা যেমন শ্রোতার কাছে অন্য রকম ভাবে পৌঁছয়, পুজোর বিষয়টিও ঠিক তাই। ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার ঘোড়াগাড়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় পুরোহিত কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমিও এই প্রশিক্ষণে যোগ দিয়েছি। উপকৃত হচ্ছি।’’ দিব্যেন্দুবাবু বলছেন, ‘‘এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে এক দিকে পেশার মানোন্নয়ন ঘটানো, অন্যদিকে সামাজিক উদ্দেশ্যও রয়েছে। যেমন আমরা সিদ্ধান্ত নেব ১৮ বছরের কম বয়সের কোনও মেয়ের বিয়ে দেব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Purohit Training
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE